একদিন অফিসে কাজ করছি, এমনসময় পিয়ন এসে বল্ল, “আপা, এক মহিলা এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে, ভিজিটর্স রুমে বসে আছেন”। আমি হাতের কাজটা গুছিয়ে নিতে নিতে সে ফিক করে হেসে বল্ল, “আপা, মহিলা মনে হয় পাগল!”, তারপর হঠাৎ আমার ঈষৎ বিরক্ত চেহারার দিকে চোখ পড়তে সে আর কথা না বলে কেটে পড়ল।
দু’মিনিট পর ভিজিটর্স রুমের দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখি এক বিরাটাকার মহিলা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে গর্ভবতী, উদ্ভ্রান্তের মত চুল, ওড়না মাটিতে গড়াচ্ছে কোন খেয়াল নেই- মহিলা কে চিনতে পারলাম না। ভেতরে ঢুকতেই সে হঠাৎ তন্দ্রা থেকে জেগে ওঠা মানুষের মত আমার হাত দু’টো চেপে ধরে বল্ল, “রেহনুমা, তুই আমাকে বাঁচা!” কোন সম্ভাষন নেই, পরিচিতি নেই … চেহারাটা কাছে থেকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, “রিমা না? কি রে তোর এই অবস্থা হয়েছে কি করে? কি হয়েছে তোর?” এই বান্ধবীকে আমি কোনদিন একটা চুল এদিক ওদিক হতে দেখিনি। ভীষণ রুচিশীল আর শৈল্পিক একটা মেয়ে ছিল সে। বিয়ে হয়েছিল আপন ফুপাত ভাইয়ের সাথে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সে ভালো আছে যেহেতু ফুপু নিজে ওকে চেয়ে নিয়েছিলেন। বিবাহিতা বান্ধবীদের সবার খোঁজখবর করা হত ওরা ভালো আছে কি’না, রিমার খোঁজ কোনদিন করা হয়নি। সে নিজেও সব বান্ধবীদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে কেউ ভাবেনি সে কষ্টে আছে। এখন ওকে দেখে ভীষণ অপরাধবোধ হতে লাগল। তাড়াতাড়ি ওকে বসালাম। ওর জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করলাম। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওর এই অবস্থা হোল কি করে।
রিমার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। সে যা বল্ল তার সারমর্ম হোল, বিয়ের পরদিন থেকেই ফুপু কেবল শ্বাশুড়ীই হয়ে গেলেন, যেই ফুপু ওকে এত আদর করতেন তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলনা। উনি উঠতে বসতে ওকে কথা শোনাতেন, জ্বালাতন করতেন, অন্য বৌকে ওর সামনে আদর করতেন আর ওদের সামনে ওকে হেয় করতেন। ও নিজেই বুঝে পেলনা ও কি অন্যায় করেছে। কিন্তু আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে মনে করে ও ওর বাবামা বা আর কোন আত্মীয় পরিজনকেই এ’কথা বলতে পারলনা। বান্ধবীরা শুনলে কি মনে করবে ভেবে সে আমাদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। একসময় ওর নিজের ওপরেই ঘৃনা চলে এলো, “আমি যদি এতি খারাপ হই তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কি?” স্বামীর কাছ থেকেও সে কোন সহযোগিতা পেলনা, পেল সহানুভূতি কিন্তু সেটা ওকে এই সার্বক্ষণিক মানসিক অত্যাচার থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখেনা। একসময় ও বুঝতে পারল ওর মধ্যে আরেকটি জীবনের অস্তিত্ব। এ’সময় মেয়েরা শারিরীক মানসিক উভয় দিক থেকে স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু অত্যাচার কমলোনা। এমতাবস্থায় সে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করতে শুরু করল। হঠাৎ একদিন পেপারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে ওর মনে হোল নিজের জন্য না হোক, ওর অনাগত সন্তানের জন্য ওকে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে হবে। তাই সে এসেছে আমার কাছে।
আমি তখন নিজেই লজ্জায় মারা যাচ্ছি যে এত কিছু হয়ে গেল অথচ আমরা কেউ ওর একটা খবর পর্যন্ত নিলাম না। জিজ্ঞেস করলাম আমি কিভাবে ওকে সাহায্য করতে পারি। ও বল্ল, “তুই যেভাবেই হোক আমার জন্য একটা চাকরীর ব্যাবস্থা কর। আমার পাগল হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। আমার যেকোন উসিলায় দিনের অন্তত কিছুটা সময় বাসার বাইরে থাকা দরকার। প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ আমি স্বাভাবিক লোকজনের সাথে মিশতে চাই, স্বাভাবিক কাকে বলে আমি ভুলেই গেছি”। ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, “তুই যেটা চাচ্ছিস সেটা যে আমার জন্য কত কঠিন ব্যাপার! দু’মাস পরে বাচ্চা হবে এমন কাউকে কোন প্রতিষ্ঠানেই নিতে চাইবেনা কারণ এর সাথে আছে ম্যাটার্নিটি লীভ, বেতন আর ঈদ বোনাসের ব্যাপার”। কিন্তু ওর চেহারা দেখে সাহস হোলনা ওকে ক’মাস পর আসতে বলি, হয়ত ততদিনে সে আত্মহত্যা করেই বসবে!
