Friday, July 30, 2010

Your baby has no one else Mummy!


আমার ছেলেমেয়ে দুজনই আমি কাজ করার সময় কাছেপিছে থেকে সাহায্য করতে পছন্দ করে। তাই গতকাল আমি যখন ওদের জন্য pizza বানাচ্ছিলাম, আমার মেয়ে সব্জী কাটছিল আর ছেলে doughএর জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছিল। কাজ করতে করতে পুত্রর সাথে নিম্নোক্ত কথাবার্তা হচ্ছিল।
“আমার ছোট্ট আব্বুটাকে কে আদর করে, বাবা?”
“তমি আমাকে আদর করেন!”
“তারপর?”
“আম্মু”।
“তারপর?”
“আম্মু”।
“তারপর?”
“তোমার big baby রাদিয়া”।
“তারপর?”
“আমার daddy, আব্বু”।
“তারপর?”
“Your baby has no one else Mummy!”
আমার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠল। ওর দাদা দাদী, নানা নানী, পাঁচটা ফুপু, দুইটা মামা আর এতগুলো ফুপাত ভাইবোন থাকতে ও বলে কিনা “Your baby has no one else Mummy!” আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে আসি তখন ওর বয়স ছিল দু’বছর, ওর মনে থাকার কথা না। ও ডাইনিং টেবিলে বসে দাদার টাকের ওপর তবলা বাজাতে বাজাতে দাদা বলতেন, “নাতি, একটা লাঠি আন, মাথাটা ভেঙ্গেই ফেল”। তারপরও বিরক্ত হতেন না, ওকে নিতে দিতেন না। ওর নানা প্রতিদিন Skype এ বসে থাকে ওর সাথে কথা বলার জন্য, ওকে একটু দেখার জন্য। ফুপুরা মামারা কাড়াকাড়ি করত ওকে আদর করার জন্য। ওদের মোবাইলের wallpaper এ এখনো ওর ছবি! আর আমার ছেলে বলে কিনা, “Your baby has no one else Mummy!”

বিদেশে থাকতে থাকতে এভাবেই মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। যাদের শুধু ছবি দেখা যায়, গলা শোনা যায় কিন্তু দেখা যায়না, স্পর্শ করা যায়না; যাদের সাথে শুধু কথাবার্তা হয়, কেমন আছ ভালো আছি, কে বেঁচে আছে আর কে মারা গেল – তাদের সাথে আন্তরিকতা অনুভব করা একটা শিশুর জন্য কঠিন বটে!

একটু পরে আচমকা আমার এক বান্ধবী এসে উপস্থিত। ভাই অফিস থেকে এলে উনি বললেন, “আমি একটু রেহনুমার বাসায় যাব”। ভাই বললেন, “কেন?” উনি বললেন, “আমার ওর কাছ থেকে একটা জিনিস জানতে হবে”। ভাই বললেন, “শোন, রেহনুমা বয়সে আমার ছোট, সুতরাং ও যা জানে তা আমিও জানি, এখন যেতে হবেনা। আমাকে বল কি জানতে চাও”। আপা বললেন, “ঠিক আছে, আমাকে দেখিয়ে দাও কিভাবে সুতি ওড়না পরতে হয়!”

বেচারী পর্দা শুরু করেছেন খুব বেশিদিন হয়নি। উনি fitted স্কার্ফগুলো পরতে পারেন কিন্তু ওড়না সামলাতে এখনো কষ্ট হয়। এইবারের গরমে অস্থির হয়ে উনি ওড়না পরা শিখতে আসলেন প্রায় তিনসপ্তাহ পিছাতে পিছাতে। উনি প্রায়ই দুষ্টুমী করে বলেন, “ক্যাল্গেরীতে শুধুমাত্র তিনজন বাংলাদেশী মহিলা চাকরী করেনা অথচ আমরা তিনজনই দেশে চাকরী করতাম। একজন ডাক্তার, আমি EPZ এর বড় অফিসার আর তুমি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর! এছাড়া আর যত ভাবী আছেন এমনকি ম্যাট্রিক ইন্টার পাশ তাঁরাও Wallmart বা McDonalds এ কাজ করে পয়সা কামাচ্ছেন!” যেখানে একজন চাকরী করেও কোথাও যাওয়া আসার সময় পাওয়া কঠিন সেখানে দু’জনই কাজ করলে বাচ্চাদেরও সময় দেয়া সম্ভব হয়না।

আমরা যখন প্রথম ক্যাল্গেরীতে এসে পৌঁছলাম তখন যেটা আমাদের সবচেয়ে অদ্ভুত লাগল সেটা হোল এখানকার বাঙ্গালী বাচ্চাদের আচরণ। বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক বেশী সামাজিক আর smart হয়। কিন্তু এখানে বাচ্চারা বাবামা কাউকে পায়না, আত্মীয়স্বজন অধিকাংশেরই এখানে থাকেনা। সুতরাং সামাজিক আচরণগুলো শেখা হয়না। Day care এ বাচ্চাদের চুপচাপ থাকতে শেখানো হয় তাই তারা কথা বলতে শেখেনা, প্রশ্ন করতে শেখেনা, নিজের অনুভুতিগুলো প্রকাশ করতে শেখেনা। চুপচাপ সব মেনে নিতে নিতে তারা দুষ্টুমী করতে, মজা করতে, নিজের দাবী আদায় করতে ভুলে যায়। যেসব বাচ্চা দুষ্টুমী করে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এগুলো বুদ্ধির চাইতেও frustration এর বঃহিপ্রকাশ। Exceptions আছে। কিন্তু অধিকাংশ বাবামায়ের পক্ষেই সম্ভব হয়না একটা বা দু’টা চাকরী করে, বাসা পরিষ্কার থেকে শুরু করে বাজারসাজার, রান্নাবাড়া করে বাচ্চাদের সময় দেয়া, তাদের সাথে গল্প করা, খেলাধুলা করা - সামাজিকতা রক্ষা করা তো আরো পরের কথা!

