লেকচারার হওয়ার একটা বিশেষ সমস্যা হোল অনেক সময় নিজের অজান্তেই লেকচার দেয়া হয়ে যায়। এই যেমন আমি আই আই ইউ সি’র বেতনের জন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে গেলাম। তখন আমার বিয়ে হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট করছি। হাফিজ সাহেবের মত লোকের সাথে বিয়ে হওয়ার একটা বিশেষ সমস্যা হোল ওনার এত বেশী বন্ধু-পরিচিত যে কোথাও গিয়ে একটু প্রাইভেসী পাওয়া যায়না। আমরা দু’জনেই এত ব্যস্ত থাকতাম যে দু’জনের দেখাসাক্ষাতই হতনা। বাসায় যেটুকু সময় থাকতাম সেটাও থাকত ওনার বন্ধুদের টেলিফোনের দখলে। ব্যাংকে এসেও দেখি যে ভদ্রলোক আমার অ্যাকাউন্টের কাজ করছেন তিনি হাফিজ সাহেবকে চেনেন। আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ফর্ম ফিলাপ করতে লাগলাম। কথায় কথায় ব্যাংকার ভাই বললেন, “ভাবী তো দেখছি নাম চেঞ্জ করেননি!” আর পায় কে? কলম রেখে বলা শুরু করলাম, “ভাই, আপনি এ’কথা বলবেন তা আশা করিনি। আমার বাপ আমাকে জন্ম দিল, পেলেপুষে বড় করল, লেখাপড়া শেখালো, বিয়ে দিল আর আমি আজকে একটা স্বামী পেয়ে বাপের নাম বাদ দিয়ে দেব?! পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো স্বামী কে ছিল বলেন তো? রাসূল (সা), তাইনা? অথচ আয়শা (রা)’র নাম তো মিসেস আয়শা মুহাম্মাদ ছিলোনা! তাঁর নাম বিয়ের আগে পরে আয়শা বিন্ত আবু বকরই ছিল। নাম পরিবর্তন করে ফেলা আমাদের সংস্কৃতি না। আমরা অকৃতজ্ঞ নই। স্বামীর সাথে সম্পর্ক তিনটা শব্দ উচ্চারণ করলে পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু বাপের সাথে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয়না”। উনি ভড়কে গিয়ে, “ঠিক, ঠিক” বলতে বলতে তাড়াতাড়ি আমার অ্যাকাউন্ট করিয়ে দিলেন।
আমার মেয়ের জন্মের পর আমি ঠিক উলটো সমস্যায় পড়লাম। মেয়ে হবার আগে কুর’আন থেকে সুন্দর সুন্দর শব্দগুলো বেছে বেছে দশটা ছেলের আর দশটা মেয়ের নাম ঠিক করলাম। মেয়ের নাম নির্বাচন করা হোল ঐ তালিকা থেকেই। কিন্তু শেষের নাম কি হবে তা নিয়ে বিশাল গোলযোগ বেঁধে গেল। ওদের পরিবারে ট্রেডিশনালি ছেলেদের নামের সাথে পারিবারিক টাইটেল যোগ করা হয়, কিন্তু মেয়েদের নামের সাথে ‘সুলতানা’ লাগিয়ে দিয়েই কর্মসম্পাদন করা হয়। আমি হাফিজ সাহেবকে বললাম, “আজকে যদি আমার ছেলে হত তাহলে তার নাম হত অমুক রাহমান, কিন্তু আমার মেয়েকে যদি রাদিয়া সুলতানা ডাকা হয় তাহলে তার পরিচয় কি? সে কার মেয়ে, কোন পরিবারের মেয়ে? সুলতানা মানে রাজকন্যা খুব ভালো কথা কিন্তু এটা একটা মেয়ের প্রথম নাম হতে পারে, শেষ নাম হিসেবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা। ফাতিমা (রা)’র নাম কি ফাতিমা খাতুন বা বেগম বা সুলতানা ছিল? তাঁর নাম ছিল ফাতিমা বিন্ত মুহাম্মাদ। তাঁর পিতৃপরিচয় ছিল তাঁর নামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাহলে আমার মেয়ে কেন তার হক থেকে বঞ্চিত হবে?” বেচারা পড়ে গেলেন সমস্যায়। আম্মা কিছুতেই সুলতানার দাবী ছাড়বেন না আর আমি কিছুতেই আমার মেয়েকে পারিবারিক নাম থেকে বঞ্চিত হতে দেবনা কারণ নিজেকে বঞ্চিত করা যায় কিন্তু সন্তানকে বঞ্চিত হতে দেয়া যায়না। পরে আমিই আম্মাকে বোঝালাম যে আমার বিয়ের পর থেকে আমি কোন ব্যাপারে ন্যূনতম কোন অধিকার দাবী করিনি, আজ শুধু অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে যেন তার হক থেকে বঞ্চিত না করা হয়। শেষপর্যন্ত উনি রাজী হলেন।
