স্বভাবগতভাবে আমি খানিকটা অসামাজিক। তাই, সচরাচর বিয়ে বা দাওয়াতে যেতে পছন্দ করিনা। যেকোন public gatheringয়ে কেমন যেন একটা কৃত্রিমতা থাকে যেটা সহ্য করতে পারিনা। সেজন্যই হয়ত যাওয়ামাত্র মনে হয় আমার মহামূল্যবান সময়টা নষ্ট হোল যেটা আর আমি কোনদিন ফিরিয়ে আনতে পারবনা। এই সময়ে আমি হয়ত একটা বই পড়তে পারতাম বা ইন্টারনেট ঘেঁটে আবিস্কার করে ফেলতে পারতাম কোন মহামূল্যবান্ তথ্য অথবা আমার ছেলেমেয়ের সাথে গল্পের ছলে তাদের শেখাতে পারতাম কিছু।
সেদিন বহুদিন পর একটা দাওয়াতে গেলাম। দাওয়াতদাতাদের খুব পছন্দ করি বলেই যাওয়া। পৌঁছেই বুঝলাম ভুল করেছি। দেবীদের সারি আর শাড়ি, রঙ আর গহনা, শাড়ি চুরি আর পরচর্চার আলাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত। যতটুকু না থাকলেই নয় কোনক্রমে ততটুকু সময় কাটিয়ে পালিয়ে এলাম। তাঁরা অহংকারী ভাবলেন হয়ত। তবুও পারলাম না এই বেকার সময় নষ্ট করার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। বাসায় ফিরতে ফিরতে মেঘলা দিনের আকাশ দেখে মন হারিয়ে গেল IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের সেই স্বপ্নময় অঙ্গনে যেখানে অনেকজন সমমনস্ক মহিলার সমাবেশ ঘটেছিল।
আমাদের ইংরেজী ডিপার্টমেন্টে ছিলেন সালমা আপা, সানজিদা, সুমাইয়া, আমি। সানজিদা অবশ্য সুমাইয়া আসার আগেই চলে যান। পরবর্তীতে আমাদের ছাত্রীদের মধ্যে দু’তিনজন যোগ দেয় তবে তাদের আমি খুব বেশিদিন পাইনি। বিবিএ ডিপার্টমেন্টে ছিলেন নাজনীন ও সালমা আপা। আরো ছিল সেহেলী আর তাবাসসুম কিন্তু ওরা আমাদের অনেক ছোট। কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে ছিল আকলিমা আর আফরোজা। পরে যোগ দেয় ফারহানা। অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ছিলেন হুসনা আপা আর ফারহানা। অ্যাকাউন্টসে ফাহমিদা। পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্টেন্ট হয়ে আসে শাকিলা। লাইব্রেরীতে ছিলেন তাওহিদা আপা। এই নিয়ে ছিল আমাদের IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের ছোট্ট পরিবার যা আজ কলেবরে বেড়েছে অনেকগুণ কিন্তু শুনেছি সেই সখ্য আর নেই।
আমরা একসাথে বসলে মনে হত ঐ ছোট্ট রুমে পৃথিবীর তাবৎ তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে, যেকোন একজায়গায় বসে পড়লেই জানা যাবে অনেক কিছু। কেউ ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে গবেষনা করছে, কেউ ইকনমিক্সের জটিল তত্ত্ব নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, কেউ বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বোঝাচ্ছে অন্যদের; কেউ দেশবিদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলাপ ফেঁদে বসেছে; কোথাও আলাপ হচ্ছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র বা গান নিয়ে; কেউ ইংরেজী vocabulary বর্ধিত করতে ব্যাস্ত আর কেউ বাচ্চা মানুষ করার ব্যাপারে পরামর্শ করছে; কেউ হাসিতামাশা করছে আর কেউ বা এই সুযোগে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছে, “বাহ, তোমার জামাটা তো ভারী সুন্দর! আবার গেলে আমার জন্য একটা নিয়ে এসো, আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি’!