অধিকাংশ বাচ্চারাই বাংলা বলতে পারেনা বা বললেও এমনভাবে বলে যে মনে হবে ভিনগ্রহের কোন ভাষা! কারণ বাবা মায়ের সাথে আদেশসূচক কয়েকটা কথা ছাড়া আর কোন আলাপচারিতার সুযোগ হয়না। বাইরে, TV তে ইংরেজী ছাড়া যেসব ভাষা তারা শোনে তার সাথে তারা পরিচিত না। ভাই বোন বন্ধুরা ইংরেজীতেই কথা বলে। য়ার চাকরীর কারণে দেখা সুতরাং ইংরেজীতে কথা বলতেই তাদের আরাম লাগতে শুরু করে। আমার যে বান্ধবী বেড়াতে আসলেন তাঁর মেয়ের মাত্র বোল ফুটছে, সে এখনি confused সে কোন ভাষা বলবে! আরেক ভাই দুঃখ করে বললেন, “টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে যখন মনে হোল এবার যথেষ্ট টাকা হয়েছে, দেশে যাব, বাবামায়ের সাথে থাকব, তখন দেখি আমার ছেলে বাংলাও জানেনা ইংরেজীও জানেনা। এখন ভাবছি এখানে তো সে কিছু একটা করে খেতে পারবে, দেশে গেলে সে কি করবে?”

আমার দু’জন ছাত্র - তাদের এদেশেই জন্ম, এদেশেই বেড়ে ওঠা। বছরে দু’বছরে একবার বাংলাদেশে যাওয়া ছাড়া দেশ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। বড় হওয়ার পর তারা আর যেতেই চায়না। তাদের ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেই গন্ধ লাগে, যাকেই দেখে তাকেই ছিনতাইকারী মনে হয়, আত্মীয়স্বজন তাদের accent এ ইংরেজী বলেনা দেখে তাদের ignorant মনে হয়! এই দেশ এশিয়ার সম্পর্কে এভাবেই ভাবতে শেখায়। যেমন আমার এক American বান্ধবী বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছিলেন, “Americans think the world begins and ends within the borders of America”! আমাদের এই ছেলেমেয়েরা নিজেদের American ভাবে। তাই বাংলাদেশকে ঘৃনা করা তাদের জন্য স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

একদিক থেকে এ’কথা ঠিক যে এরা যদি নিজেদের এ’দেশী না ভাবে তাহলে এখানে থাকা, এখানকার সংস্কৃতির সাথে মিলে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। আবার একথাও সত্যি যে তারা এদেশী হয়ে গেলে বাংলাদেশ তাদের দ্বারা উপকৃত হওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকবেনা যেহেতু ঐ দেশের প্রতি তাদের কোন অনুভূতিই নেই। এক্ষেত্রে দু’দিকেই maintain করার কোন সুযোগ নেই। আমাদের যেকোন একটা দিক বেছে নিতে হবে আরেকটা দিক ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু যেহেতু আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে, মন মানসিকতার সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা অনেক বেশী, আমাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক কঠিন। তাই এই সিদ্ধান্ত আগামী প্রজন্মের হাতে আর আগামী প্রজন্ম কোনদিকে যাচ্ছে এ ব্যাপারে তো কোন সন্দেহের অবকাশই নেই।

Monday, July 26, 2010

বিয়ে না হলে নাইবা হোল!

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের কাছে বিয়ে মানেই ছিলো শামিয়ানা টাঙ্গানো বিয়েবাড়ী, লাল শাড়ীপরা কাঁদো কাঁদো বৌ, লজ্জা লজ্জা চেহারা করে বসে থাকা বর, মজার মজার খাবার আর ছুটাছুটি করার অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু বড় হতে হতে, বড়দের অদ্ভুত আচরণ দেখতে দেখতে, পৃথিবীটা একটু একটু করে বিস্বাদ লাগতে লাগতে একসময় মনে হোল এখানে কোনকিছুই যেমন দেখতে আসলে তেমন নয়। ছোটবেলায় বিয়েটাকে যেমন সহজ আর সুন্দর একটা জিনিস মনে হত, বড় হয়ে দেখি এটা অনেকের কাছে একটা ভালো ব্যাবসা আর তখন বিয়ের ওপর থেকে আস্থাই উঠে গেল। আমার self realization খুব ভালো। তাই আমার জন্য যখন প্রস্তাব আসতে শুরু করল তখন আমি চিন্তা করতে শুরু করলাম ওরা কেন আমার ব্যাপারে আগ্রহী হবে? আমি একজন ছাত্রী মাত্র যার এখনো কোন যোগ্যতা সৃষ্টি হয়নি, দেখতেও ভালো না, কোন কাজকর্ম পারিনা – তাহলে ওরা কি দেখে আমার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে? আমাকে দেখে নিশ্চয়ই নয়!

সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিয়ে করবনা। বাবার সাথে আলাপ করলাম। বললাম, “যে টাকাটা তুমি আরেকটা ছেলেকে দেবে কষ্ট করে আমার সাথে থাকার জন্য, সেটা দিয়ে আমাকে একটা ফ্ল্যাট আর একটা দোকান কিনে দাও। আরেকজনকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? আমি নিজেই এই দিয়ে চলতে পারব”।

যখন সেই আমিই একটা বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলাম তখন সবাই খুব অবাক হয়ে গেল। পরে ওরা বুঝতে পারল যখন দেখা গেল সেই ভদ্রলোক শুধু এই বলেই ক্ষান্ত দেননি যে “আমি কিছু চাইনা”। অনেক ছেলেই বলে, “আমি কিছুই চাইনা, দোয়াই কাম্য”। যারা কিছু চায় তাদের চাহিদা তো পূরণ করা যায়। কিন্তু যারা কিছু চায়না তারা দেখা যায় যাই দেয়া হয় নিতে থাকে, কখনো বলেনা যে, “ব্যাস, এতেই চলবে”। কিন্তু উনি না নিয়ে প্রমান করলেন যে উনি আসলেই কিছু চাননা।

আর তাই আমার পরিচিতাদের দেখে আমার খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি তারা বিয়ের ব্যাপারে এত অন্ধভাবে এগিয়ে যায় যে তাদের লক্ষ্যবস্তু ছাড়া আর কিছুই তাদের নজরে আসেনা।

আমাদের এক বান্ধবী, অসম্ভব সুন্দরী, বহু প্রস্তাব বেছেবেছে পরে এক ইউনিভার্সিটির লেকচারারের প্রস্তাব ওর পছন্দ হোল। আমরা সবাই ওর জন্য উৎফুল্ল। কিন্তু ক’দিন পর শুনলাম ওর বাবা ওনার একমাত্র প্রপার্টিটা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। আমরা সবাই ওকে বল্লাম, “তুমি তো ছেলের সাথে কথা বল, ঘুরতে যাও, কথায় কথায় একদিন তাকে বল যে কিভাবে তোমার বাবা তোমাকে বিয়ে দিচ্ছেন। ওনার প্রপার্টিতে তো তোমার ভাইদেরও হক আছে। তুমি কেন নিজের স্বার্থে তাদের বঞ্চিত করবে? তুমি তাকে বোঝাও যে তুমি একজন চাকুরীজিবী মেয়ে, নিজেই ভালো ইনকাম কর, উনি একজন শিক্ষিত লোক, ভালো চাকরী করেন। তোমার বাবার ব্যাপারে কন্সিডার করলে আল্লাহ তোমাদের বরকত দেবেন।” সে ভীষণ গাল ফুলিয়ে অভিমান করে বল্ল, “আমি এখন কিছুই বলবনা, বিয়ের পর আমি সব বলব”। আমরা সবাই হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। বিয়ের পর বললে কি লাভ হবে? ওর বাবার প্রপার্টি কি ফেরত আসবে না ওরা যা যা নিয়েছে তা ফিরিয়ে দেবে!

আরেক বান্ধবীর বিয়ে হয়েছিলো জয়েন্ট ফ্যামিলিতে। সে একদিন অহংকার করে বোঝাচ্ছিলো ওর বিয়ের সময় ওর বাবামা কিছুই দেয়নি। কিন্তু যখন কয়েকবছর পর ও শ্বশুরবাড়ী থেকে আলাদা হয়ে গেল তখন ওঁরা ওর বাসার ফার্নিচার থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু দিয়েছেন। আমি আমার স্বল্পমস্তিষ্কে বুঝতে পারলাম না এর মাধ্যমে ওর বাবামা কি বোঝালেন? ওঁরা কি বোঝালেন যে শ্বশুরবাড়ী থেকে মেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ায় ওঁরা কতখানি খুশী হয়েছেন? নাকি চাকুরীজিবী মেয়ে আর জামাইকে তেলা মাথায় তেল দিয়ে ওঁরা প্রমান করলেন ওঁদের কত টাকা আছে?

আমার এক ভাই আমাকে এক বিয়ের কাহিনী শুনিয়েছিল। অভিভূত হয়ে গেছিলাম। এক বৌদ্ধ বিয়েতে দাওয়াত খেতে গিয়ে সে দেখল বরপক্ষ আর কণে পক্ষের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলছে। ঘটনা কি? বিতর্কের বিষয় হোল কতটুকু নগদ দেয়া হবে আর কতটুকু পরে দিলেও বরপক্ষ কন্সিডার করবে। বর নিজেও রয়েছে তার্কিকদের মধ্যে। কণে অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে আছে তার বাবার লাঞ্ছনা আর গ্লানির দৃশ্যের প্রতি। অনেকক্ষণ পর ঠিক হোল যেভাবেই হোক অর্ধেক টাকা দেয়া হলে বিয়ে হবে নতুবা নয়। বাবা ভাবছেন কি করে এই অনুষ্ঠানের মধ্যেই উনি টাকা সংগ্রহ করবেন। বর গিয়ে কণেকে বল্ল, “আমি দয়া করে তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হলাম”। সবাই স্তম্ভিত হয়ে শুনলো, কণে বল্ল, “আমি রাজী হলাম না”। মেয়ের বাবাসহ সবাই কণেকে বোঝাতে চেষ্টা করল যে এই বিয়ে ভেঙ্গে গেলে হয়ত মেয়ের বদনাম হয়ে যাবে, আর কখনো বিয়ে হবেনা। কিন্তু মেয়ে বল্ল, “বিয়ে না হলে নাইবা হোল। বিয়ে হতেই হবে বলে তো কোন কথা নেই। ওঁরা বিয়ের আসরেই এরকম আচরণ করছেন, বিয়ের পর কেমন আচরণ করবেন?” বরপক্ষের লোকজন হম্বিতম্বি করে চলে গেল কিন্তু মেয়ে কিছুতেই রাজী হলোনা। মেয়ের বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন, কণেপক্ষের লোকজন বিমর্ষ। এমনসময় আমন্ত্রিতদের মধ্যে একজন ছেলে এসে বল্ল, “আমার খুব একটা টাকাপয়সা নেই, কিন্তু লেখাপড়া জানি, একটা ছোটখাট চাকরী আছে। আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি বিনা যৌতুকে ওকে বিয়ে করতে চাই”। বিয়ে হয়ে গেল! আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাসের কথা বলি কিন্তু কার্যত এতটুকু বিশ্বাসের পরিচয় আমরা অনেকেই দিতে পারিনা। পারলে হয়ত আমাদের জীবনগুলো অন্যরকম হত।

