চলার পথে হঠাৎ দেখা কিছু কিছু মুখ অকারণেই মনে গেঁথে যায়, অবসরে শুধু শুধুই মানসপটে উঁকি দিয়ে যায়।
আমার খুব মনে পড়ে দুবাইগামী সেই যুবককে যাকে এয়ারপোর্টের বাসে উঠতে উঠতে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে আমার শিশুচোখ দু’টো খুব অবাক হয়েছিল, “এতবড় ছেলেরাও কাঁদে?!”
মানুষের ছোটখাটো মানবিক আচরণগুলো আমাকে খুব স্পর্শ করে। তাই মনে পড়ে এয়ারপোর্টের বাসে নিজের সীট ছেড়ে আমাদের বসতে দেয়া সেই ভ্রমণক্লান্ত ভদ্রলোকের কথা যাকে দেখে আমার বালিকামন বলেছিল, “আমার ছেলে হলে যেন এমন হয়!” মনে পড়ে কলকাতার ট্রামে সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোককে যিনি ট্রামের পেছনে বসে ছিলেন। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সামনে। অন্যান্য প্যাসেঞ্জারদের দিয়ে তিনি খবর পাঠালেন আমি যেন তাঁর কাছে যাই। দাঁড়িয়ে থাকা নারীপুরুষের ভীড় ঠেলে তাঁর কাছে পৌঁছুলে তিনি ধুতি ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি এই স্টপে নেমে যাব মা, আমার জায়গায় বসার জন্য তোমাকে ডেকেছি”। আমার এখনো অবাক লাগে তাঁর কাছেই এতগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি কেন আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন সামনে থেকে যেখানে আমি ছিলাম একমাত্র বোরকাপরিহিতা যুবতী!
মাদ্রাজ থেকে কলকাতা আসার সময় দেখা প্লেনে দেখা এক ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ে। লম্বাচওড়া, ফর্সা, দাঁড়িওয়ালা চেহারা দেখে পাঠানের মত লাগল। কথা বলতে বলতে জানলাম তাঁর বাড়ী পাকিস্তান, তবে তিনি হিন্দু। যে দু’টো ধর্মের উৎপত্তি পাকিস্তানে- হিন্দু এবং শিখধর্ম, অথচ দু’টোর একটিও এখন পাকিস্তানের মূল ধর্ম নয় বা তাদের পাকিস্তানী অনুসারীদের কখনো দেখিনি- তাদের একজনকে দেখে আমার ভীষণ মজা লাগল, কারণ এটা একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। প্লেন থেকে নামার সময় উনি আমার ব্যাগ নিতে সাহায্য করতে চাইলে আমি মানা করলাম, “ব্যাগ অনেক ভারী, আপনি আল্গাতে পারবেন না”। উনি বললেন, “তুমি আমার সাইজ দেখেছ?” আমি বললাম, “ঠিক আছে, চেষ্টা করেই দেখেন”। ব্যাগ তুলতে গিয়ে উনি একপাশে ঝুঁকে পড়ে বললেন, “বাপস, এর মধ্যে কি আছে? ইট নাকি?” আমি হাসতে হাসতে ব্যাগের আরেকপাশ ধরে বললাম, “না, বই, ওজনে না হলেও সম্মানের ভারে ভারী হয়ে যায়!”
মনে পড়ে বিসিএস পরীক্ষার ইন্টারভিউ দিতে যাবার ঘটনা। যাবার পথে পাশের সীটে বসা ভদ্রমহিলা খাইয়েছিলেন এই খুশীতে যে আমি আমার সার্টিফিকেটগুলো স্যুটকেসে না দিয়ে হাতে নিয়েছি। আসার পথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বডিগার্ড বাহিনীর অগ্রবর্তী দলের চারজন ছিলেন বাসে আমার সামনে পেছনে পাশে বসা। তাঁরা আগেভাগেই চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে তাঁর নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিতে। তাঁদের বিভিন্ন বাহিনী থেকে খন্ডকালীন রিক্রুট করা হয়। বেচারারা নিজ দায়িত্বে পুরো রাস্তা আমাকে দেখেশুনে রাখলেন! আমি আশ্চর্য হলে তাঁদের একজন বললেন, “আমাদেরও বোন আছে, আমরা আপনাকে দেখলে আমাদের বোনদেরও হয়ত কেউ দেখবে”।
এই চেহারার কালেকশন নিয়তই বেড়ে চলেছে। তার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে এই বিশ্বাস যে পৃথিবীর মানুষগুলো আসলে খুব ভালো। পরিস্থিতির কারণে হয়ত আমরা অনেকসময় অনেক অদ্ভুত আচরণ করি কিন্তু স্বভাবগতভাবে মানুষ মূলত ভালো।
আমার খুব মনে পড়ে দুবাইগামী সেই যুবককে যাকে এয়ারপোর্টের বাসে উঠতে উঠতে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে আমার শিশুচোখ দু’টো খুব অবাক হয়েছিল, “এতবড় ছেলেরাও কাঁদে?!”