আমাদের যেকোন একজনের অসুস্থতায়, প্রমোশনে, বিয়েতে বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমরা ছুটে যেতাম সদলবলে। অনেক কাছের লোকজনের অনুষ্ঠানে যাবার চেয়ে এখানে যাওয়া ছিল আমাদের অনেক প্রিয়। প্রথমত ছিল অন্তরের টান যেটা সৃষ্টি হয়েছিল জ্ঞানপিপাসার common aspirationকে কেন্দ্র করে, দ্বিতীয়ত আমরা একজন আরেকজনকে যেভাবে বুঝতাম তা হয়ত আর কেউ বুঝতনা। মন ছুটলে হঠাৎ করেই সদলবলে সবাই চলে যেতাম কোন রেস্টুরেন্টে অথবা ট্যাক্সি চেপে কোন গ্রামেগঞ্জে আমাদের পিয়নের বিয়ে খেতে! পথেঘাটে দাওয়াতে অনুষ্ঠানে কোথাও আমাদের কথা থেমে থাকতনা। কথার ক্ষেত্রের বিস্তৃতিই হয়ত এর কারণ, আরেকটা কারন হোল আমরা জানতাম যাদের সাথে কথা বলছি তারাও এই বিষয়ে আগ্রহী সুতরাং নিজেকে স্বাধীনতা দেয়ায় কোন সমস্যা নেই। প্রচন্ড গরমের দিনে কথা বলতে বলতে আমরা গরমের কথা ভুলে যেতাম, বৃষ্টির দিনে জামা ভিজে গেলেও মন থাকত চনমনে।
একবার সবাই কক্সবাজার গেলাম ট্রেনিং ক্যাম্পে, সাথে বাচ্চাকাচ্চা আর তাদের কেয়ারটেকার। সেবার ঢাকা ক্যাম্পাসের সহকর্মীরাও যোগ দিলেন আমাদের সাথে। সেবারই প্রথম তাঁদের সাথে দেখা কিন্তু মনে হয় যেন কত বছরের সখ্য! রাতে উঠে সবাই মিলে তাহাজ্জুদ পড়া, কেউ কেউ গরম গরম চা বানিয়ে রাতজাগা বোনদের সেবা করে সওয়াব সংগ্রহ করে নিচ্ছে। তারপর ভোর পর্যন্ত শুদ্ধভাবে কুর’আন পড়ার চেষ্টা, একেকজনের ভুল তেলাওয়াত শুনে অন্যরা সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে কিন্তু কেউ লজ্জাও পাচ্ছেনা মনও খারাপ করছেনা। আমাদের এই হাসির ছটার সাথে তাল মিলিয়ে হোটেলের পেছনে পাহাড়ের ওপর থেকে সূর্য তার সোনালী আভা ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে রাত কেটে দিন শুরু হোল। সবাই রুমে গিয়ে বাচ্চাদের তুলে হোটেলের সামনে সমুদ্রসৈকতে ছুট। সমুদ্রের সৌন্দর্য আর মুক্ত হাওয়া পান করে ফিরে এসে আমরা শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট হয়ে বসে পড়তাম আলোচনা অনুষ্ঠানে। আপাত শান্তশিষ্ট একদঙ্গল মহিলার চোখেচোখে যে কত আলাপ হয়ে যেত তা যদি কর্তৃপক্ষ জানতেন তাহলে নির্ঘাত কপাল চাপড়াতেন! বড় হয়েও ফাঁকি মারার, দুষ্টুমী করার মজাটা যে কি দারুণ, যারা অতিরিক্ত sincere তাঁদের কি বোঝাব?! ক্যাম্পের তৃতীয় দিন সবাই বাজারে ঘুরতে গেছিল। আমাদের দু’টি করে বাচ্চা, সাথে কেয়ারটেকার তাই সালমা আপা আর আমি যাইনি। বাচ্চাদের সময় দিচ্ছিলাম এই সুযোগে। সন্ধ্যার দিকে অন্যরা পাগলের মত ফোন করতে শুরু করল, ‘আপা, হোটেলের পেছনে আগুন লেগেছে। আমরা সামনে আছি, আপনারা তাড়াতাড়ি নেমে আসেন, আমরা অপেক্ষা করছি’। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ভাবছিলাম আমার নিজের বোন থাকলেও আমার জন্য এত অস্থির হত কি’না!