আমাদের বিয়ের পর আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব অনুপ্রাণিত হয়ে যৌতুকবিহীন বিয়ে করলেন। তাদের মধ্যে এক ভাইয়ের কাহিনী খুব মজার। উনি গোঁড়া থেকে বলে আসছেন উনি ওনার শ্বশুরকে বলেছেন উনি যৌতুক নেবেন না আর ওনার বন্ধু আমাদের বলে চলেছেন, “আপনারা ওর কথা বিশ্বাস করবেন না”। বিয়ের দিন গিয়ে দেখি ওনার শ্বশুর ওনার চাহিদার তালিকায় অতিষ্ঠ হয়ে সব দিয়েছেন। কমিউনিটি সেন্টারে পুরুষ আর মহিলাদের খাবারের জায়গার ঠিক মধ্যখানে বিশাল জায়গা জুড়ে গাড়ি থেকে শুরু করে ছুরি বটি পর্যন্ত যা যা দিয়েছেন সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছেন যেন সবাই বুঝতে পারে ছেলে কিরকম যৌতুকবিহীন বিবাহ করছে! বর লজ্জায় মাথাই তুলতে পারলোনা সম্পূর্ণ বিয়েতে!

ছেলেমেয়েদের বিয়েতে বাবামা খুশী হয়ে কিছু দিলে তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু অনেক ছেলেমেয়েরাই আশু আনন্দের ঝোঁকে ভুলে যায় তাদের বাবামা’র সামর্থ্যের কথা, তাদের খুশীর কথা ভেবে মুখ বুজে অনেক দুঃখ কষ্ট চেপে যাওয়ার কথা। সারাজীবন পেলেপুষে, লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার পর এই কি হওয়া উচিত তাদের প্রতিদান? মানলাম অনেকের বাবামা সামর্থ্যবান। কিন্তু তারা তাদের ছেলেমেয়ের বিয়েতে যা করতে পারছেন তা অনেকেই তাদের সন্তানদের জন্য করতে পারেন না। তখন তা পরিবারের অবুঝ সদস্যদের জন্য মর্মবেদনা আর অসহায় দায়িত্বশীলদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর তার চেয়েও যারা দরিদ্র তারা যৌতুকের জন্য হয় মেয়ে বিয়ে দিতে পারেন না, নয় যৌতুকের ওয়াদা পূরন করতে গিয়ে ধারকর্জ করে দেউলিয়া হন, নতুবা তাদের মেয়েরা কষ্ট পেতে থাকে এই ওয়াদা পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত আর কপাল খারাপ হলে ঘরে আসে মেয়ের লাশ অথবা তার আত্মহত্যার খবর। ভালো করে ভেবে দেখলে বোঝা যায়, এর দায়ভার আমাদের। আমরা আমাদের অর্থসম্পদের জৌলুস দেখাতে গিয়ে অনেক অনেক মানুষকে হতাশা, গ্লানি এমনকি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের শুধু ভালোবেসেই কিছু দেই, তাহলে লোকের জানার দরকার কি আমরা কি দিচ্ছি বা আদৌ দিচ্ছি? আর সব ভালোবাসা বিয়ের দিনই দিয়ে দিতে হবে বলে কি কোন কথা আছে? তার শ্বশুরবাড়ীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তার সুবিধা অসুবিধা দেখা, তার যেকোন প্রয়োজনে হাত বাড়িয়ে দেয়া, এভাবে কি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানো যায়না?

এর উল্টোটাও আমাদের সমাজে খুব কমন। ইসলামে তো যৌতুকপ্রথা নেইই, তবুও এর কথা সব বিয়েতেই একটা প্রধান আলোচ্য বিষয়। কিন্তু মোহরানা নির্ধারণ করার সময়ও ছেলের সামর্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে ঠিক করা হয়না। ফলে কার্যত খুব কম মেয়েই তাদের মোহরানা বুঝে পায়। অথচ রাসুল (সা) বলেছেন, অল্প মোহরানার বিয়েই অধিক বরকতপূর্ণ! মোহরানা যথা সম্ভব দ্রুত আদায় করার মধ্যেই মেয়ের সম্মান।

আমাদের এক ভাইইয়ের কাহিনী শুনে খুব ভালো লেগেছিল। শুনলাম বিয়ের আসরে বসে পকেট থেকে ৫০,০০০ টাকা বের করে তিনি বললেন, “আমি এতটুকুই মোহরানা দিতে পারব, এখন আপনারা মেয়ে দিতে রাজী থাকলে দেন, নইলে আমি চলি”। কণেপক্ষ আর কি বলবে? একসাথে মোহরানা আদায়ে ওনার বিয়ে হয়ে গেল!

