Wednesday, June 15, 2011

বিয়ে - ১

বরযাত্রীদের যাত্রাপথের দিকে চেয়ে আছে সায়মা। তাদের এখন আর দেখা যাচ্ছেনা কারণ রাস্তা থেকে ওদের উঠোনের প্রবেশপথের দু’ধারে অনেক বড় বড় গাছ বাড়ীগুলোকে যেমন রাস্তা থেকে আড়াল করে রাখে তেমনি রাস্তাটিকেও বাড়ী থেকে অদৃশ্য করে রাখে। এই উঠোনের চারপাশ ঘিরে ওদের বাপচাচাদের পাঁচভাইয়ের বসবাস ওর দাদার ভিটেয়।পাঁচভাই প্রচন্ড মেজাজী হলেও তাদের মধ্যকার প্রবল ভালোবাসার টান ওদের এই উঠোনটাকে ঘিরে তৈরী করেছে এক স্বর্গীয় সুখের পরিবেশ। মাচাচীদের মধ্যেও কোনদিন এই সদ্ভাবের ব্যাতিক্রম দেখা যায়নি। আগে দাদী এই সুসম্পর্ক বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে বড়চাচীই যেন পুরো পরিবারটাকে হাতের মুঠোয় একত্রিত করে ধরে রেখেছেন। অথচ উনি ভীষণ হাসিখুশী হাল্কা মেজাজের মানুষ। মায়ের কাছে সায়মা যে প্রশ্রয় পায়না তা সে পায় বড়চাচীর কাছে। বংশের বড় মেয়ে হবার দরুন পরিবারের সবার অনেকখানি আদরস্নেহ মায়ামমতা সে পেয়েছে উত্তরাধিকারসূত্রে। এক্ষেত্রে ওর একমাত্র প্রতিযোগী বড়চাচীর বড়ছেলে রিদওয়ান- ওকে কে যে বলেছে সায়মার আগে জন্মাতে! তবে স্বার্থ বাদ দিয়ে দেখলে বলতে হয় রিদওয়ান যে আদর পায় তা সে নিজগুণেই পায়। সে মোটেই বাপচাচাদের মত বদমেজাজী হয়নি বরং চাচীর মত হাসিখুশী আর দায়িত্বশীল হবার কারণে শুধু মুরুব্বীরাই নয় ওরা ভাইবোনেরাও ওর ওপর নির্ভর করে ভীষণভাবে। সে সবসময় ভাবে ওর বর যেন রিদওয়ানের মতই দায়িত্বশীল ভালোমানুষ হয়। কিন্তু বিয়ের কথা ভাবতে গেলেই ওর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। এই বাড়ীর আঙ্গিনা পেরিয়ে বাইরের যে পৃথিবী তাতে এত মায়া আর ভালোবাসা কোথায়? এই পরিচিত অঙ্গনের বাইরে তাকে এত আহ্লাদ আদর দেবে কে? তারপর সে হঠাৎ বাস্তবে ফিরে আসে। হাহ! বাপচাচা যেখানে বলবে সেখানে চোখমুখ বন্ধ করে বসে পড়ব বাবাজী! নিজে পছন্দ করতে গিয়ে কোন কাক বা পেঁচা ধরে নিয়ে আসি! এসব বাজে চিন্তায় মিছে সময় নষ্ট করার সময় নেই। বড়চাচী তাকে বিশ্বাস করে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। রিদওয়ানের বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়ীর সব পুরুষ আর কিছু মহিলা নোয়াখালি গেল। কিন্তু ওরা ফিরে আসবে আজ সন্ধ্যায় বা রাতেই। বড়চাচী তাঁর মেয়ে নাজিয়াকে রেখে গেছেন সায়মাকে পুরো ঘর, উঠোন সাজিয়ে বধুবরণের ব্যবস্থা করার জন্য- সাথে আরো কিছু পিচ্চিপাচা আর সদ্য মা হওয়া ছোটচাচী। সব করতে করতে সন্ধ্যা হয়েই যাবে। সুতরাং সায়মা আর সময় নষ্ট না করে নাজিয়াকে নিয়ে কাজে লেগে গেল।