এই ক্যাম্পের ফলাফলে আমরা চট্টগ্রাম ফিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেই সবাই শুদ্ধভাবে কুর’আন পড়তে শিখব। শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সদলবলে সবার কুর’আন শেখা হয়ে যায় একমাসেই যা একজীবনেও উদ্যোগ নিয়ে শেখা হয়নি কারো। সাথে সাথে চালু করা হয় সাপ্তাহিক বৈঠক যেখানে formally একজন কুর’আনের কিছু অংশ পড়ে বিশ্লেষণ করতেন আরেকজন recently পড়া একটা বই নিয়ে আলাপ করতেন। এভাবে আমাদের অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায় যা হয়ত অন্যথায় সময় করে শেখা হত না। এর বাইরে প্রতিদিনই লাঞ্চের সময় কেউ না কেউ কুর’আনের কিছু অংশ পড়ে অন্যদের সাথে শেয়ার করত, লাঞ্চও শেয়ার হত বিধায় সাধারণত এইসময় উপস্থিত থাকত শিক্ষক, অ্যাডমিন, লাইব্রেরিয়ান এবং পিয়ন সবাই। একবার আমি একটি অংশ পড়ে কুর’আন রেখে দিলাম, কাউকে কিছু বললাম না। সবাই উৎসুক হয়ে বলল, ‘আপা, কি পড়লেন বললেন না তো!’ অগত্যা জানালাম, ‘আল্লাহ বলেছেন দুনিয়াতে আমাদের যে স্বামী বা স্ত্রী থাকবে আখিরাতেও তার সাথে থাকা যাবে’। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল ফিরিস্তি। একজন পিয়ন এসে বলল, ‘ম্যাডাম, আমার স্বামী আমার সমস্ত টাকাপয়সা নিয়ে ফেলে। গতবার রাগ করে বেতনের টাকা আমার মা’র কাছে রেখে দিয়েছিলাম। জানতে পেরে সে আমাকে চুল ধরে যে ছুঁড়ে মারল, কোথায় পড়লাম কতক্ষণ বেহুঁশ ছিলাম বলতে পারবনা। মরার পরেও যদি তার থেকে মুক্তি না পাই…’ ওর কথার মাঝখানেই আরেকজন শুরু করল, ‘আপা, আমার স্বামী আমাকে তিনবাচ্চাসহ ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়, সে বেঁচে আছে না মরে গেছে বিয়ে করেছে না কি আমি কিছুই জানিনা, আমি কি আবার ওর পাল্লায় পড়ি…’ বহুকষ্টে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে এই ধরণের স্বামীগুলোকে আগে তো বেহেস্তে যাবার উপযুক্ততা অর্জন করতে হবে, তারপর না ওদের সাথে থাকার প্রশ্ন! তখন সবাই খুশী!!
বছরে দু’বার আমরা দলবেঁধে বাজারে যেতাম IIUCর নবাগত ছাত্রীদের জন্য উপহার কিনতে। শ’দুইশ উপহার কিনতে কিনতে ফাঁকে ফাঁকে হয়ে যেত আমাদের নিজেদের কেনাকাটাও, অবশ্যই আলাদা রশিদে। তাছাড়া ছিল কারো কোন অনুষ্ঠানে, কারো বাচ্চা হলে উপহার কেনা অথবা ব্যাক্তিগত কেনাকাটা। একসাথে থাকতে থাকতে আমরা সবাই সবার রুচিপছন্দ ভালোভাবে বুঝতাম। তাই যখনই কারো কিছু কিনতে হত সবাই দঙ্গল বেঁধে বাজারে যেতাম যাতে একেকজন একেক আইটেম দেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সবার বাজার সেরে ফেলা যায়। সবাই সবার পরিচিত দোকানে নিয়ে যেতাম বান্ধবীদের যাতে অল্প দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। আর দোকানদারদের ভাবুন তো, সেদিনই ঈদ!