আমার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে আমার খুব ভালো লাগত। প্রথম যেদিন ওনার বাসায় গেলাম, উনি বললেন, “আমার বাসায় কোন দু’টা জিনিস একরকম দেখবেন না। আমরা বিয়ের পর একটা পাটি কিনে জীবন শুরু করেছিলাম। তারপর যখন যেভাবে প্রয়োজন হয়েছে, সামর্থ্যমত কিনেছি। আজ আমরা দুজনেই অনেক ভালো চাকরী করি, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের এখন যা ইচ্ছা তাই কেনার সামর্থ্য আছে। কিন্তু আমার ঘরের প্রতিটি জিনিসের সাথে অর্জনের যে সুখ আর মর্যাদা জড়িয়ে আছে তার সাথে কি কোন কিছুর তুলনা হয়?” ওনার ঘরে ঢুকলেই যে শান্তির পরশ পাওয়া যায় সেটা আরো অতুলনীয়।

আমাদের বিয়েতে কোন গান বাজনা লাইটিং হয়নি, আমরা চাইনি। কারণ এসব দিয়ে আমাদের বৈবাহিক জীবনে সুখ নিশ্চিত করা যাবেনা। কিন্তু ঐ টাকাটা দিয়ে একটা গরীব মেয়ের বিয়ে দেয়া যায়। আর তার বরকতের ছোঁয়া আমাদের জীবনে আনন্দ বয়ে আনতে পারে।

জীবনে অনেকসময় অল্প ছাড় দিলে আরো অনেক ভালো কিছু পাওয়া যায়। প্রতিদিন দু’জনে মিলে তিল তিল করে একটা সংসার গড়ে তোলার, সমস্ত সুখদুঃখ ভাগ করে নেয়ার যে আনন্দ, দু’জনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার যে সুযোগ, রেডিমেড সংসারে তার স্থান কোথায়? যে বিয়ে পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ আর দায়িত্বের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত আর যে বিয়ে লোভ আর ভীতির ওপর স্থাপিত, দু’টোর মধ্যে কি কোন তুলনা হয়?

আমাদের বাবামা তখনই সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পাবেন যখন আমরা তাদের সাহস দেব ধৈর্য্ আর স্থিরতার সাথে, “বিয়ে না হলে নাইবা হোল, বিয়ে হতেই হবে বলে তো কোন কথা নেই।” আর বিয়ে হলে যেন সম্মানের সাথে হয়। এতটুকু আত্মসম্মান কি আমরা অর্জন করতে পারিনা?

Sunday, July 25, 2010

The Dilemma of a Daughter

“Those who spend (in Allah’s cause) in prosperity and in adversity, who repress their anger, and who pardon men, verily, Allah loves the al-Muhsinun (the good-doers).”[3: 133-134]

One of the most precarious social positions must be that of the daughter in law, especially in the context of the Indian Subcontinent. It has been discussed and rediscussed without anyone reaching the root of the problem or trying to find a way out. I wish to contribute my own part in the discussion from experiences, first hand and second, and try to figure a way out by consensus from the readers. The article by no means reflects those privileged few who have been fortunate to be exceptions but discusses the wider range of social practice prevalent in the region.

It is seen as a widespread practice that the future in-laws ruin any possibility of success for the future daughter in law even before she has been seen or heard. Speculations about the expected traits of the future daughter begin as soon as the groom declares his readiness for a search. The future in-laws create an enormous list of the expected traits of a daughter in law fit for their family which includes all qualities imaginable plus leaves space for any extras that may have fallen off the list by some chance. As no human being is perfect, the chances are slim for any mortal to make those criteria. As for the groom it does not matter what qualities he possesses apart from the fact that he is male.

If any girl makes about half the list the future in laws condescend to come and see her. From my observation, this is often done in much the same way as the cows for slaughter are bought for Eid ul Azha, with much festivity but no considerations for the cow. The groom may or may not attend and even if he does, may or may not talk to the bride and even if he talks his opinion does not matter. Alas! The two people who are to spend a lifetime of partnership through thick and thin, the two most important persons Islam says need to see each other and decide, have no role in the play. Guardian opinion, without a doubt, is of paramount importance but so is the opinion of those who will have to make it together at the end!

What we see as a general practice is that the preview is mainly about the shape and size and complexion of the prospective bride rather than any other quality she may possess. It is okay for the groom’s people to take as much or as little time they wish to let the girl know the result for they are free to change it whenever they wish for whatever reason or unreason. Her features are carefully considered, the color of her skin is subject to discussion, whether she is an inch taller or shorter is a point of debate. Then comes the points like whether she has a wealthy father or comes of a great family or how much dowry her family can afford to give, etc. Education may or may not be important. What qualities the man has to be her match is not a subject of discussion. I wonder if they know the Hadith of Rasul (PBUH) about the four qualities to be seen in searching for a bride (for her property, for her rank, for her beauty, and for her religion (and character) - according to a Hadith from Bukhari and Muslim) or whether they know about the conditions of ‘kufu’ (equality between the two parties) in fixing a match.

After seeing few potential candidates, it becomes a lottery to find out who is the winner in the match. Father likes one, mother likes another, brother likes another and sister likes yet another not to mention the other important people in and outside the family. The groom plays a silent role as he hardly knows anything about any of the prospective brides and even if he does, his only job is to marry not take part in decision-making. If he cannot live with her in the end, he can divorce her and get another!