ওকে বসিয়ে রেখে ভেতরে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সবার সাথে কথা বললাম। সবার আগেই উঠে আসল ম্যাটার্নিটি লীভ, বেতন আর ঈদ বোনাসের ব্যাপারটা। চাকরীর দু’মাসের ভেতর যাকে এতসব সুবিধা দিতে হবে তাকে নেয়া আদৌ যৌক্তিক কি’না। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হোল আগে পরীক্ষা নিয়ে দেখা যাক আদৌ সে চাকরীর জন্য উপযুক্ত কি’না। ওকে তিনদিন পর পরীক্ষার জন্য আসতে বললাম প্রস্তুতি নিয়ে, পরিপাটি হয়ে।
আশা মানুষের মধ্যে কি অদ্ভুত পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে স্বচক্ষে দেখলাম তিনদিন পর। রিমাকে দেখে মনে হোল যেন আমাদের আগের সেই রিমা। সে পরীক্ষা দিল এমনভাবে যেন এর ওপর ওর জীবনমরণ নির্ভর করছে। লৈখিক পরীক্ষায় অসম্ভব ভালো করাতে প্রতিষ্ঠান ওকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকতে বাধ্য হোল। আমি ওকে বলে দিলাম যে এই ইন্টারভিউর ওপরেই নির্ভর করছে ওর চাকরী পাওয়া না পাওয়া- আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকব সুতরাং ওর উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু ইন্টারভিউ ভালো না হলে আমি বোর্ডে থেকেও ওকে কোন সাহায্য করতে পারবনা।
সে আমাকে নিরাশ করলনা। ইন্টারভিউতে সে বল্ল, “এই চাকরীটাই হবে আমার আসল জীবন, সুতরাং আমি যে সিন্সিয়ারলি কাজ করব এ’ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমি চেষ্টা করব ম্যাটার্নিটি লীভ সংক্ষিপ্ত করতে আর আমাকে এ’সময় বেতন বা ঈদ বোনাস না দিলেও আমার কোন সমস্যা নেই”। ওর চাকরী হয়ে গেল।
রিমা এত ভালো কাজ করতে লাগল যে অল্প দিনের মধ্যেই ওর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ওকে অনেক স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত মনে হতে লাগল। দিনের একটা সময় হাসিখুশী থাকায় এবং লোকজন ওকে অ্যাপ্রিশিয়েট করায়, বাসায় যেসব নেতিবাচক কথাবার্তা ওকে আগে কষ্ট দিত সেগুলো ওকে আর ওভাবে স্পর্শ করতে পারতনা। দু’মাস পর ওর একটা ফুটফুটে ছেলে হোল। সাতদিন পরই ও আবার ছেলে নিয়ে আসতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওকে মানা করা হোল, জানানো হোল ও তিনমাস থেকে চারমাস ছুটির হকদার। কিন্তু ও আমাকে ডেকে বল্ল, “তুই কি ভাবিস আমি তোদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাতদিনের মধ্যে চলে এসেছি? আমি বাসায় থাকলে মরে যাবো রে!”