এভাবে জমে আছে আরো অনেক স্মৃতি। দু’টো সময়ের কথা খুব মনে পড়ে। যখন আমার দ্বিতীয় সন্তান হবে, IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের দারোয়ান থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই যে আমার জন্য কিছু না কিছু করেনি। পিয়ন শাহীন ওর মায়ের হাতের পিঠা নিয়ে এসেছিল। আমি চট্টগ্রামের মেয়ে, বিয়ে হয়েছে বরিশালে তাই পিয়ন নাজমুন আমাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্টাইলে শুটকী রান্না করে খাওয়ালো। অ্যাডমিন ফারহানা আর ফাহমিদা প্রতিদিন মজার মজার তরকারী করে এক্সট্রা ভাত নিয়ে আসত যাতে আমি তাদের সাথে খেতে পারি। ফারহানার আম্মা বরই আচার বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন আমার জন্য, কতদিন যে ভাত খেয়েছি এই আচার দিয়ে! ফাহমিদা শুধু আমাকে খাওয়ায় বলে নালিশ আসায় বেচারী একদিন ক্যাম্পাসের সবার জন্য রান্না করে নিয়ে এসে এক হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিল! এই সময়টা আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ছিল বলে প্রায়ই সালমা আপার সামনেই পা তুলে বসে থাকতাম কিন্তু উনি কখনো মাইন্ড করেননি। বরং আমি অ্যাডমিশন টেস্টের খাতা কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বেচারী আমার ভাগের খাতাও কিছু কেটে দিতেন। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত কাজ করেছে সুমাইয়া আপা। জোর পূর্বক বাস থেকে, ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে হলেও রিহামের জন্ম পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন উনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েছেন, আবার চিন্তা করব দেখে রাদিয়াকে স্কুল থেকে তুলে সাথে নিয়ে নিয়েছেন। ডাক্তারের কাছে আনানেয়া করেছেন যেন আমি একা না যাই। প্রায়ই বাইরে কিছু না কিছু খেতে নিয়ে যেতেন, আমরা দু’জনেই বাইরে বড় হওয়ায় আমাদের খাবারের রুচিপছদ একরকম যা অ্ন্যরা হয়ত মুখেও দেয়ার উপযুক্ত মনে করবে না। আমার যত প্রয়োজনীয় কেনাকাটা উনি সাথে নিয়ে করে বাসায় পৌঁছে দিতেন- মাসের পর মাস! এই ঋণ কি দিয়ে শোধ করা সম্ভব?!
যখন ক্যানাডায় চলে আসা সাব্যাস্ত হয় তখন ফিমেল ক্যাম্পাস থেকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয় চারবার! প্রতিবার ভাবি এবার হয়ত ওরা আর আমার চেহারা দেখতে চায়না, আবার হুসনা আপার টেলিফোন, ‘আপা, চলে আসেন!’ সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল যেবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয়। আটবছরে আমি যাদের পড়িয়েছি, অনার্স থেকে মাস্টার্স, ইংরেজী থেকে এমবিএ সকল ব্যাচের যাকে যেভাবে খবর দেয়া গেছে সবাই এসেছে। প্রত্যেক ছাত্রীর সাথে আমার কত স্মৃতি! এদের কারো সাথে স্টাডি ট্যুরে গেছি সিলেট বা অন্যত্র; কাউকে ফুলটাইম বা কাউকে কেবল এক সেমেস্টার পড়িয়েছি, এমন ছাত্রীও এসেছিল যাকে কখনো পড়াইনি; কাউকে হয়ত কখনো বকা দিয়েছি, কাউকে পরামর্শ দিয়েছি, কাউকে সাহায্য করেছি কাউকে দিয়েছি সান্তনা; কারো কাছে শিখেছি অনেক কিছু আর কাউকে হয়ত দিতে পারিনি কিছুই। অনেকের কাছেই RBA নামটা ছিল ভয় পাবার মত, শিক্ষকরা অক্ষরগুলোকে উলটে RAB বলে ভয় দেখাতেন ছাত্রীদের। কিন্তু আমি চলে যাব বলে সেই ছাত্রীদের কারো কান্না আর কারো প্রচন্ড রাগ দেখে মনে হোল কিছ হয়ত করতে পেরেছি। অনেকেই উপহার দিয়েছে অনেক কিছু। সবই আমার প্রিয়। কিন্তু দু’টো উপহার মনে গেঁথে গেছে। একটি সেমেস্টারের ছাত্রীরা একটা অটোগ্রাফবুক উপহার দিয়েছিল ওদের সবার মনের কথা লিখে। প্রতিটি পাতায় যেন ভালোবাসা উপচে পড়ছে। আরেক ছাত্রী হঠাৎ ওর ওড়না থেকে broochটা খুলে আমার ওড়নায় পিন করে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, ‘ওটা ওখানেই ভালো মানাচ্ছে’!
