রাস্তায় বেরোলেই আমার প্রাত্যহিক দোয়াগুলো সেরে নিতে খুব ভালো লাগে। প্রথমত সময়টা কাজে লাগানো হয়। দ্বিতীয়ত ভ্রমণকালীন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী। সেদিন এক বান্ধবীর বাসায় যেতে যেতে কালেমা পড়ছিলাম, “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু”। ইদানিং আমরা বান্ধবীরা চেষ্টা করছি তোতাপাখীর মত গড়গড় করে নামাজ বা দোয়া না পড়ে নিয়ম অনুযায়ী কি পড়ছি বুঝে বুঝে পড়ার। তাই মুখে বলতে বলতে মনে মনে অনুবাদ করছি, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর দাস এবং বার্তাবাহক”।
পড়তে পড়তে হঠাৎ আমার মাথায় এলো যে এখানে কিন্তু মূল কথা একটাই। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, এই কথাটার স্বীকৃতি। সম্পূর্ন কোর’আনেরও মূল বক্তব্য এটাই। আর এই নিয়ে দুনিয়ার যত সমস্যা! কথাটা চিন্তা করে আমার খুব হাসি পেল। এটা একটা সমস্যা হওয়ার মত ব্যাপার? আমরা যদি রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে কবিতাটিকে তাঁর কবিতা আর রবীন্দ্রনাথকে কবি বলে স্বীকৃতি দেই তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? তাহলে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যে এত ঝামেলার কি আছে? অথচ এই তুচ্ছ ব্যাপারটা নিয়ে মানুষের যে কত সমস্যা!
সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করার জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োগ করা হচ্ছে অথচ বিজ্ঞান হোল সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি নিয়ে গবেষনার ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল! বিজ্ঞানীরা সৃষ্টবস্তুর ব্যাবহার ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননা অথচ এতেই তাদের অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা! কিন্তু যিনি সৃষ্টি করলেন সবকিছু, তাকে অস্বীকার করে তাঁরা নিজেদের ‘গড’ বানাতে উঠেপড়ে লেগে গিয়েছেন!
একজন মানুষ যখন আমাদের একগ্লাস পানি দেয় তখন তাকে মিষ্টি করে ‘ধন্যবাদ’ না বললে সে রাগ করে যদিও পানি বা পানির গ্লাস কোনটাই তার বানানো নয়। অথচ যিনি আমাদের এই প্রাণ, এই শরীর, পরিবার, লেখাপড়া, জ্ঞান বুধি বিবেক, খাবার দাবাড়, এই সুন্দর পৃথিবী মায় নিঃশ্বাসের বাতাসটা পর্যন্ত দিলেন তাকে ধন্যবাদ বলতে আমাদের মানসম্মান সব শেষ হয়ে যায়!
একবছরের মধ্যে ছয়মাস ফাঁকি দিয়ে যে শিক্ষক পড়ান তিনি আমাদের পরীক্ষা নিলে আমরা বিরক্ত হইনা বরং শ্রদ্ধা এবং ভয় নিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করি। অথচ যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করলেন তাঁর কাছে কেন জবাবদিহি করতে হবে, ফলাফল পেতে হবে তাই নিয়ে আমাদের বিরক্তির শেষ নেই! আল্লাহ যতক্ষণ দেন ততক্ষণ আমরা একটা ‘থ্যাংক ইউ’ বলারও প্রয়োজন মনে করিনা, কিন্তু তিনি কেবল একটা কিছু না দিলে বা নিয়ে নিলেই আমরা আক্রোশে ফেটে পড়ি, “আল্লাহ আমার প্রতি অন্যায় করেছেন তাই তাকে মানার কোন প্রয়োজন নেই!”
ভাবছিলাম আমাদের কথা। আজকে যে সারা বিশ্ব মসলিমদের ওপর হামলে পড়েছে, সবাই মানুষ অথচ আমাদের কেউ মানুষ বলে মনেই করছেনা, তাদের সাথে কিন্তু আমাদের আর কোন সমস্যা নেই। আমরা সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকার করে নিয়েছি এটা ছাড়া কিন্তু আমাদের সাথে তাদের আর কোন পার্থক্য নেই! শুধু এই কারণেই আমাদের পরিবারের আধুনিকতাবাদীরা আমাদের ব্যাকওয়ার্ড মনে করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। সমাজের নানান স্তরের লোকজন আমাদের নিয়ে খুব চিন্তিত যে আমাদের নিয়ে দেশের উন্নতি কিভাবে হবে? অথচ আমরা কারো পাকা ধানে মই দিইনি বা বাড়া ভাতে ছাই দিইনি যেহেতু সৃষ্টিকর্তা বলেছেন আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাহলে আমাদের অপরাধ কি? আমরা কেন সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করলাম, এটাই? এটুকুর জন্য আমাদের পৃথিবীব্যাপী গালি দেয়া, মেরে ফেলা, খারাপ মনে করা জায়েজ হয়ে গেল?!