আমার প্রথম সন্তান হবার পর আমাদের প্রতিষ্ঠানে বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। খুব বেশী কিছু না, একটা রুম, রুমজোড়া বিছানা আর বাচ্চা দেখার জন্য একজন মানুষ। খেলনা আর খাবার মায়েরা নিয়ে আসবে। আমার সন্তানের জন্য এইসব ব্যবস্থা আমিই করেছিলাম। আমার মেয়ে বড় হয়ে যাবার পর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই লোক রাখা হয়। তারপর থেকে মহিলা কর্মীরা তাদের শিশু সন্তানদের সাথে নিয়ে আসতে পারতেন। তাহলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেরাই সন্তানদের তদারক করতে পারতেন। এতে যেটা লাভ হয় তা হোল মায়েরা তাদের কাজের ব্যাপারে আরো আন্তরিক হয়ে যান এবং বাসায় ফেরার কোন তাড়া থাকেনা। রিমা এখানে বাচ্চা রাখতে শুরু করল আর ওর কাজ কমিয়ে দেয়া হোল যেন সে যথেষ্ট বিশ্রাম পায়।
দিনে দিনে ওর সুনাম আরো বাড়তে লাগল, ওর আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো, ওর স্বামী ওকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করল। ওদিকে ওর শ্বাশুড়ী যখন দেখলেন উনি ওকে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, উনি মরিয়া হয়ে উঠলেন যেন সে চাকরী ছেড়ে দেয়। আমরা সবাই ওকে পরামর্শ দিলাম ও যেন ভুলেও এই কথায় কান না দেয়। এদিকে ঝামেলা করে কোন ফলাফল হবেনা বুঝতে পারে উনি ছেলেকে চাপ দিতে শুরু করলেন, “আমি বাসায় থাকতে বৌ নাতি নিয়ে চাকরীতে যাবে কেন?” সাত মাসের সময়ই রিমার ছেলে একটু একটু হাঁটতে, কথা বলতে শুরু করেছিল। ন’মাসের সময় উনি সফল হলেন। রিমা ছেলেকে শ্বাশুড়ীর কাছে রেখে আসতে বাধ্য হোল।
একদিন বাসায় ফিরে রিমা একটু অবাক হোল। ওর ছেলে এত চঞ্চল প্রাণবন্ত, ঘরময় ঘুরে বেড়ায়, বকবক করে- সে কেন চুপচাপ শুয়ে আছে? হাত পায়ের পর্যন্ত কোন নড়াচড়া নেই! সেই ছেলে আর কোনদিনই নড়াচড়া করলোনা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, বিদেশ নিয়ে গিয়েছে কিন্তু সবাই বল্ল ওর ব্রেনের ভেতরে কোন গুরুতর আঘাতে ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। অনেক পরে সে জানতে পেরেছিল যে ওর একবছরের শিশু ওর শ্বাশুড়ীর সামনেই কাজের মেয়ের হাত থেকে লাফ দিতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে নীচে পড়ে গেছিল। উনি যদি সাথে সাথে জানাতেন হয়ত কিছু করা গেলেও যেতে পারত। কিন্তু বাচ্চার জ্বর বা দুর্বলতা জাতীয় স্বাভাবিক কোন অসুখ ভেবে প্রায় দু’মাস অপেক্ষা করার পর যখন ওরা ডাক্তারের কাছে যায় তখন বাচ্চা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।
রিমাকে চাকরী ছেড়ে দিতে হোল। হয়ত অপরাধবোধ থেকেই ওর শ্বাশুড়ী ওকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। ওকে আলাদা বাসা নিতে হোল। তার কয়েকবছর পর উনি অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যান্য বৌরা শ্বাশুড়ীকে দেখাশোনা করতে অপারগতা প্রকাশ করল। ওনার ঠাঁই হোল এই রিমার বাসায়। ওর শ্বাশুড়ী আর ছেলে একই রুমে থাকত। ওনার ‘পাওয়ার প্লে’র সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারকে সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখতে ওনার কেমন লাগত জানিনা। তবে রিমা এই দুই রোগীকে নিয়ে কি আমানুষিক পরিশ্রম করেছে আমরা দেখেছি। ছেলে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে, রিমার মতই বড়সড় গোছের। একবার