হবু ভাবীর জন্য রুম সাজাতে সাজাতে সায়মা নাজিয়াকে বলল, “জানিস, ভাবীকে আমি দেখিওনি কিন্তু ওর জন্য আমার কি যে খারাপ লাগছে!”
নাজিয়া বলল, “কেন আপু? আমার ভাইয়া কি এত খারাপ যে ভাবীকে কষ্ট দেবে?”
সায়মা হেসে ফেলল, “ধ্যাৎ, আমি কি তাই বলেছি নাকি? বন্ধুকে বিয়ে করলে যেকোন মেয়েই সুখী হবে। কিন্তু চিন্তা কর মেয়েটা ওর বাবামা ভাইবোন সবাইকে ফেলে আমাদের বাড়ীতে চলে আসবে অথচ সে আমাদের কাউকে চেনেনা জানেনা …”
ছোটবেলায় সব বাচ্চারা যেমন করে থাকে, সায়মা রিদওয়ানকে নাম ধরে ডাকত, ভাইয়া ডাকতে বললে কিছুতেই রাজী হতনা। তাই দাদু বুদ্ধি করে শিখিয়ে দিয়েছিলেন ওকে ‘বন্ধু’ ডাকতে। এই স্বভাবটা ওর আর গেলনা।
নাজিয়া বলল, “আপু, তুমি খুব ভালো ননদ হবে”।
সায়মা অবাক হয়ে বলল, “কেন রে? কিসে তোর এই ধারণা হোল?”
নাজিয়া মিষ্টি হেসে বলল, “সবাই অন্যের মেয়ের কথা ভাবেনা, কিন্তু তুমি নতুন ভাবীর কাছে আমাদের আশাআকাংখার কথা না ভেবে ওর কষ্টের কথা ভাবছ। তুমি আমাদের সবার কথা ভাব, তাই বললাম”।
“বড় ভাইবোনরা সবসময় ছোটদের কথা ভাবে, ভাবতে হয়- বন্ধু তো আমার চেয়েও বেশী করে তোদের সবার জন্য!”
নাজিয়া মাথা দোলালো তারপর সেজচাচার মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে বারান্দা সাজাতে চলল।

পুরো বাড়ী সাজানো শেষ। মাগরিবের নামাজ পড়ে সায়মার মনে হোল হাতপা আর চলেনা। কিন্তু কবে আবার নতুন ভাবী চলে আসে এই টেনশনে সে বিশ্রামও নিতে পারছেনা।
নাজিয়া বলল, “আপু, বরযাত্রীরা কনেসহ ফিরে এলে তুমি আবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। এখন বাড়ী ঠান্ডা, তুমি আমার রুমে গিয়ে ঘুমাও। ওরা এলে আমি তোমাকে ডেকে দেব”।
বুদ্ধিটা সায়মার খুব পছন্দ হোল।

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অনেক শব্দ শুনে নাজিয়া ধরমর করে উঠে বসল কিন্তু ওর মাথা থেকে ঘুমটা কিছুতেই যেন তাড়াতে পারছেনা। ঢুলু ঢুলু চোখে দেখে মাচাচীরা সব এই রুমে- ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সবাই চলে এসেছে অথচ নাজিয়া ওকে ডাকেনি, কি রকম দায়িত্বহীন মনে করবে ওকে সবাই! সে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিল, সারাদিনের খাটুনীর পর সম্ভবত যতটুকু ঘুমিয়েছে তা যথেষ্ট হয়নি, শরীর কিছুতেই আড়মোড়া ভাঙ্গতে রাজী নয়। এর মধ্যেই হঠাৎ ওর মা একখানা সোনালী শাড়ী এনে বলল, “ধর, তাড়াতাড়ি এইটা পর”। এ’ কেমন আবদার! নতুন বৌ দেখার জন্য ওর শাড়ী পরতে হবে কেন?

