আজ হতে দশ বৎসরাধিক কাল আগে, কোন এক ক্লান্ত দুপুরে, চট্টগ্রামের একটি বিখ্যাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক মিলনায়তনটি সরগরম হয়ে উঠেছিল দুই দল শিক্ষকের মাঝে দার্শনিক বিতর্কে। এক দলের বক্তব্য ছিল শিশুদের নিজের মত করে বেড়ে ওঠার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা চাই, ‘আমাদের দায়িত্ব হোল একটি শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খাবার, পোশাক, শিক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধাদি নিশ্চিত করা যেন সে বেঁচেবর্তে চলতে পারে। নৈতিকতা সে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে যেটা ভাল সেটা গ্রহণ করে এবং যেটা মন্দ সেটা বর্জন করে নিজের মাঝে তৈরী করে নেবে’। আরেক দলের কথা ছিল, ‘খাবারদাবাড়, পোশাক আশাক, নিরাপত্তা, চিকিৎসা এ’সবই জরুরী তবে এগুলোতে কমবেশি হলেও একটা শিশু বেঁচেবর্তে যেতে পারে। কিন্তু নৈতিকতা শিক্ষার প্রধানতম উদ্দেশ্য এবং অপরিহার্য অঙ্গ। অবশ্যই একটা শিশু বড় হয়ে বেছে নেবে সে নৈতিকতার কোন স্তরে অবস্থান করবে, কিন্তু কোনটা ভাল বা কোনটা খারাপ তার একটা মানদন্ড তো তাকে দিয়ে দিতে হবে! যেমন সাহিত্য পড়তে গেলে আগে এমন কিছু বই পড়া অপরিহার্য যেগুলোকে আমরা ধরে নিই ক্লাসিক হিসেবে। এমন নয় যে এর সবটাই আমার ভাল লাগবে কিংবা সবগুলো আমার অসাধারন মনে হবে। কিন্তু বইগুলো পড়ে স্বীকৃতভাবে উত্তম সাহিত্যমান সম্পর্কে একটি ধারণা জন্মাবে যা আমাকে পরবর্তীতে উত্তম, মধ্যমে এবং অধম সাহিত্যের মাঝে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে। একজন মানুষের রুচিবোধ যে পদ্ধতিতে গড়ে তোলা হয়, নৈতিকতাবোধ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটিও তার চেয়ে খুব একটা আলাদা নয় এবং দু’টোই সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বরং একজন স্বল্প রুচিসম্পন্ন মানুষের সাথে চলা যায়, কিন্তু একজন নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষকে আমরা কোন হিংস্র পশুর চেয়ে কম ভয়ংকর মনে করিনা। শিশুদের প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা যেন সে ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শেখে কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ। ভাল কাজের উপকারীতা সম্পর্কে যেমন তার জানা প্রয়োজন তেমনি খারাপ কাজের মাধ্যমে নিজের, আশেপাশের লোকজনের এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সে সম্পর্কেও তার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এর ফলে সে আলোকিত মানুষের পর্যায়ে পৌঁছতে পারুক বা না পারুক, অন্তত অপর কোন ব্যাক্তির জন্য অপকারের কারণ হবেনা। কিন্তু যে শিশুটিকে ছোটবেলা থেকেই কেউ জানায়নি ভাল কি বা মন্দ কি সে কিসের ভিত্তিতে ভালকে গ্রহণ বা মন্দকে বর্জন করবে আর কিসের ভিত্তিতেই বা নিজের চরিত্রে নৈতিকতার গোড়াপত্তন করবে?'