ছেলেকে খাওয়ায় খাবার গ্রাইন্ড করে পাইপ দিয়ে, আবার শ্বাশুড়ীকে খাওয়ায়। একবার ছেলেকে কোলে করে বাথ্রুমে নিয়ে যায়, আবার শ্বাশুড়ীকে আলগে বাথ্রুমে নিয়ে যায়। এভাবে কয়েকবছর যাবার পর ওর শ্বাশুড়ী গ্রামে ঈদ করার শখ করলেন। এই অসুস্থ বাচ্চা শ্বাশুড়ী সব নিয়ে সে গ্রামের বাড়ী গেল বেশ কয়েকবার বাস নৌকা পরিবর্তন করে। ঈদের পরদিন উনি কোরবানীর গরুর নেহারী খেতে চাইলেন। রান্নার মধ্যখানেই রিমা শুনলো ওর শ্বাশুড়ীর শ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছে। সে তাড়াতাড়ি ওনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য নেহারীর ঝোল অল্প চামচে করে এনে খাওয়ালো। সে ফিরে আসার পর যখন ওর সাথে দেখা করতে গেলাম ও বারবার বলতে লাগল, “আহারে, নেহারীতে বাগাড় দেয়ার আগেই উনি মারা গেলেন। বাগাড় ছাড়া ঝোলই ওনাকে দিতে হোল”। আমি ওর দিকে হা করে চেয়ে রইলাম। যে ওকে এতটা কষ্ট দিয়েছে যে এত বিশাল শক্তপোক্ত একটা মেয়ে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে গেছিল, ওর প্রথম সন্তানকে পঙ্গু করে দিয়েছে চিরতরে, তার জন্য সে দুঃখ করছে, “বাগাড় ছাড়া ঝোল ওনাকে দিতে হোল”!
ক্যানাডা আসার আগে গেছিলাম ওর সাথে দেখা করতে। ওর ছেলেটাকে খাওয়ানোর পর ও একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল পরবর্তী সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে। ওদের পাঠিয়ে ছেলের রুমে গিয়ে দেখে ওর গাল বেয়ে যে লালা পড়েছে সেখানে অসংখ্য পিঁপড়া, পিঁপড়ের কামড়ে গাল লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে কিন্তু বেচারার হাত চলেনা যে সে পিঁপড়েগুলোকে সরিয়ে দেবে, কথা বলতে পারেনা যে মাকে ডেকে বলবে। ওর কথা শুনে দুঃখে আমার চোখ জ্বলতে লাগল। কি বলে সান্তনা দেব খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে রইলাম। কিন্তু রিমা নিজেই বল্ল, “জানিস, আমার এই ছেলে নিয়ে আমার অনেক দুঃখ। কিন্তু এর বিনিময়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি যা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি আগে কখনো নামাজ পড়িনি। কিন্তু আমার ছেলের এই অবস্থার পর থেকে আমি নামাজ পড়া শুরু করেছি আর ছাড়িনি। আল্লাহকে খুব কাছে মনে হয়। ওনার কাছে যখনই যা চাই তা পাই। আমি একসময় খুব উৎশৃংখল ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ভালো কোনটা খারাপ কোনটা বুঝি এবং খারাপের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখি। একসময় পর্দার ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা। এখন আমি পর্দা করে চলি। আগে পথের ধারে যেই শিশুগুলোর দিকে তাকিয়েও দেখতাম না তাদের জন্য এখন খুব মায়া লাগে, কিছু করতে ইচ্ছা করে। আমি নিজেই বুঝি যে আমি এখন কোন ব্যপারে কষ্ট পাইনা, কেউ আমাকে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা যদি আল্লাহ আমার সাথে থাকেন”। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম রিমার দিকে। আমার এই বান্ধবী একসময় বিশাল আকারের শক্তিশালী দেহের অধিকারী হয়েও কথার আঘাত সইতে না পেরে নিজেকে ধ্বংস করে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। আর আজ সে এত সহ্যাতীত দুঃখের ভেতরেও পাহাড়ের মত শান্ত অটল! বিশ্বাস বুঝি একেই বলে! ওকে দেখে আমার মনে হোল আমি এক বেহেস্তী নারীর দিকে তাকিয়ে আছি!