চাচীরা সবাই হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেলেন। নাজিয়া রুমে ঢুকল। সে বেশ হাসিহাসি মুখ করে বলল, “দাঁড়াও, আমি তোমাকে সাহায্য করছি”। কিন্তু ওকে দেখে সায়মার মেজাজটা ভীষণ খারাপ হোল, “অ্যাই মেয়ে, তুই আমাকে ডাকিসনি কেন? কি মনে করছে সবাই? বড়চাচী আমাকে পুরো ঘরের দায়িত্ব দিয়ে গেল আর এসে দেখে আমি ঘুম!”
“কি করব বল, ওরা গেট দিয়ে ঢোকার আগে যে শোরগোল শুরু করল- হট্টগোলের মধ্যে তোমাকে ডাকার কথা ভুলেই গেছি!”
“কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম রে? আমার মাথাটাথা ভোঁ ভোঁ করছে। মনে হচ্ছে রোবট হয়ে গেছি”।
“বেশী না, হয়ত বিশমিনিট। জানো আপু, আজ তোমার বিয়ে!”
সায়মার ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গিয়ে বিস্ময় ছেয়ে গেল চেহারায় কারণ নাজিয়ার চেহারায় সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে ফাজলামী করছেনা। সে জানে এমন ঘটনা ওদের বাড়ীতে ঘটা অসম্ভব নয়। সে জানে কোন কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু ওর মাথাটা গরম হয়ে গেল। সব রিদওয়ানের দোষ! নিশ্চয়ই ওর বিয়েতে গিয়ে কাউকে পছন্দ হয়েছে চাচাদের! ঐ ছেলেই বা কেমন যে সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল? বিয়ে একসময় করতে হবে। করতে ওর আপত্তি নেই, কিন্তু তাই বলে ঘুম থেকে তুলে বিয়ে! নাজিয়া যেহেতু বাসায় ছিল সেও কোন তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারবেনা। অথচ ছাগলটা কি খুশী! পরিস্থিতি অন্যরকম হলে অবশ্য সেও খুব খুশী হত। একদিনে দু’দুটো ভাইবোনের বিয়ে কি আর সবসময় ঘটে! কিন্তু ওর কষ্ট লাগল নতুন ভাবীটার চেহারা দেখার আগেই তাকে এই প্রিয় পরিবেশ ছেড়ে এমন এক জায়গায় চলে যেতে হবে এমন একজনের হাত ধরে যার নামটা পর্যন্ত সে জানেনা!

কিছু বলার আগেই চাচীরা রুমে ঢকলেন গহনা আর ওড়না নিয়ে। এক এক চাচী এক এক দিকে কাজে লেগে গেলেন। কেউ কানের দুল পরাচ্ছেন, কেউ গলার হার, কেউ বা চুল বাঁধছেন। বড়চাচী বললেন, “মা, তোর বাপচাচাদের তো চিনিস। আমরা কত করে বললাম, আমরা সবাই খুশী এবং রাজী, এতবড় একটা ঝামেলার পর বিয়েটা অন্তত তিনদিন পরে হোক। কে শোনে কার কথা? সেজবৌ, কাজী সাহেব ওপরে চলে এলেন বলে। ওড়না আটকাতে না পারলে আপাতত হাত দিয়ে ধরে রাখো”। সাথে সাথে নাজিয়ার রুমের দরজায় ছোটচাচার গলা শোনা গেল, “কাজী সাহেব এসেছেন, ভেতরে আনব?”

সায়মার মনে হোল সে ঘুমের মধ্যে কোন স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্নে যেমন কেবল নড়াচড়া দেখা যায় শব্দ শোনা যায়না, তেমনি সে ইমাম সাহেবকে দেখতে পাচ্ছে, ওনার ঠোঁট দু’টোর নড়াচড়া দেখে বুঝতে পারছে উনি কিছু বলছেন, কিন্তু মাথার ভেতরে শোঁ শোঁ শব্দের জন্য কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। কাজী সাহেবের কোন প্রশ্নের কোন জবাব সে দিতে পারলোনা। শেষে মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বাবা, বড়চাচা, ছোটচাচা আর কাজী সাহেব চলে গেলেন।