আমাদের এস. এস. সি. পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময় সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল আমাদের এক বান্ধবীর নামের এন্ট্রি। ওর বাবা লিখে দিয়েছেন ওর নাম ‘স্বর্না’, শুধুই স্বর্না! প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত আংকেলকে ফোন করে বললেন ওকে একটা ‘লাস্ট নেম’ দেয়ার জন্য। কিন্তু উনি শুধু বললেন, “ওর কিছুদিন পর ‘লাস্ট নেম’ হয়ে যাবে, এখন শুধু স্বর্নাই যথেষ্ট”! বেচারীর এই নামে বোঝার কি কোন উপায় আছে ও কার মেয়ে, কোন পরিবারের মেয়ে, মুসলিম না হিন্দু? এটা তো শুধু একটা ঘটনা। এরকম যে আরো কত দেখেছি! সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমি খুব ভাগ্যবতী ছিলাম। কেবল নামের ব্যাপারেই নয়, সন্তান হিসেবে প্রাপ্তির দিক থেকেও। বরং আমার ভাইরা হিংসা করে বলত, “আহা! আমরা যদি মেয়ে হতাম!”
আমরা প্রায়ই ছেলেদের নাম রাখার সময় অনেক চিন্তাভাবনা করে সুন্দর নাম রাখার চেষ্টা করি। তার নামের সাথে কি করে পরিবারের বা অন্তত বাপের নামের যোগসূত্র স্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবিত হই। অথচ মেয়েদের নাম রাখার সময় প্রায়ই তাতে ইসলামের ছোঁয়া থাকেনা। নামের শেষেও কোনরকমে একটা কিছু দিয়ে দেয়া হয়। ধরে নেয়া হয় বিয়ের পর তো তার নাম পরিবর্তন হয়েই যাবে। তাকে কোন এক সময় অন্য পরিবারে স্থানান্তর করা হবে ভেবে প্রথম থেকেই তাকে পরিবারের নাম থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত করা হয়। অথচ সে যাকেই বিয়ে করুক না কেন আল্লাহ তাকে আমার ঘরেই পাঠিয়েছেন। তার প্রতি আমি ন্যায় আচরন করলাম কি’না তার ওপর আমার বেহেস্ত দোজখ নির্ভর করছে। একটা মেয়ের আগমনের সাথে সাথে তাকে পর করে না দিয়ে যদি সে কোনদিন চলে যাবে ভেবে তাকে আমরা আরেকটু বেশী আদর করতাম তাহলে কি আমাদের খুব ক্ষতি হত? সামান্য একটা নাম, তাতে আমার উভয়প্রকার সন্তানের সমাধিকার নিশ্চিত করাটা কি খুব কঠিন কোন কাজ? আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন হোক। আমরা যেন এই ব্যাপারে আরো সচেতন হই।
আমার মেয়ের জন্মের পর আমি ঠিক উলটো সমস্যায় পড়লাম। মেয়ে হবার আগে কুর’আন থেকে সুন্দর সুন্দর শব্দগুলো বেছে বেছে দশটা ছেলের আর দশটা মেয়ের নাম ঠিক করলাম। মেয়ের নাম নির্বাচন করা হোল ঐ তালিকা থেকেই। কিন্তু শেষের নাম কি হবে তা নিয়ে বিশাল গোলযোগ বেঁধে গেল। ওদের পরিবারে ট্রেডিশনালি ছেলেদের নামের সাথে পারিবারিক টাইটেল যোগ করা হয়, কিন্তু মেয়েদের নামের সাথে ‘সুলতানা’ লাগিয়ে দিয়েই কর্মসম্পাদন করা হয়। আমি হাফিজ সাহেবকে বললাম, “আজকে যদি আমার ছেলে হত তাহলে তার নাম হত অমুক রাহমান, কিন্তু আমার মেয়েকে যদি রাদিয়া সুলতানা