দু’মিনিট পর ভিজিটর্স রুমের দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখি এক বিরাটাকার মহিলা, দেখেই বোঝা যাচ্ছে গর্ভবতী, উদ্ভ্রান্তের মত চুল, ওড়না মাটিতে গড়াচ্ছে কোন খেয়াল নেই- মহিলা কে চিনতে পারলাম না। ভেতরে ঢুকতেই সে হঠাৎ তন্দ্রা থেকে জেগে ওঠা মানুষের মত আমার হাত দু’টো চেপে ধরে বল্ল, “রেহনুমা, তুই আমাকে বাঁচা!” কোন সম্ভাষন নেই, পরিচিতি নেই … চেহারাটা কাছে থেকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, “রিমা না? কি রে তোর এই অবস্থা হয়েছে কি করে? কি হয়েছে তোর?” এই বান্ধবীকে আমি কোনদিন একটা চুল এদিক ওদিক হতে দেখিনি। ভীষণ রুচিশীল আর শৈল্পিক একটা মেয়ে ছিল সে। বিয়ে হয়েছিল আপন ফুপাত ভাইয়ের সাথে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সে ভালো আছে যেহেতু ফুপু নিজে ওকে চেয়ে নিয়েছিলেন। বিবাহিতা বান্ধবীদের সবার খোঁজখবর করা হত ওরা ভালো আছে কি’না, রিমার খোঁজ কোনদিন করা হয়নি। সে নিজেও সব বান্ধবীদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে কেউ ভাবেনি সে কষ্টে আছে। এখন ওকে দেখে ভীষণ অপরাধবোধ হতে লাগল। তাড়াতাড়ি ওকে বসালাম। ওর জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করলাম। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওর এই অবস্থা হোল কি করে।
রিমার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। সে যা বল্ল তার সারমর্ম হোল, বিয়ের পরদিন থেকেই ফুপু কেবল শ্বাশুড়ীই হয়ে গেলেন, যেই ফুপু ওকে এত আদর করতেন তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলনা। উনি উঠতে বসতে ওকে কথা শোনাতেন, জ্বালাতন করতেন, অন্য বৌকে ওর সামনে আদর করতেন আর ওদের সামনে ওকে হেয় করতেন। ও নিজেই বুঝে পেলনা ও কি অন্যায় করেছে। কিন্তু আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে মনে করে ও ওর বাবামা বা আর কোন আত্মীয় পরিজনকেই এ’কথা বলতে পারলনা। বান্ধবীরা শুনলে কি মনে করবে ভেবে সে আমাদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। একসময় ওর নিজের ওপরেই ঘৃনা চলে এলো, “আমি যদি এতি খারাপ হই তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কি?” স্বামীর কাছ থেকেও সে কোন সহযোগিতা পেলনা, পেল সহানুভূতি কিন্তু সেটা ওকে এই সার্বক্ষণিক মানসিক অত্যাচার থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখেনা। একসময় ও বুঝতে পারল ওর মধ্যে আরেকটি জীবনের অস্তিত্ব। এ’সময় মেয়েরা শারিরীক মানসিক উভয় দিক থেকে স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু অত্যাচার কমলোনা। এমতাবস্থায় সে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করতে শুরু করল। হঠাৎ একদিন পেপারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে ওর মনে হোল নিজের জন্য না হোক, ওর অনাগত সন্তানের জন্য ওকে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে হবে। তাই সে এসেছে আমার কাছে।
আমি তখন নিজেই লজ্জায় মারা যাচ্ছি যে এত কিছু হয়ে গেল অথচ আমরা কেউ ওর একটা খবর পর্যন্ত নিলাম না। জিজ্ঞেস করলাম আমি কিভাবে ওকে সাহায্য করতে পারি। ও বল্ল, “তুই যেভাবেই হোক আমার জন্য একটা চাকরীর ব্যাবস্থা কর। আমার পাগল হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে হবে। আমার যেকোন উসিলায় দিনের অন্তত কিছুটা সময় বাসার বাইরে থাকা দরকার। প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ আমি স্বাভাবিক লোকজনের সাথে মিশতে চাই, স্বাভাবিক কাকে বলে আমি ভুলেই গেছি”। ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, “তুই যেটা চাচ্ছিস সেটা যে আমার জন্য কত কঠিন ব্যাপার! দু’মাস পরে বাচ্চা হবে এমন কাউকে কোন প্রতিষ্ঠানেই নিতে চাইবেনা কারণ এর সাথে আছে ম্যাটার্নিটি লীভ, বেতন আর ঈদ বোনাসের ব্যাপার”। কিন্তু ওর চেহারা দেখে সাহস হোলনা ওকে ক’মাস পর আসতে বলি, হয়ত ততদিনে সে আত্মহত্যা করেই বসবে!