চাচীরা সবাই তাকে আরেক রুমে নিয়ে গেল, একটু পরে বর আসবে তাই। হঠাৎ সে বুঝতে পারল এতক্ষণ সে ঘোরের মধ্যে টের পায়নি- সে এখন বিবাহিত! একটু পরে একজন অপরিচিত লোকের সাথে ওর দেখা হবে যার সাথে বাকী জীবন তাকে কাটাতে হবে। লোকটার নাম কি, বাস কোথায়, তার পরিবারে কে কে আছে, লোকটার স্বভাব কেমন, সে দেখতে কেমন- কিছুই সে জানেনা!

খানিক পর রিদওয়ান রুমে এসে ঢুকল। নাজিয়ার ওকে দেখে খেয়াল হোল, “কি রে! এ তো রিদওয়ানের জন্য সাজানো রুম! কিন্তু সায়মাকে এই রুম দেয়া হলে নতুন বৌকে তবে কোথায় দেয়া হোল?” সে রিদওয়ানকে বলল, “বন্ধু, তুমি ভুল রুমে এসেছ। তবে আমি জানিনা ভাবীকে কোন রুমে দেয়া হয়েছে। দেখ তোমার জন্য আমার কি অবস্থা! তোমার বিয়েতে গিয়ে চাচাদের কাকে না কাকে পছন্দ হয়েছে আর আমাকে ঘুম থেকে তুলে বিয়ে দিয়ে দিল!”
রিদওয়ান নির্লিপ্তভাবে বলল, “তাই?”
ওর রি-অ্যাকশনের অভাব দেখে সায়মার মাথায় রাগ চড়ে গেল, “আমি ভাবলাম তুমি আমাকে সহানুভূতি জানাতে এসেছ। তোমার যদি কোন মাথাব্যাথা না থাকে তাহলে বৌয়ের কাছে যাও। আমার বর যেকোন সময় এসে পড়বে, তাকেই বলব এসব কথা”।
রিদওয়ান তখন হেসে বলল, “বরের সাথে কথা বলার জন্য এত উতলা! আগে আমার কথা শোন। আমার বিয়েতে কি হয়েছে তুই তো জানিস না”।
সায়মা ক্ষেপে গিয়ে বলল, “তোমার বৌয়ের সাথে ঝামেলা করতে না পারার জন্যই তো ভাবীর চেহারা পর্যন্ত দেখার আগে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে। বিয়েতে তো যেতে পারলামই না, সারাদিন খেটেখুটে বিয়ের খাবার পর্যন্ত পেলাম না! শুকনা গল্প বলে এখন কি হবে?”
রিদওয়ান বলল, “তোর শ্বশুরবাড়ীর কারো সাথে দেখাসাক্ষাৎ বা কথা হয়েছে?”
সায়মার এতক্ষণে মনে হোল, “তাই তো, ওদের বাড়ী থেকে কি কোন মহিলা আসেননি?” সে আনমনে বলল, “না বন্ধু, সব তো আমাদের বাড়ীর লোক”। তাহলে কি তারা এই বিয়েতে খুশী নয়? ব্যাপারটা তাকে খুব চিন্তায় ফেলে দিল।
সায়মার নিরবতার সুযোগে রিদওয়ান ওর বিয়ের কাহিনী বলতে শুরু করল, “তুই তো জানিস আমার একটা মেয়েকে পছন্দ ছিল কিন্তু বলতে পারিনি। মেয়েটা খুব ভালো যদিও একটু বদরাগী। ওকে বিয়ে করতে না পারলে শুধু শুধু জানিয়ে মনে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? আজ বিয়েতে যেতে যেতে ভাবছিলাম, ‘আল্লাহ, কিছু একটা কর’। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট, ট্রেন মিস মায় লেট পর্যন্ত হোলনা। বিয়েবাড়ীতে পৌঁছুলে দেখি লোকজনের চোখমুখ বেজাড়। বলল, ওদের মেয়ের জন্য আমি উপযুক্ত পাত্র নই”।
