Sunday, February 17, 2013

শিশুরা যখন আয়না

শিশুরা অনেকটা আয়নার মতওরা চারপাশে যা দেখে বা শোনে সেটাই আবার প্রতিফলিত করে। ওদের অনেক কথা এবং কাজ আমাদের হাসির উদ্রেক করে বটে, কিন্তু এগুলো নিয়ে সামান্য গভীরভাবে ভাবলে আমরা নিজেদের ব্যাপারে ধারণা করতে পারি বাবামা হিসেবে আমরা কি ধরনের উদাহরণ স্থাপন করছি। গত ক’দিনে দেখা এবং শোনা এমন কিছু ঘটনা আমাকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে আমাদের আসলে প্রতিটি কথাবার্তা আচার আচরনে কতটা সচেতন হওয়া উচিত, কেননা শিশুরা তাই গ্রহন করে যা আমরা করি তা নয় যা আমরা বলি সুতরাং, আমার শিশুটি যদি কোন অন্যায় করে তবে তাকে শাসন করার আগে আমার ভাবতে হবে সে আমাকে অনুকরণ করছে কিনা এবং যদি ব্যাপারটা তেমন হয় তাহলে তাকে শাস্তি দেয়ার আগে আমার নিজেকে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।

 
১/ রাদিয়া রিহামকে ঘুমোতে যাবার আগে গল্প শোনাচ্ছিলাম। প্রসঙ্গ সুরা লাহাবের ব্যাকগ্রাউন্ড। রাসূল (সা) যখন পাহাড়ের ওপর উঠে সবাইকে ডেকে একত্রিত করলেন এবং ইসলামের কিছু মূলনীতি উপস্থাপন করলেন তখনকার ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে জানালাম রাসূল (সা) বলেছেন মিথ্যা বলা, চিটিং করা, চুরি করা, হত্যা করা নিষেধ। মাঝপথে রিহাম জিজ্ঞেস করল, ‘আম্মু, চিটিং মানে কি?’ সাধ্যমত বুঝিয়ে বললাম কিন্তু ধারণা করলাম সে ব্যাপারটা বুঝেনি কারণ এগুলো অ্যাবস্ট্রাক্ট জিনিস এবং শব্দটি অনেক ধরনের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করেএকটু পর আবার গল্পের মাঝে বিরতি দিতে হোল। রিহাম বলল, ‘আম্মু, সেদিন রাদিয়া আপু একটা গেম খেলছিল। চারটা দেশের নাম আর চারটা দেশের পতাকার ছবি দেয়া হবে। আপুকে দেশের নামের সাথে পতাকার ছবি মিলাতে হবে। আপু দু’টো মিলানোর পর একটা দেশের পতাকার ব্যাপারে শিওর হতে পারছিলোনা। তখন ও গুগলে গিয়ে ঐ দেশের পতাকা দেখে নিয়ে তারপর উত্তর দিল। এটাই তো চিটিং, তাইনা?’ আমি তো ওর কথা শুনে থ! বলে কি ছেলে, সে তো দেখি আসলেই বুঝেছে চিটিং জিনিসটা কি! তারপর আমাকে একেবারে বাকরুদ্ধ করে দিয়ে সে রাদিয়ার দিকে ফিরে বলল, ‘রাদিয়া আপু, রাসূল (সা) যেভাবে বলেছেন সেভাবেই আমাদের চলতে হবে। তুমি একটা গর্হিত কাজ করেছ। এবার আস্তাগফিরুল্লাহ বল এবং আল্লাহর কাছে মাফ চাও, এর পর থেকে আর কখনো চিটিং করবেনা, বুঝলে?’!

 
২/ আট বছর বয়সী আলিয়ার (ছদ্মনাম) বাবা ওকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝালেন ওর চাচা ফুপুরা কত মেধাবী, কত লেখাপড়া জানা, বড় বড় চাকুরী করা মানুষ। তিনি তাকে বোঝালেন ওকে অনেক উচ্চাভিলাষী এবং অধ্যাবসায়ী হতে হবে। লেকচার শেষে তিনি আলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এবার তাহলে বল, তোমার জীবনের লক্ষ্য কি?’ সে এক মূহূর্তও চিন্তা না করে নির্দ্বিধায় বলল, ‘আমার জীবনের লক্ষ্য হোল কোন কাজ না করা, শুধু খাওয়া দাওয়া ঘুম আর টিভি দেখা’! আলিয়ার বাবা তো হতভম্ব! কিন্তু কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরতিনি বুঝতে পারলেন, তিনি যে অফিসে কাজ করেন তা তো তার সন্তান দেখেনা। সে দেখে বাবা বাইরে থেকে আসে, খাওয়া দাওয়া করে, টিভি দেখে, তারপর ঘুমাতে যায়, মাকে কোন সাহায্য করেনা, বাচ্চাদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করেনা, বাসার কোন কাজে হাত লাগায়না। সুতরাং সে ধরে নিয়েছে এটাই মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত!

 
৩/ তিন বছর বয়সী রানিয়া (ছদ্মনাম) ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে ওর বাবা ওর মাকে সম্মান করেননা, কষ্ট দেন এবং মা যখন আর সহ্য করতে পারেননা তখন বাবার অনুপস্থিতিতে সন্তানদের সামনেই মনোঃকষ্ট ব্যাক্ত করেন। একদিন মা নামাজ পড়ছেন, বাবা মাকে ডাকছেন, বড়বোন জানালো মা নামাজ পড়ছেন তবু বাবা ডেকে চলেছেন, রানিয়া বাবার সামনে গিয়ে কপাল চাপড়ে বলতে শুরু করল, ‘উফফ, এই লোকটা আমার লাইফ শেষ করে দিল!’ এই বাবার কি ভাবা উচিত নয় তিনি তার সন্তানের সামনে কি ধরনের আদর্শ স্থাপন করছেন?

2 comments:

  1. asolei khubi sundr kotha bolechen madam...
    "শিশুরা তাই গ্রহন করে যা আমরা করি তা নয় যা আমরা বলি।"....jinista evabe asole chinta kore dekhi nai....hahaha...tobe ami nijei to ekhono picchi...:D...tobe future jinisgula kheyal rakhbo inshaAllah..

    ReplyDelete
  2. madam....apni hoito amake chinben...ami sonarbangla ar fb te "pathorer Golpoker" hisebe apnar sathe contact korechi....:D

    ReplyDelete