ওকে বসিয়ে রেখে ভেতরে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সবার সাথে কথা বললাম। সবার আগেই উঠে আসল ম্যাটার্নিটি লীভ, বেতন আর ঈদ বোনাসের ব্যাপারটা। চাকরীর দু’মাসের ভেতর যাকে এতসব সুবিধা দিতে হবে তাকে নেয়া আদৌ যৌক্তিক কি’না। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হোল আগে পরীক্ষা নিয়ে দেখা যাক আদৌ সে চাকরীর জন্য উপযুক্ত কি’না। ওকে তিনদিন পর পরীক্ষার জন্য আসতে বললাম প্রস্তুতি নিয়ে, পরিপাটি হয়ে।
আশা মানুষের মধ্যে কি অদ্ভুত পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে স্বচক্ষে দেখলাম তিনদিন পর। রিমাকে দেখে মনে হোল যেন আমাদের আগের সেই রিমা। সে পরীক্ষা দিল এমনভাবে যেন এর ওপর ওর জীবনমরণ নির্ভর করছে। লৈখিক পরীক্ষায় অসম্ভব ভালো করাতে প্রতিষ্ঠান ওকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকতে বাধ্য হোল। আমি ওকে বলে দিলাম যে এই ইন্টারভিউর ওপরেই নির্ভর করছে ওর চাকরী পাওয়া না পাওয়া- আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকব সুতরাং ওর উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু ইন্টারভিউ ভালো না হলে আমি বোর্ডে থেকেও ওকে কোন সাহায্য করতে পারবনা।
সে আমাকে নিরাশ করলনা। ইন্টারভিউতে সে বল্ল, “এই চাকরীটাই হবে আমার আসল জীবন, সুতরাং আমি যে সিন্সিয়ারলি কাজ করব এ’ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমি চেষ্টা করব ম্যাটার্নিটি লীভ সংক্ষিপ্ত করতে আর আমাকে এ’সময় বেতন বা ঈদ বোনাস না দিলেও আমার কোন সমস্যা নেই”। ওর চাকরী হয়ে গেল।
রিমা এত ভালো কাজ করতে লাগল যে অল্প দিনের মধ্যেই ওর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ওকে অনেক স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত মনে হতে লাগল। দিনের একটা সময় হাসিখুশী থাকায় এবং লোকজন ওকে অ্যাপ্রিশিয়েট করায়, বাসায় যেসব নেতিবাচক কথাবার্তা ওকে আগে কষ্ট দিত সেগুলো ওকে আর ওভাবে স্পর্শ করতে পারতনা। দু’মাস পর ওর একটা ফুটফুটে ছেলে হোল। সাতদিন পরই ও আবার ছেলে নিয়ে আসতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওকে মানা করা হোল, জানানো হোল ও তিনমাস থেকে চারমাস ছুটির হকদার। কিন্তু ও আমাকে ডেকে বল্ল, “তুই কি ভাবিস আমি তোদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাতদিনের মধ্যে চলে এসেছি? আমি বাসায় থাকলে মরে যাবো রে!”