[img]http://www.bdtomorrow.com/blog/bloggeruploadedimage/rehnuma/1384676419.png[/img]
সেদিন বুঝিনি, কিন্তু আজ মনে হয় কালক্রমে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ প্রথম দলের অংশ হয়ে গিয়েছে এবং সেটা কেবল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সেই ক্ষুদ্র গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আসলে প্রক্রিয়াটা চলে আসছিল অনেকদিন ধরেই, আমাদেরই চোখে পড়েনি। পাড়ার ছেলেরা গাছের ফল চুরি করবে, মুরগী চুরি করে চড়ুইভাতি করবে এটাকে আমাদের উদারপ্রান জনগণ অনাদিকাল থেকে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবেই নিয়ে এসেছেন। কারো মাথায় আসেনি এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুরিগুলোকে যখন নৈতিক মনে করা হয় বা ন্যূনপক্ষে অনৈতিক মনে করা হয়না তখন একসময় এই একই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ক্ষুদ্র ব্যাক্তিটি ভাবতে শেখে – আমার পরীক্ষায় পাশ করা প্রয়োজন, সুতরাং নকল করা আমার নৈতিক অধিকার; আমি তো কাজ করেই দিচ্ছি, সুতরাং ঘুষ নেয়া আমার নৈতিক অধিকার; আমি তো এই মেয়েটিকে সারাজীবন দেখাশোনা করব, সুতরাং যৌতুক নেয়া আমার নৈতিক অধিকার; আমার ছেলেমেয়ের মেধা না থাকতে পারে, কিন্তু টাকার জোরে তাদের জন্য সীট কেনা বাবা হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব - এভাবেই জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়ে নৈতিকতার দৈন্য। অথচ ছোটবেলায় যদি কোন মুরুব্বী তার মনে নৈতিকতার বীজ বুনে দিতেন, ‘বাবা, আমার বাগানের সব ফল তোমার, কিন্তু না বলে যে নিতে হয়না! ক’টা দিন সবুর কর, পাকলে এসে যত খুশি নিয়ে যেও, শুধু বলে নিয়ো’ - তাহলে ছোটবেলা থেকেই সে বুঝতে পারত কিছু পাবার জন্য অনুমতি, অপেক্ষা এবং অধিকারের প্রয়োজন হয় – সেই বয়স থেকেই সততা তার জীবনসঙ্গী হয়ে যেত।
ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের এক প্রতিবেশিনী দিনরাত নামাজ পড়তেন, তাসবীহ পড়তেন; কিন্তু তাঁর ছেলেদের রুমের দেয়ালে নগ্ন মেয়েদের ছবি টাঙ্গানো, দিনরাত গান বাজত, এটা নিয়ে তাঁর তেমন কোন আপত্তি ছিলোনা। প্রতি বেলায় তিনি সন্তানদের হরেক রকম তরকারী, মিষ্টি মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, কিন্তু নামাজ পড়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতেন না। তিনি ফজরের নামাজের জন্য উঠতে হবে বলে তাড়াতাড়ি শুতে চলে যেতেন, তাঁর সন্তানরা অর্ধরাত্রি পর্যন্ত বসে সিনেমা দেখে ফজরের আগে আগে ঘুমাতে যেত সে ব্যাপারে তাঁর কোন বক্তব্য ছিলোনা। এসব ব্যাপারে কেউ কিছু বললে তিনি বলতেন, ‘কম বয়সী ছেলেপুলেরা এসব একটু আধটু করে, ঠিক হয়ে যাবে’। ঠিক হয়নি, তাঁর ছেলেরা বখে গেছিল। যাবারই কথা। যেকোন পরিশুদ্ধির জন্য কিছু পরিকল্পনা, প্রক্রিয়া, প্রস্তুতি এবং প্রয়াসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তিনি বসে ছিলেন এই ভেবে যে কোন একদিন তাদের মন পরিবর্তন হয়ে যাবে, একদিন তারা ‘ঠিক’ হয়ে যাবে। কিন্তু এই ‘ঠিক’ করার উদ্দেশ্যে তিনি তো কোনদিন তাদের সাথে নিয়ে বসে নৈতিকতার শিক্ষা দেননি, তাদের আচরনে রাগ কিংবা অভিমান করে তাদের নৈতিকতার বন্ধনে জড়াননি, তাদের শাসন করে কারো কাছে জবাবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি করেননি – কিভাবে আর কেনই বা ‘ঠিক হয়ে যাবে’ তারা?
আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার মূখ্য উদ্দেশ্য একটি কর্মক্ষম জাতি সৃষ্টি করা যারা লিখতে পড়তে পারবে এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো কিঞ্চিৎ দক্ষতার সাথে সমাধা করতে পারবে। এই শিক্ষানীতির কোথাও তো ‘মানুষ’ তৈরী করাটাকে মূল উদ্দেশ্য এমনকি একটি আংশিক উদ্দেশ্য হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়নি! বরং কালক্রমে আমাদের সিলেবাস থেকে হারিয়ে গিয়েছে ‘সুখী মানুষ’ কিংবা ‘পন্ডিতমশাই’য়ের মত গল্পগুলো যেগুলো আমাদের স্বল্পে সুখী হতে শেখাত, অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখাত। আমাদের বাবামায়েদের মাথায় ঢুকানো হয়েছে ‘টাকাই সকল সুখের মূল’ এবং ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ীঘোড়া চড়ে সে’। সুতরাং, বাবারা ছুটেছেন টাকার পেছনে আর মায়েরা ছুটেছেন সে টাকা খরচ করার পেছনে; সন্তানদের তুলে দিয়েছেন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, কোচিং সেন্টার, নাচ, গান, ছবি আঁকার ঘূর্ণিপাকের চক্রে। পরম বিশ্বাসী এই পিতামাতারা কেউ সময় করে খোঁজ নেননি তাদের সন্তানদের আসলে কি শেখানো হচ্ছে, ওরা আসলে কি পড়ছে, ওদের শিক্ষকরা আসলে কি করছে, ওদের মানসিকতা কিভাবে গড়ে উঠছে। তারা সন্তানদের খাইয়ে পরিয়ে শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে সিরিয়াল দেখে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন এবং তাদের শিক্ষকরা তাদের নীতিনৈতকতা বিবর্জিত নেশাখোর নাস্তিক বানিয়ে বাবামায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সারা জীবন সত্যিকারের অশ্রুপাতের সুযোগ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি? উপায় একটাই- সচেতনতা। শিক্ষার উৎস যেগুলো, নৈতিকতার উৎসও সেগুলোই। একই উৎসের উভয় উদ্দেশ্যের মাঝে সমন্বয় সাধন করার মাধ্যমেই আমরা সন্তানদের শিক্ষা এবং নৈতিকতা উভয় গুনে দীক্ষিত করতে পারি।
শিক্ষার প্রথম উৎস পরিবার। আমাদের সন্তানরা যেভাবে আমাদের দেখে বসতে শেখে, হাঁটতে শেখে, খেতে শেখে, কথা বলতে শেখে; ঠিক একইভাবে আমরা তাদের যতই নীতিবাক্য শোনাই না কেন, ওরা সেটাই অনুসরন করে যা আমরা করি, সেটা নয় যা আমরা বলি। সুতরাং, আমাদের কথাবার্তা এবং আচরনে দ্বিমুখিতা থাকলে আমাদের সন্তানরা আমাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে, নতুবা আমাদের অনুসরন করে নিজেরাও পতিত হবে দ্বিমুখিতার গহন আবর্তে। যে মা নিজে বোরকা পরে মেয়েকে নাচের স্কুলে নিয়ে যান, যে পিতা পঞ্চাশজন শিক্ষক দিয়ে ছেলেকে গান শেখান কিন্তু কোনদিন নামাজ শেখাননি, যে মা পর্দার লংঘন হবে বলে মেয়েকে পড়াশোনা করতে দিতে চাননা অথচ মহিলা ডাক্তার ছাড়া চিকিৎসা করাতে নারাজ- তাঁদের সন্তানরা নৈতিকতার সংজ্ঞা নিয়ে বিড়ম্বিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক! সন্তানের আগমনের আগেই বাবামাকে প্রস্তুতি নিতে হবে জানার, লব্ধ জ্ঞানকে উপলব্ধি করার এবং নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যেন তারা সন্তানদের জন্য আদর্শ হতে পারেন, যেন তাদের সন্তানরা তাদের দেখে নৈতিকতা নিয়ে দ্বৈততায় না ভোগে। যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ছাড়া অবতীর্ণ হওয়া আর অস্ত্রচালনার দক্ষতা ছাড়া অবতীর্ণ হওয়া একই কথা। তাই সন্তানদের আগমনের আগেই তাদের গড়ে তোলার পরিকল্পনা প্রস্তুত থাকতে হবে যেন আমরা তাদের নিয়ে পরীক্ষানীরিক্ষা না চালিয়ে তাদের জীবনের প্রথম মূহূর্ত হতেই তাদের উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে তোলায় সহযোগিতা করতে পারি।