ডাকা হয় তাহলে তার পরিচয় কি? সে কার মেয়ে, কোন পরিবারের মেয়ে? সুলতানা মানে রাজকন্যা খুব ভালো কথা কিন্তু এটা একটা মেয়ের প্রথম নাম হতে পারে, শেষ নাম হিসেবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা। ফাতিমা (রা)’র নাম কি ফাতিমা খাতুন বা বেগম বা সুলতানা ছিল? তাঁর নাম ছিল ফাতিমা বিন্ত মুহাম্মাদ। তাঁর পিতৃপরিচয় ছিল তাঁর নামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাহলে আমার মেয়ে কেন তার হক থেকে বঞ্চিত হবে?” বেচারা পড়ে গেলেন সমস্যায়। আম্মা কিছুতেই সুলতানার দাবী ছাড়বেন না আর আমি কিছুতেই আমার মেয়েকে পারিবারিক নাম থেকে বঞ্চিত হতে দেবনা কারণ নিজেকে বঞ্চিত করা যায় কিন্তু সন্তানকে বঞ্চিত হতে দেয়া যায়না। পরে আমিই আম্মাকে বোঝালাম যে আমার বিয়ের পর থেকে আমি কোন ব্যাপারে ন্যূনতম কোন অধিকার দাবী করিনি, আজ শুধু অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে যেন তার হক থেকে বঞ্চিত না করা হয়। শেষপর্যন্ত উনি রাজী হলেন।
আমাদের এস. এস. সি. পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের সময় সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল আমাদের এক বান্ধবীর নামের এন্ট্রি। ওর বাবা লিখে দিয়েছেন ওর নাম ‘স্বর্না’, শুধুই স্বর্না! প্রিন্সিপাল স্যার পর্যন্ত আংকেলকে ফোন করে বললেন ওকে একটা ‘লাস্ট নেম’ দেয়ার জন্য। কিন্তু উনি শুধু বললেন, “ওর কিছুদিন পর ‘লাস্ট নেম’ হয়ে যাবে, এখন শুধু স্বর্নাই যথেষ্ট”! বেচারীর এই নামে বোঝার কি কোন উপায় আছে ও কার মেয়ে, কোন পরিবারের মেয়ে, মুসলিম না হিন্দু? এটা তো শুধু একটা ঘটনা। এরকম যে আরো কত দেখেছি! সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমি খুব ভাগ্যবতী ছিলাম। কেবল নামের ব্যাপারেই নয়, সন্তান হিসেবে প্রাপ্তির দিক থেকেও। বরং আমার ভাইরা হিংসা করে বলত, “আহা! আমরা যদি মেয়ে হতাম!”
আমরা প্রায়ই ছেলেদের নাম রাখার সময় অনেক চিন্তাভাবনা করে সুন্দর নাম রাখার চেষ্টা করি। তার নামের সাথে কি করে পরিবারের বা অন্তত বাপের নামের যোগসূত্র স্থাপন করা যায় তা নিয়ে ভাবিত হই। অথচ মেয়েদের নাম রাখার সময় প্রায়ই তাতে ইসলামের ছোঁয়া থাকেনা। নামের শেষেও কোনরকমে একটা কিছু দিয়ে দেয়া হয়। ধরে নেয়া হয় বিয়ের পর তো তার নাম পরিবর্তন হয়েই যাবে। তাকে কোন এক সময় অন্য পরিবারে স্থানান্তর করা হবে ভেবে প্রথম থেকেই তাকে পরিবারের নাম থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত করা হয়। অথচ সে যাকেই বিয়ে করুক না কেন আল্লাহ তাকে আমার ঘরেই পাঠিয়েছেন। তার প্রতি আমি ন্যায় আচরন করলাম কি’না তার ওপর আমার বেহেস্ত দোজখ নির্ভর করছে। একটা মেয়ের আগমনের সাথে সাথে তাকে পর করে না দিয়ে যদি সে কোনদিন চলে যাবে ভেবে তাকে আমরা আরেকটু বেশী আদর করতাম তাহলে কি আমাদের খুব ক্ষতি হত? সামান্য একটা নাম, তাতে আমার উভয়প্রকার সন্তানের সমাধিকার নিশ্চিত করাটা কি খুব কঠিন কোন কাজ? আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন হোক। আমরা যেন এই ব্যাপারে আরো সচেতন হই।