মানুষের ছোটখাটো মানবিক আচরণগুলো আমাকে খুব স্পর্শ করে। তাই মনে পড়ে এয়ারপোর্টের বাসে নিজের সীট ছেড়ে আমাদের বসতে দেয়া সেই ভ্রমণক্লান্ত ভদ্রলোকের কথা যাকে দেখে আমার বালিকামন বলেছিল, “আমার ছেলে হলে যেন এমন হয়!” মনে পড়ে কলকাতার ট্রামে সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোককে যিনি ট্রামের পেছনে বসে ছিলেন। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সামনে। অন্যান্য প্যাসেঞ্জারদের দিয়ে তিনি খবর পাঠালেন আমি যেন তাঁর কাছে যাই। দাঁড়িয়ে থাকা নারীপুরুষের ভীড় ঠেলে তাঁর কাছে পৌঁছুলে তিনি ধুতি ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি এই স্টপে নেমে যাব মা, আমার জায়গায় বসার জন্য তোমাকে ডেকেছি”। আমার এখনো অবাক লাগে তাঁর কাছেই এতগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি কেন আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন সামনে থেকে যেখানে আমি ছিলাম একমাত্র বোরকাপরিহিতা যুবতী!
মাদ্রাজ থেকে কলকাতা আসার সময় দেখা প্লেনে দেখা এক ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ে। লম্বাচওড়া, ফর্সা, দাঁড়িওয়ালা চেহারা দেখে পাঠানের মত লাগল। কথা বলতে বলতে জানলাম তাঁর বাড়ী পাকিস্তান, তবে তিনি হিন্দু। যে দু’টো ধর্মের উৎপত্তি পাকিস্তানে- হিন্দু এবং শিখধর্ম, অথচ দু’টোর একটিও এখন পাকিস্তানের মূল ধর্ম নয় বা তাদের পাকিস্তানী অনুসারীদের কখনো দেখিনি- তাদের একজনকে দেখে আমার ভীষণ মজা লাগল, কারণ এটা একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। প্লেন থেকে নামার সময় উনি আমার ব্যাগ নিতে সাহায্য করতে চাইলে আমি মানা করলাম, “ব্যাগ অনেক ভারী, আপনি আল্গাতে পারবেন না”। উনি বললেন, “তুমি আমার সাইজ দেখেছ?” আমি বললাম, “ঠিক আছে, চেষ্টা করেই দেখেন”। ব্যাগ তুলতে গিয়ে উনি একপাশে ঝুঁকে পড়ে বললেন, “বাপস, এর মধ্যে কি আছে? ইট নাকি?” আমি হাসতে হাসতে ব্যাগের আরেকপাশ ধরে বললাম, “না, বই, ওজনে না হলেও সম্মানের ভারে ভারী হয়ে যায়!”
মনে পড়ে বিসিএস পরীক্ষার ইন্টারভিউ দিতে যাবার ঘটনা। যাবার পথে পাশের সীটে বসা ভদ্রমহিলা খাইয়েছিলেন এই খুশীতে যে আমি আমার সার্টিফিকেটগুলো স্যুটকেসে না দিয়ে হাতে নিয়েছি। আসার পথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বডিগার্ড বাহিনীর অগ্রবর্তী দলের চারজন ছিলেন বাসে আমার সামনে পেছনে পাশে বসা। তাঁরা আগেভাগেই চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে তাঁর নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিতে। তাঁদের বিভিন্ন বাহিনী থেকে খন্ডকালীন রিক্রুট করা হয়। বেচারারা নিজ দায়িত্বে পুরো রাস্তা আমাকে দেখেশুনে রাখলেন! আমি আশ্চর্য হলে তাঁদের একজন বললেন, “আমাদেরও বোন আছে, আমরা আপনাকে দেখলে আমাদের বোনদেরও হয়ত কেউ দেখবে”।
এই চেহারার কালেকশন নিয়তই বেড়ে চলেছে। তার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে এই বিশ্বাস যে পৃথিবীর মানুষগুলো আসলে খুব ভালো। পরিস্থিতির কারণে হয়ত আমরা অনেকসময় অনেক অদ্ভুত আচরণ করি কিন্তু স্বভাবগতভাবে মানুষ মূলত ভালো।
No comments:
Post a Comment