নৈতিকতার দ্বিতীয় উৎস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একসময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা শিক্ষক হতেন। দুর্ভাগ্যবশত কালের পরিক্রমায় আমরা আজ এমন এক সংকটময় স্থানে এসে পৌঁছেছি যখন দুই মহান পেশা, শিক্ষকতা এবং ডাক্তারী, রোগে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। ইদানিং প্রথমটিতে অধিকাংশ তারাই যান যাদের যাবার আর কোন জায়গা নেই, অপরটিতে তারা যাদের জীবনের মূল লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। যে ব্যাক্তি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষানুরাগী নন, যিনি জীবিকা উপার্জনের জন্য শিক্ষা দান করেন, তার প্রদত্ত শিক্ষার মান এবং আন্তরিকতা সম্পর্কে আশঙ্কা অমূলক নয়। ইদানিংকালে আমাদের কিছু কিছু শিক্ষকের যে কীর্তিকলাপ উন্মোচিত হচ্ছে তা দিনের আলোকে অন্ধকারে রূপান্তরিত করার জন্য যথেষ্ট। তবু কি আমরা তাদের হাতে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকব? বাবামা হিসেবে আমাদের কি দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা যে আমরা লক্ষ্য রাখব আমাদের সন্তান কি শিখছে, ভুল শিখলে তাকে সঠিক তথ্য প্রদান করব এবং শিক্ষকের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখব যেন তিনি আমার সন্তানকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার স্বাধীনতা না পান? বাবামাকে বুঝতে হবে, আমার সন্তানের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য একজন দক্ষ কর্মী হওয়া নয়, অর্থ উপার্জন নয়, বিখ্যাত হওয়া নয়, বরং একজন ভাল মানুষ হওয়াই তার জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
নৈতিকতার তৃতীয় ধাপ জীবনে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া। স্বার্থের দ্বন্দ্ব না এলে মানুষ চেনা যায়না- সে হোক নিজেকে বা অপরকে। স্বার্থের ব্যাপার এলেই কেবল আমরা নিজেকে যাচাই করতে পারি যে আমি আমার অধিকার সম্পর্কে যতটুকু সচেতন অপরের অধিকার সম্পর্কে ততটা সচেতন কিনা; আমি আমার অধিকার সম্পর্কে যতটুকু সচেতন আমার দায়িত্ব সম্পর্কে ততটুকু সচেতন কিনা। এই সময়গুলোতে নিজেকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা বস্তুত কঠিন বা ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভব ব্যাপার। বাবামায়ের উচিত সন্তানকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বেষ্টনে আবৃত করে না রেখে মাঝে মাঝে জীবনের প্রখর বাস্তবতার স্বাদ গ্রহন করতে দিয়ে বা ন্যূনপক্ষে নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো আলোচনা করে তাকে বাস্তবতার সম্মুখীন হবার মত মানসিক শক্তি, সংযম এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা দিয়ে গড়ে তোলা।
তবে সবচেয়ে বড় কথা নৈতিকতার একটি ধ্রুব মানদন্ড আমাদের নির্ধারন করে দেয়া জরুরী যা সর্বাবস্থায় আমার সন্তানকে পথ দেখাবে এবং যা সে সর্বদা হাতের কাছে পাবে। আমরা মারা যেতে পারি, আমাদের ভুল হতে পারে, আমরা স্বার্থান্ধ হয়ে পড়তে পারি; কিন্তু আমাদের অনুপস্থিতি কিংবা ভুল যেন আমাদের সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার কারণ না হয় সেটা নিশ্চিত করা আমাদের সন্তানদের নৈতিক অধিকার। সেক্ষেত্রে যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার চেয়ে ভাল মানদন্ড আর কে দিতে পারেন? তাঁর কথায়ঃ ‘আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি, যাতে মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে’ (সূরা কাহফঃ আয়াত ৭)। যখন এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে পৃথিবীস্থ সবকিছু মূলত প্রলোভন এবং পরীক্ষার আধার, তখন এর অসারতা এবং জীবনের মূল লক্ষ্য আমাদের কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। তখন নৈতিকতার পথটি অনেক সোজা সরল প্রতীয়মান হয় এবং সঠিক কাজটি করা, সত্য কথাটি বলা কিংবা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়া আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে কেন আমরা আমাদের সন্তানদের অন্ধকারে হাতড়ে মরার জন্য ছেড়ে দেব? যেখানে তাদের গায়ে একটি আঁচড় লাগলেও আমরা সহ্য করতে পারিনা, সেখানে তাদের ভুলের সাগরে ডুবে অভিজ্ঞতার মুক্তো সংগ্রহ করে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাবার পর মূল্যবান মূহূর্তগুলি নষ্ট করা নিয়ে হাহাকার করতে দেখে কি আসলে আমরা আনন্দ পাব? এমনও তো হতে পারে যে সে পথ খুঁজেই পেলোনা কিংবা কষ্ট করে পথ খুঁজেই দেখলনা! আমাদের সন্তানদের এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ করার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি?
অনেক ভাল হয়েছে লেখাটি।
ReplyDelete