সায়মা তো ভীষণ অবাক! নিজের দুঃখের কথা ভুলে গিয়ে সে বলল, “বন্ধু, তোমার ব্যাপারে এ’কথা ওরা কি করে বলল? এটা বাজে কথা। তোমার চেয়ে ভালো পাত্র হতেই পারেনা! কিন্তু তাহলে ওরা রাজী হয়েছিলেন কেন?”
রিদওয়ান বলল, “আরে বাবা! আগে গল্পটা তো বলে শেষ করতে দে! প্রথমে ভাবলাম, যা বলে বলুক, বিয়ে যেহেতু হচ্ছেনা, আমার একটা চান্স আছে। কিন্তু তুই তো জানিস আমাদের বাপচাচারা কি পরিমাণ বদরাগী। বিয়ের আসরে বাবা চিৎকার করে বলে ফেলল, ‘আমি যদি আজই আমার ছেলের বিয়ে না দিয়েছি তাহলে আমার নাম পরিবর্তন করে ফেলব!’ ব্যাস, আর পায় কে? সাথে সাথে অ্যাবাউট টার্ন। ট্রেনে বসেই পাত্রী সাব্যস্ত!”
সায়মা চোখ গোল গোল করে বলল, “তার মানে এই সময়ের মধ্যে ওরা তোমার আমার দু’জনের জন্যই পাত্র পাত্রী ঠিক করে ফেলেছে? আমি জানতাম সব তোমার দোষ! তোমার জন্যই আমাকে এইভাবে বিয়ে করতে হোল”।
রিদওয়ান মুখ গম্ভীর করে বল, “ঠিক বলেছিস। তোর কথা জানিনা, তবে আমি খুশী। যেভাবেই হোক, আমি আমার পছন্দের মেয়েটিকে পেয়েছি।“
সায়মা বলল, “তাই? অন্তত আমাদের একজন তো খুশী! তা মেয়েটি কে এবার তো বলতে পারো”।
রিদওয়ান বল, “আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে!”
“ফাজলামী রাখো তো”, রেগে গেল সায়মা, “ভাবী কোথায়? চল দেখে আসি”।
রিদওয়ান বলল, “কোথাও যেতে হবেনা, সে এখানেই আছে”।
সায়মা অনেকক্ষণ বুঝে পেলনা এ’ কেমন ধাঁধাঁ। তারপর হঠাৎ যেন সব দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেল- কেন তাকে ঘুম থেকে তুলে বিয়ে দিয়ে দেয়া হোল, কেন নিজেদের লোকজন ছাড়া আর কাউকে বিয়েতে দেখেনি, কেন বাড়ীর লোকজন এত হুলস্থুলের মধ্যেও এত খুশী, কেন তাকে এই রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে, কেন তাকে আর কোনদিন আপনজনদের সান্নিধ্য ছেড়ে যেতে হবেনা! ওর মুখে এত বেশী অনুভূতি এত দ্রুত বদলাতে লাগল যে সে নিজেই বুঝে পেলনা কোথায় মুখ লুকাবে।
রিদওয়ান বলল, “আরেকটা কথা, তুই তো আবার মানুষের চিন্তায় অস্থির হয়ে যাস তাই বলি- যে মেয়েটাকে আমার জন্য ঠিক করা হয়েছিল তার অন্য জায়গায় পছন্দ ছিল, সে বিয়ে করবেনা বলে বেঁকে বসলে ওর পরিবারের লোকজন জনসমক্ষে আত্মসম্মান রক্ষা করার জন্যই মেয়ের নারাজীর কথা না বলে পাত্র উপযুক্ত নয় বলেছে। সুতরাং, আমার জন্য না হলেও ওর জন্য তুই খুশী হতে পারিস। তবে আমাকে যে তুই পাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ মনে করিস না এটা জানতে পেরে আশ্বস্ত হলাম। অনেক ধকল গেছে রে আজ। তোর সাথে কথা বলার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। এবার বকবক থামা। আমাকে একটু ঘুমোতে দে!”

No comments:

Post a Comment