Ultimately the semi precious (not precious because she cannot fulfill half the criteria) gem is decided upon with as much deliberation as investing in a large property. Only the deliberation is more concerned about how much property is coming in with the gem rather than the actual features of the gem. This is what happens when Islamic principles are not adhered to. ‘Hadya’ (gift) from the daughter’s family is not forbidden but it cannot be extracted by psychological blackmailing as is often the case which destroys the sense of respect between two families about to become allied. The groom rather, from the Islamic point of view, is supposed to honor his father in law with a gift for raising his wife and honor his wife with a gift for consenting to be his partner in the business of life; from my observation, though, neither is made. The marriage is marred from the beginning by bargain hunting and a lack of consideration on the qualities of the bride and groom that can actually make it a success.

The bride and her accompanying objects arrive in the midst of a lot of pomp and ceremony. Often it includes showcasing the bride and the objects that will go with her to her new home as in an exhibition or sale. Even before it is time for her to leave the marriage hall, in laws are getting hurt left and right by things the bride’s party may or may not, should or should not have said or done or some injury that they may have supposed or some slight they may have imagined.

As a consequence, by the time she arrives to her new home, only the innocent children are happy to welcome her and few are willing to help her feel, literally, at home. As soon as she goes to her room and sometimes before, open discussions take place as to whether the wedding was a win or a loss. They sift through everything she brought as a dowry or gift and they no longer remain hers but become public property for her in-laws. They can help themselves to anything they like, no permission required. We all know what that is called if it happened the other way round!

The newly-wed bride, as is seen to be a common practice, is expected to lend a hand form the very next day though no one is expected to lend her a hand. It makes us wonder if this is the lesson Islam teaches us about hospitality. If the household could run for years before her arrival, could it not run a few days more without thrusting a new bride headlong into it? Relatives take great pains and incur huge expenses in order to keep track of when she wakes up, how much work she does, how much she eats, how her character is, what time she goes to sleep and to admonish her in-laws to keep her in strict supervision and control. Often these well-wishers are women. They forget that they are women too and should have fellow feeling for a sister who has left everything she knew and loved to be with strangers and is trying her best to carve her own niche in a strange family.

If the daughter-in-law works at a job outside the home, she is not bound to contribute to the family financially for allowing her to work so what Islam says:

“…To men is allotted what they earn, and to women what they earn…” (Al Qur’an, 4:32)

And as she spends so much time outside the home, it is only natural that she should join the taskforce at home as soon as she returns from work! A man has twice the energy of a woman but he is expected to rest after his long day’s labors and she only goes out in nice dresses, so she should pay for it by making up in household chores! Doing anything in her room or looking after her children is no one’s responsibility. But keeping everyone happy is certainly her responsibility.

Keeping everyone happy is an impossible task, because we are human. Allah gives us everything from the life we enjoy to the air we breathe, form the food we eat to the water that quenches our thirst and still we are not happy and do not feel the necessity to thank Him. What chance does a frail woman stand in comparison? None.

Because if she does anything for her in-laws, she is only fulfilling her responsibilities, what is so great about it? But if by any chance her in-laws do anything for her they have done her a favor that she should be eternally grateful for. As if she has only responsibilities and no rights.

One of my friends was telling me the other day how her husband never brought her any gifts as it would displease her in-laws and he would have to hide it in his briefcase to smuggle it in. They both worked and both contributed generously to the family. Yet neither the family gave her any gifts nor created a congenial environment for her husband to do so. How sad when people do not want to exchange hadya for improvement of relationship, even if it is a kind word or a supportive attitude.

Some women I know have suffered from lack of food and rest and ill treatment and the multitudes of women who are tortured and killed have become so commonplace that the news neither shocks nor moves us to action any more. But Islam emphasizes good treatment so much that Rasul (PBUH) said:

"By Allah, he is not a believer! By Allah, he is not a believer! By Allah, he is not a believer.'' It was asked, "Who is that, O Messenger of Allah?'' He said, "One whose neighbor does not feel safe from his evil". [Al-Bukhari and Muslim].

This does not mean the folks next door, or men talking about other men. Our nearest neighbors are those given to us, our families.

Doesn’t it make us think whether we are being good Muslims in the way we treat our daughters?

It is a difficult, one of the most difficult, task to love someone with whom you have no longstanding memories or with whom you share little in common due to a different background that moulds her attitudes differently. But if only for a moment we try to imagine that this girl has left everything she knew and loved for my family, she is trying to fit in and my cooperation can make her my sister not just sister in law, she is the woman who will mother my future generation and for my family’s sake she needs to be educated and cheerful – could we behave the way we usually do? If she has deficiencies and mistakes, why I have thousands for every hundred I can count of hers! Besides, is it not the elder who is supposed to forgive and mend? As long as we wish to ignore our responsibilities, girls will keep changing from the docile to the rebellious.

That is why I was not surprised to hear the best and most polite girl she knew went after her mother-in-law with a knife! Well, she is a human being and a human being can only take so much! She would have died from a burst appendix and her mother in law was cursing her for pretending to be in pain! Would she have behaved differently if it were her own daughter who was in pain? I wonder. We cannot all be motherly but we can be humane!

How sad is it when I ask a lady about her relationship with her highly educated mother in law in a noble profession and she says, ‘I have given up trying to make my in-laws happy’. It is our callousness that disillusions girls who came with all good intention. This is what makes little girls say, ‘I wish to marry an orphan’.

Do you wish your daughter to marry an orphan for fear of in laws? I don’t. And I know exactly what I have to do. I have to treat my daughter in law well so that Allah Himself will take responsibility that my daughter is treated well.

You see, it it’s the simple principle of what goes round, comes round.

Do you agree?