আমার দ্বিতীয় সন্তান যখন আমার ভেতরে, আমার ভীষণ শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। আমি এতে অভ্যস্ত ছিলাম না, তাই খুব ভয় পেতাম। মনে হত আল্লাহর এই পৃথিবীতে এত বাতাস, অথচ আমার ছোট্ট দু’টো ফুসফুস কিছুতেই বাতাসে পূর্ণ হচ্ছেনা! একদিনের কথা খুব মনে পড়ে। দুপুর দু’টার সময় যে শ্বাসকষ্ট শুরু হোল রাত দশটা পর্যন্ত আটটা ঘন্টা – আমার দুই ননদ পালা করে আমার পিঠে হাত দিয়ে চেপে রেখেছে, তাহলে কিছুটা শ্বাস নিতে পারি, হাত সরালেই দম বন্ধ হয়ে যায়! মনে হোল এই যে আমরা শক্তি সাহস আর বীরত্বের বড়াই করি, অথচ সামান্য একটু বাতাস বুকের ভেতর টেনে নিতে পারিনা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া। এভাবেই একদিন শেষ নিঃশ্বাসটাও আমাদের দেহ ছেড়ে চলে যাবে, আর ফিরে আসবেনা! তাহলে কিসের আমাদের এত অহংকার? কি ভেবে আমরা তাঁকে অস্বীকার করি যাকে ছাড়া এক ফুসফুস বাতাস আমাদের দেহে প্রবেশ করেনা সকল চেষ্টা সত্ত্বেও?
একদিন আমার ক্লাস শেষে হাফিজ সাহেব আমাকে আনতে গিয়েছেন ইউনিভার্সিটি থেকে। সেদিন শুক্রবার, রাস্তাঘাট ফাঁকা। তাই আমার সেই দুষ্ট দ্বিতীয় সন্তান রিহামকে নিয়ে গিয়েছেন। ওর বয়স তখন দেড়বছর হবে। মাত্র হাঁটতে আর কথা বলতে শিখেছে। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এসে একপাল গরু দেখে ওর যে কি হোল, চলন্ত মটরসাইকেলে আমার কোল থেকে নেমে খালি পায়ে সে গরুগুলোর পিছু ধাওয়া করতে লাগল। আমি দৌড়ে গিয়ে ধরার আগেই সে চলে গিয়েছে বহুদুর। কিন্তু গরু দেখা শেষে ওকে সেই আমার কাছেই ফিরে আসতে হোল।
এভাবেই আমরা যতদুরই চলে যাইনা কেন, শেষপর্যন্ত ফিরে আসতে হবে সৃষ্টিকর্তার কাছেই। তাই এই ব্যাপারে দ্বিমত করে সময় নষ্ট করার বোকামী মানুষ কেন করে, তা আজও বুঝতে পারলাম না! কি জানি? হয়ত যারা এই দ্বিমতের ওপর ভিত্তি করে আমাদের হত্যা করে ফেলাও কোন অন্যায় মনে করেন না, তাদের নিশ্চয়ই খুব ভালো কোন যুক্তি আছে!
পড়তে পড়তে হঠাৎ আমার মাথায় এলো যে এখানে কিন্তু মূল কথা একটাই। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, এই কথাটার স্বীকৃতি। সম্পূর্ন কোর’আনেরও মূল বক্তব্য এটাই। আর এই নিয়ে দুনিয়ার যত সমস্যা! কথাটা চিন্তা করে আমার খুব হাসি পেল। এটা একটা সমস্যা হওয়ার মত ব্যাপার? আমরা যদি রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে কবিতাটিকে তাঁর কবিতা আর রবীন্দ্রনাথকে কবি বলে স্বীকৃতি দেই তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? তাহলে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যে এত ঝামেলার কি আছে? অথচ এই তুচ্ছ ব্যাপারটা নিয়ে মানুষের যে কত সমস্যা!
সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করার জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োগ করা হচ্ছে অথচ বিজ্ঞান হোল সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি নিয়ে গবেষনার ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল! বিজ্ঞানীরা সৃষ্টবস্তুর ব্যাবহার ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননা অথচ এতেই তাদের অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা! কিন্তু যিনি সৃষ্টি করলেন সবকিছু, তাকে অস্বীকার করে তাঁরা নিজেদের ‘গড’ বানাতে উঠেপড়ে লেগে গিয়েছেন!
একজন মানুষ যখন আমাদের একগ্লাস পানি দেয় তখন তাকে মিষ্টি করে ‘ধন্যবাদ’ না বললে সে রাগ করে যদিও পানি বা পানির গ্লাস কোনটাই তার বানানো নয়। অথচ যিনি আমাদের এই প্রাণ, এই শরীর, পরিবার, লেখাপড়া, জ্ঞান বুধি বিবেক, খাবার দাবাড়, এই সুন্দর পৃথিবী মায় নিঃশ্বাসের বাতাসটা পর্যন্ত দিলেন তাকে ধন্যবাদ বলতে আমাদের মানসম্মান সব শেষ হয়ে যায়!