আমার প্রথম সন্তান হবার পর আমাদের প্রতিষ্ঠানে বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। খুব বেশী কিছু না, একটা রুম, রুমজোড়া বিছানা আর বাচ্চা দেখার জন্য একজন মানুষ। খেলনা আর খাবার মায়েরা নিয়ে আসবে। আমার সন্তানের জন্য এইসব ব্যবস্থা আমিই করেছিলাম। আমার মেয়ে বড় হয়ে যাবার পর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই লোক রাখা হয়। তারপর থেকে মহিলা কর্মীরা তাদের শিশু সন্তানদের সাথে নিয়ে আসতে পারতেন। তাহলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেরাই সন্তানদের তদারক করতে পারতেন। এতে যেটা লাভ হয় তা হোল মায়েরা তাদের কাজের ব্যাপারে আরো আন্তরিক হয়ে যান এবং বাসায় ফেরার কোন তাড়া থাকেনা। রিমা এখানে বাচ্চা রাখতে শুরু করল আর ওর কাজ কমিয়ে দেয়া হোল যেন সে যথেষ্ট বিশ্রাম পায়।
দিনে দিনে ওর সুনাম আরো বাড়তে লাগল, ওর আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো, ওর স্বামী ওকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করল। ওদিকে ওর শ্বাশুড়ী যখন দেখলেন উনি ওকে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, উনি মরিয়া হয়ে উঠলেন যেন সে চাকরী ছেড়ে দেয়। আমরা সবাই ওকে পরামর্শ দিলাম ও যেন ভুলেও এই কথায় কান না দেয়। এদিকে ঝামেলা করে কোন ফলাফল হবেনা বুঝতে পারে উনি ছেলেকে চাপ দিতে শুরু করলেন, “আমি বাসায় থাকতে বৌ নাতি নিয়ে চাকরীতে যাবে কেন?” সাত মাসের সময়ই রিমার ছেলে একটু একটু হাঁটতে, কথা বলতে শুরু করেছিল। ন’মাসের সময় উনি সফল হলেন। রিমা ছেলেকে শ্বাশুড়ীর কাছে রেখে আসতে বাধ্য হোল।
একদিন বাসায় ফিরে রিমা একটু অবাক হোল। ওর ছেলে এত চঞ্চল প্রাণবন্ত, ঘরময় ঘুরে বেড়ায়, বকবক করে- সে কেন চুপচাপ শুয়ে আছে? হাত পায়ের পর্যন্ত কোন নড়াচড়া নেই! সেই ছেলে আর কোনদিনই নড়াচড়া করলোনা। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, বিদেশ নিয়ে গিয়েছে কিন্তু সবাই বল্ল ওর ব্রেনের ভেতরে কোন গুরুতর আঘাতে ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। অনেক পরে সে জানতে পেরেছিল যে ওর একবছরের শিশু ওর শ্বাশুড়ীর সামনেই কাজের মেয়ের হাত থেকে লাফ দিতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে নীচে পড়ে গেছিল। উনি যদি সাথে সাথে জানাতেন হয়ত কিছু করা গেলেও যেতে পারত। কিন্তু বাচ্চার জ্বর বা দুর্বলতা জাতীয় স্বাভাবিক কোন অসুখ ভেবে প্রায় দু’মাস অপেক্ষা করার পর যখন ওরা ডাক্তারের কাছে যায় তখন বাচ্চা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।
রিমাকে চাকরী ছেড়ে দিতে হোল। হয়ত অপরাধবোধ থেকেই ওর শ্বাশুড়ী ওকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। ওকে আলাদা বাসা নিতে হোল। তার কয়েকবছর পর উনি অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যান্য বৌরা শ্বাশুড়ীকে দেখাশোনা করতে অপারগতা প্রকাশ করল। ওনার ঠাঁই হোল এই রিমার বাসায়। ওর শ্বাশুড়ী আর ছেলে একই রুমে থাকত। ওনার ‘পাওয়ার প্লে’র সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারকে সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখতে ওনার কেমন লাগত জানিনা। তবে রিমা এই দুই রোগীকে নিয়ে কি আমানুষিক পরিশ্রম করেছে আমরা দেখেছি। ছেলে ততদিনে অনেক বড় হয়েছে, রিমার মতই বড়সড় গোছের। একবার ছেলেকে খাওয়ায় খাবার