Thursday, July 8, 2010

অতি সাধারণ তিনজন মানুষ

আমি যখন CRTP(Corporate Readiness Training Program)তে ভর্তি হলাম, কোর্সের চাইতেও যে জিনিসটা ভালো লাগল তা হোল পৃথিবীব্যাপী নানা দেশ থেকে আগত বিভিন্ন লোকজনের সাথে মেশার, তাদের দেশ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ। কোর্সের বিভিন্ন প্রজেক্ট আর আমার নিজের আগ্রহের কারণে কিছুদিনের মধ্যে আমার সবার সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল।

আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে চোখে পড়ার মত ত্রয়ী ছিলো পল, হাসান আর ইগর।পলের বাড়ী নাইজেরিয়া, বড় হয়েছে লন্ডনে। হাসানের বাড়ী তুরষ্কে, বৌকে লেখাপড়া করানোর জন্য ক্যানাডা এসেছে। ইগর দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা থেকে এসেছে, ওর দেশের political corruption থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। মজার ব্যাপার হোল ওরা তিনজনই তালগাছ, তিনজনই সারাক্ষন হাসে আর হাসায়, তিনজনই ভীষন ভদ্র। কিভাবে যেন এদের তিনজনের সাথেই আমার ওঠাবসা হত বেশী।

পল আমাকে নাগাল পেত ট্রেনে, যাবার পথেই। ট্রেন থেকে নামার সময় সে কিছু না বলে আমার ভারী বইয়ের ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিত। বাড়ী ফেরার পথে আবার একই কান্ড। কেউ হাসলে বা কিছু বললে বলত, ‘she’s my sister’. হাসান প্রতিদিন ক্লাসের সবাইকে wafer খাওয়াত। সে আমাদের এত wafer খাইয়েছে যে এখন আমাদের সবার কাছে wafer আর হাসান সমার্থক। আমাদের ক্লাসে দক্ষিণ আমেরিকার যত নারী ছিল, তারা যেমন অশালীন ছিল (আমার মতে নয়, ক্যানাডীয়রাও তাদের হজম করতে পারতনা), পুরুষরা ছিল ঠিক তেমনি ভদ্র। আর ইগর এত ভদ্র ছিল যে সে বসা অবস্থায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে সে কল্পনাও করতে পারতনা।

পলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ফিস জমা দেয়ার জন্য অফিসে লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে। এই লাইন যে কি দুর্বিসহ ধীরগতিতে অগ্রসর হয় আর আমরা যে কতবার বিরক্ত হয়ে কাজ না করিয়েই ফিরে এসেছি বলার মত না। সেদিন ছিল ডেডলাইন, কাজ হতেই হবে। আমরা যতক্ষণে লাইনের সামনে পৌঁছলাম, তখন ওরা আর একজনকে নেবে (লাঞ্চের সময় হলে আর কেউ তাদের পায়ে ধরেও রাখতে পারবে না)। পল বল্ল, ‘তুমি যাও’। আমার কাজ হয়ে গেলে সে গিয়ে তাদের খুব অনুনয় বিনয় করতে লাগল, কিন্তু ওরা কিছুতেই ওর টাকা নেবেনা। শেষে আমি বললাম, ‘ভাই, সে আমাকে সুযোগ দিতে গিয়ে আগে যায়নি। ওর ভদ্রতার মূল্যায়ন করে অন্তত বেচারার কাজটা করে দাও’। ওর বদান্যতার কথা শুনে মহিলার মনে দয়ার উদ্রেক হোল। সে ফি জমা নিয়ে নিল।

আমাদের যখন ক্লাস শুরু হোল, তখনো হাসান ভর্তি পায়নি। এক্সপ্তাহ পর একজন চলে যাওয়াতে হাসান আসার সুযোগ পেল। সে আসার তিনদিন পরও আমার তার সাথে পরিচয়ের সুযোগ হয়নি। এ সময় আমি নিয়ম মেনে চলার জন্য পুরষ্কার পেলাম ক্যন্টিন থেকে ফ্রি চা খাওয়ার জন্য টিকেট। আমি যেহেতু চা খাইনা, ভাবলাম এটা কাকে দেয়া যায়? তখন মনে হোল হাসান আমাদের ক্লাসে সবার শেষে এসেছে। সুতরাং একটা উপহার পেলে সে নিশ্চয় খুশী হবে। ব্যাস, দিয়ে দিলাম টিকেট। সে অবাক হয়ে বল্ল, ‘তুমি আমাকে টিকেট দিলে কেন?’ মাথায় দুষ্টুমী চাপল, বললাম, ‘তুমি আমার সাথে কথা বলনা তাই!’। তারপর তার সাথে অনেক কথা হোল। জানলাম, সে মুসলিম হলেও ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী চলেনা। তাই আমরা রোজা রাখতাম আর সে রাখতনা। কিন্তু যতদিন রামাদান ছিল, সে কোনদিন আমাদের সামনে খায়নি।

ইগর কথা বলত কম। কিন্তু প্রথমদিনই তাকে আমার চোখে পড়ে। কারণ আমরা যখন ক্যাম্পাসের guided tour নিচ্ছিলাম, এক মহিলা আমাদের tour guide কে সকাতরে কি যেন জিজ্ঞেস করছিলেন। কিন্তু উনি কি ভাষায় কথা বলছেন বা কি বলছেন, আমরা কেউই কিছু বুঝতে পারছিলাম না।গাইড মেয়েটা অল্পবয়ষ্ক। সে ব্যাপারটা কিভাবে কি করবে বুঝতে না পেরে চলে যাচ্ছিল। আমার মহিলার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছিল, কিন্তু কিছুই করতে পারছিলাম না। ততক্ষণে পেছন থেকে আরেক গ্রুপ এসে পড়েছে। ওখান থেকে ইগর ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলে সমাধান করে দিল। মহিলা খুশী হয়ে চলে গেলেন। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাকে ধন্যবাদ জানালাম কিন্তু সে এমন একটা ভাব করল যে সে জানাই না কে মহিলাকে সাহায্য করেছে।