একবছরের মধ্যে ছয়মাস ফাঁকি দিয়ে যে শিক্ষক পড়ান তিনি আমাদের পরীক্ষা নিলে আমরা বিরক্ত হইনা বরং শ্রদ্ধা এবং ভয় নিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করি। অথচ যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করলেন তাঁর কাছে কেন জবাবদিহি করতে হবে, ফলাফল পেতে হবে তাই নিয়ে আমাদের বিরক্তির শেষ নেই! আল্লাহ যতক্ষণ দেন ততক্ষণ আমরা একটা ‘থ্যাংক ইউ’ বলারও প্রয়োজন মনে করিনা, কিন্তু তিনি কেবল একটা কিছু না দিলে বা নিয়ে নিলেই আমরা আক্রোশে ফেটে পড়ি, “আল্লাহ আমার প্রতি অন্যায় করেছেন তাই তাকে মানার কোন প্রয়োজন নেই!”
ভাবছিলাম আমাদের কথা। আজকে যে সারা বিশ্ব মসলিমদের ওপর হামলে পড়েছে, সবাই মানুষ অথচ আমাদের কেউ মানুষ বলে মনেই করছেনা, তাদের সাথে কিন্তু আমাদের আর কোন সমস্যা নেই। আমরা সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকার করে নিয়েছি এটা ছাড়া কিন্তু আমাদের সাথে তাদের আর কোন পার্থক্য নেই! শুধু এই কারণেই আমাদের পরিবারের আধুনিকতাবাদীরা আমাদের ব্যাকওয়ার্ড মনে করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। সমাজের নানান স্তরের লোকজন আমাদের নিয়ে খুব চিন্তিত যে আমাদের নিয়ে দেশের উন্নতি কিভাবে হবে? অথচ আমরা কারো পাকা ধানে মই দিইনি বা বাড়া ভাতে ছাই দিইনি যেহেতু সৃষ্টিকর্তা বলেছেন আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাহলে আমাদের অপরাধ কি? আমরা কেন সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করলাম, এটাই? এটুকুর জন্য আমাদের পৃথিবীব্যাপী গালি দেয়া, মেরে ফেলা, খারাপ মনে করা জায়েজ হয়ে গেল?!
আমার দ্বিতীয় সন্তান যখন আমার ভেতরে, আমার ভীষণ শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। আমি এতে অভ্যস্ত ছিলাম না, তাই খুব ভয় পেতাম। মনে হত আল্লাহর এই পৃথিবীতে এত বাতাস, অথচ আমার ছোট্ট দু’টো ফুসফুস কিছুতেই বাতাসে পূর্ণ হচ্ছেনা! একদিনের কথা খুব মনে পড়ে। দুপুর দু’টার সময় যে শ্বাসকষ্ট শুরু হোল রাত দশটা পর্যন্ত আটটা ঘন্টা – আমার দুই ননদ পালা করে আমার পিঠে হাত দিয়ে চেপে রেখেছে, তাহলে কিছুটা শ্বাস নিতে পারি, হাত সরালেই দম বন্ধ হয়ে যায়! মনে হোল এই যে আমরা শক্তি সাহস আর বীরত্বের বড়াই করি, অথচ সামান্য একটু বাতাস বুকের ভেতর টেনে নিতে পারিনা আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া। এভাবেই একদিন শেষ নিঃশ্বাসটাও আমাদের দেহ ছেড়ে চলে যাবে, আর ফিরে আসবেনা! তাহলে কিসের আমাদের এত অহংকার? কি ভেবে আমরা তাঁকে অস্বীকার করি যাকে ছাড়া এক ফুসফুস বাতাস আমাদের দেহে প্রবেশ করেনা সকল চেষ্টা সত্ত্বেও?
একদিন আমার ক্লাস শেষে হাফিজ সাহেব আমাকে আনতে গিয়েছেন ইউনিভার্সিটি থেকে। সেদিন শুক্রবার, রাস্তাঘাট ফাঁকা। তাই আমার সেই দুষ্ট দ্বিতীয় সন্তান রিহামকে নিয়ে গিয়েছেন। ওর বয়স তখন দেড়বছর হবে। মাত্র হাঁটতে আর কথা বলতে শিখেছে। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এসে একপাল গরু দেখে ওর যে কি হোল, চলন্ত মটরসাইকেলে আমার কোল থেকে নেমে খালি পায়ে সে গরুগুলোর পিছু ধাওয়া করতে লাগল। আমি দৌড়ে গিয়ে ধরার আগেই সে চলে গিয়েছে বহুদুর। কিন্তু গরু দেখা শেষে ওকে সেই আমার কাছেই ফিরে আসতে হোল।
এভাবেই আমরা যতদুরই চলে যাইনা কেন, শেষপর্যন্ত ফিরে আসতে হবে সৃষ্টিকর্তার কাছেই। তাই এই ব্যাপারে দ্বিমত করে সময় নষ্ট করার বোকামী মানুষ কেন করে, তা আজও বুঝতে পারলাম না! কি জানি? হয়ত যারা এই দ্বিমতের ওপর ভিত্তি করে আমাদের হত্যা করে ফেলাও কোন অন্যায় মনে করেন না, তাদের নিশ্চয়ই খুব ভালো কোন যুক্তি আছে!
No comments:
Post a Comment