গ্রাইন্ড করে পাইপ দিয়ে, আবার শ্বাশুড়ীকে খাওয়ায়। একবার ছেলেকে কোলে করে বাথ্রুমে নিয়ে যায়, আবার শ্বাশুড়ীকে আলগে বাথ্রুমে নিয়ে যায়। এভাবে কয়েকবছর যাবার পর ওর শ্বাশুড়ী গ্রামে ঈদ করার শখ করলেন। এই অসুস্থ বাচ্চা শ্বাশুড়ী সব নিয়ে সে গ্রামের বাড়ী গেল বেশ কয়েকবার বাস নৌকা পরিবর্তন করে। ঈদের পরদিন উনি কোরবানীর গরুর নেহারী খেতে চাইলেন। রান্নার মধ্যখানেই রিমা শুনলো ওর শ্বাশুড়ীর শ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছে। সে তাড়াতাড়ি ওনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য নেহারীর ঝোল অল্প চামচে করে এনে খাওয়ালো। সে ফিরে আসার পর যখন ওর সাথে দেখা করতে গেলাম ও বারবার বলতে লাগল, “আহারে, নেহারীতে বাগাড় দেয়ার আগেই উনি মারা গেলেন। বাগাড় ছাড়া ঝোলই ওনাকে দিতে হোল”। আমি ওর দিকে হা করে চেয়ে রইলাম। যে ওকে এতটা কষ্ট দিয়েছে যে এত বিশাল শক্তপোক্ত একটা মেয়ে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে গেছিল, ওর প্রথম সন্তানকে পঙ্গু করে দিয়েছে চিরতরে, তার জন্য সে দুঃখ করছে, “বাগাড় ছাড়া ঝোল ওনাকে দিতে হোল”!
ক্যানাডা আসার আগে গেছিলাম ওর সাথে দেখা করতে। ওর ছেলেটাকে খাওয়ানোর পর ও একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল পরবর্তী সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে। ওদের পাঠিয়ে ছেলের রুমে গিয়ে দেখে ওর গাল বেয়ে যে লালা পড়েছে সেখানে অসংখ্য পিঁপড়া, পিঁপড়ের কামড়ে গাল লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে কিন্তু বেচারার হাত চলেনা যে সে পিঁপড়েগুলোকে সরিয়ে দেবে, কথা বলতে পারেনা যে মাকে ডেকে বলবে। ওর কথা শুনে দুঃখে আমার চোখ জ্বলতে লাগল। কি বলে সান্তনা দেব খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে রইলাম। কিন্তু রিমা নিজেই বল্ল, “জানিস, আমার এই ছেলে নিয়ে আমার অনেক দুঃখ। কিন্তু এর বিনিময়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি যা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি আগে কখনো নামাজ পড়িনি। কিন্তু আমার ছেলের এই অবস্থার পর থেকে আমি নামাজ পড়া শুরু করেছি আর ছাড়িনি। আল্লাহকে খুব কাছে মনে হয়। ওনার কাছে যখনই যা চাই তা পাই। আমি একসময় খুব উৎশৃংখল ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ভালো কোনটা খারাপ কোনটা বুঝি এবং খারাপের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখি। একসময় পর্দার ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা। এখন আমি পর্দা করে চলি। আগে পথের ধারে যেই শিশুগুলোর দিকে তাকিয়েও দেখতাম না তাদের জন্য এখন খুব মায়া লাগে, কিছু করতে ইচ্ছা করে। আমি নিজেই বুঝি যে আমি এখন কোন ব্যপারে কষ্ট পাইনা, কেউ আমাকে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা যদি আল্লাহ আমার সাথে থাকেন”। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম রিমার দিকে। আমার এই বান্ধবী একসময় বিশাল আকারের শক্তিশালী দেহের অধিকারী হয়েও কথার আঘাত সইতে না পেরে নিজেকে ধ্বংস করে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। আর আজ সে এত সহ্যাতীত দুঃখের ভেতরেও পাহাড়ের মত শান্ত অটল! বিশ্বাস বুঝি একেই বলে! ওকে দেখে আমার মনে হোল আমি এক বেহেস্তী নারীর দিকে তাকিয়ে আছি!
No comments:
Post a Comment