একদিন শরীর খারাপ লাগছিল দেখে লাঞ্চের সময় ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছিলাম। ওরা তিনজন বাইরে ছিল। বিল্ডিং থেকে সবে নেমেছি, পল ফোন করে বল, ‘তুমি কোথায়?’ বললাম, ‘বাসায় যাচ্ছি’। সে বল্ল, ‘একটু অফিসে আস, খুব জরুরী দরকার’। এভাবে বললে আর কি করা? গেলাম অফিসে। গিয়ে দেখি ওরা কেউ নাই। শরীরের পাশাপাশি এবার মেজাজটাও বিগড়ে গেল। থাকব না চলে যাব ভাবছি এমন সময় দেখি পল এল। এসেই বলে, ‘তোমার ব্যাগের ভেতর তো সব থাকে, টেপ আর কাঁচি আছে কিনা দেখত?’ আমি বললাম, ‘কাঁচি দিতে পারব কিন্তু টেপ শেষ’। হাসান আর ইগর দেখি এক কোণায় চোরের মত দাঁড়িয়ে আছে। বল্ল, ‘টেপ লাগবেই’। আমি বললাম, ‘অফিসে বললেই দেবে’। ওরা টেপ আর কাঁচি নিয়ে চলে গেল। পল আমার ব্যাগ নিয়ে রওয়ানা দিল। ওর সাথে তর্ক করে লাভ নেই, শরীরও ভাল লাগছিলনা, তাই চুপচাপ বাইরে চল্লাম।

রাস্তায় পৌঁছে দেখি হাসান জ্যাকেটের ভিতরে লুকানো হাতটা এতক্ষণে বের করল, হাতে একটা কবুতর! কবুতরটার একটা পা ভাঙ্গা। দুজনে মিলে টেপ কেটে কেটে তার পায়ে দিতে লাগল প্লাস্টারের মত করে। হাসান আমাকে বোঝাতে লাগল, ‘বেচারা হাঁটতে না পারলে হয় না খেয়ে মরে যাবে নয় কোন বিড়ালের পেটে যাবে। ওর পা’টা প্লস্টার করে দিলে আস্তে আস্তে সেরে যাবে। আপাতত সে চলে ফিরে নিজের খাবারটা সংগ্রহ করে নিতে পারবে’। আমরা সবাই রাস্তার ওপর দাঁড়ানো। Animal rights department খবর পেলে সবগুলোকে জেলে ভরবে। কিন্তু ওরা ওদের কাজ করেই চলেছে দ্রুতগতিতে।

আমি একবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। তখন ব্রিজ ছিলনা, ছিল ফেরী। বড় বড় ট্রাক নামছে। একটা ছুঁচো দৌড় দিতে গিয়ে ট্রাকের চাকার নীচে পড়তে যাচ্ছিল। এক লোক পা দিয়ে তাকে তুলে নিল। আমার মন তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হতে না হতেই সে ছুঁচোটাকে সেই একই ট্রাকের পেছনের চাকার নীচে ছুঁড়ে মারল। তারপর ঐখানে দাঁড়ানো মানুষ নামের প্রানীগুলো হাসতে হাসতে চলে গেল। একটা প্রাণ যা তারা সৃষ্টি করেনি, তা তারা অনায়াসে, অমানুষিকভাবে ধ্বংস করে কিভাবে হাসতে পারে ভাবতেই শিউরে উঠেছিলাম। তখন আমরা মাত্র বাংলাদেশে থাকার সংকল্প নিয়ে দেশে ফিরেছি। তাই হয়ত এই অমানবিক আচরণে আশ্চর্য হয়েছি। তারপর ত কতকিছু দেখলাম। বুঝলাম, মানুষের প্রাণ নিতেই যে দেশে মানুষের হাত কাঁপেনা, সে দেশে একটা ছুঁচোর প্রাণের আর কিইবা মূল্য?

আমি মানুষের সামনে কাঁদতে পারিনা। নাহলে সেদিন এই তিনজন মানুষের হাসিঠাট্টার আড়ালে যে সত্যিকার মানুষগুলো লুকিয়ে আছে এতে অভিভূত হয়ে আমি কাঁদতাম। আমার মন কৃতজ্ঞতায় উথলে উঠলো যে এই মানুষগুলো আমার বন্ধু, আনন্দে আপ্লুত হলাম যে আমি এই দৃশ্যের একটা ছোট্ট অংশের অংশীদার।একটু পরে অপারেশন শেষ করে ওরে কবুতরটাকে একটা নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দিল। আমার আপত্তি সত্ত্বেও স্টেশনে এসে আমাকে ব্যাগসহ ট্রেনে তুলে দিয়ে আবার হাসতে হাসতে চলে গেল। কেউ জানতেও পারলোনা এই আধঘন্টায় তারা কত মহান একটা কাজ করে এসেছে। আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ অথচ অনন্যসাধারণ তিনটা লোক – পৃথিবীর তিনপ্রান্ত থেকে এসেও যারা একত্রিত হয়েছে মনবতার ছায়াতলে।