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সালমা আপা। ছাত্রী শিক্ষক এবং অ্যাডমিন সহকর্মীদের বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে বলতে থাকেন আমাদের একসাথে আটবছর কাটানোর নানান রংবেরং-এর কাহিনী। চোখবুলিয়ে দেখি শিক্ষকদের মাঝেও আমার অনেক ছাত্রী যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেছে। ওদের ভালোবাসাস্নিগ্ধ মুখচ্ছবি দেখে মনে হোল এক জীবনে এতগুলো উদার মানুষের সাক্ষাত পাওয়া, ভালোবাসা পাওয়া কয়জনের ভাগ্যে জোটে?
সেদিন বহুদিন পর একটা দাওয়াতে গেলাম। দাওয়াতদাতাদের খুব পছন্দ করি বলেই যাওয়া। পৌঁছেই বুঝলাম ভুল করেছি। দেবীদের সারি আর শাড়ি, রঙ আর গহনা, শাড়ি চুরি আর পরচর্চার আলাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত। যতটুকু না থাকলেই নয় কোনক্রমে ততটুকু সময় কাটিয়ে পালিয়ে এলাম। তাঁরা অহংকারী ভাবলেন হয়ত। তবুও পারলাম না এই বেকার সময় নষ্ট করার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। বাসায় ফিরতে ফিরতে মেঘলা দিনের আকাশ দেখে মন হারিয়ে গেল IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের সেই স্বপ্নময় অঙ্গনে যেখানে অনেকজন সমমনস্ক মহিলার সমাবেশ ঘটেছিল।
আমাদের ইংরেজী ডিপার্টমেন্টে ছিলেন সালমা আপা, সানজিদা, সুমাইয়া, আমি। সানজিদা অবশ্য সুমাইয়া আসার আগেই চলে যান। পরবর্তীতে আমাদের ছাত্রীদের মধ্যে দু’তিনজন যোগ দেয় তবে তাদের আমি খুব বেশিদিন পাইনি। বিবিএ ডিপার্টমেন্টে ছিলেন নাজনীন ও সালমা আপা। আরো ছিল সেহেলী আর তাবাসসুম কিন্তু ওরা আমাদের অনেক ছোট। কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে ছিল আকলিমা আর আফরোজা। পরে যোগ দেয় ফারহানা। অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ছিলেন হুসনা আপা আর ফারহানা। অ্যাকাউন্টসে ফাহমিদা। পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্টেন্ট হয়ে আসে শাকিলা। লাইব্রেরীতে ছিলেন তাওহিদা আপা। এই নিয়ে ছিল আমাদের IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের ছোট্ট পরিবার যা আজ কলেবরে বেড়েছে অনেকগুণ কিন্তু শুনেছি সেই সখ্য আর নেই।
আমরা একসাথে বসলে মনে হত ঐ ছোট্ট রুমে পৃথিবীর তাবৎ তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে, যেকোন একজায়গায় বসে পড়লেই জানা যাবে অনেক কিছু। কেউ ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে গবেষনা করছে, কেউ ইকনমিক্সের জটিল তত্ত্ব নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, কেউ বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বোঝাচ্ছে অন্যদের; কেউ দেশবিদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলাপ ফেঁদে বসেছে; কোথাও আলাপ হচ্ছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র বা গান নিয়ে; কেউ ইংরেজী vocabulary বর্ধিত করতে ব্যাস্ত আর কেউ বাচ্চা মানুষ করার ব্যাপারে পরামর্শ করছে; কেউ হাসিতামাশা করছে আর কেউ বা এই সুযোগে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছে, “বাহ, তোমার জামাটা তো ভারী সুন্দর! আবার গেলে আমার জন্য একটা নিয়ে এসো, আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি’!
আমাদের যেকোন একজনের অসুস্থতায়, প্রমোশনে, বিয়েতে বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমরা ছুটে যেতাম সদলবলে। অনেক কাছের লোকজনের অনুষ্ঠানে যাবার চেয়ে এখানে যাওয়া ছিল আমাদের অনেক প্রিয়। প্রথমত ছিল অন্তরের টান যেটা সৃষ্টি হয়েছিল জ্ঞানপিপাসার common aspirationকে কেন্দ্র করে, দ্বিতীয়ত আমরা একজন আরেকজনকে যেভাবে বুঝতাম তা হয়ত আর কেউ বুঝতনা। মন ছুটলে হঠাৎ করেই সদলবলে সবাই চলে যেতাম কোন রেস্টুরেন্টে অথবা ট্যাক্সি চেপে কোন গ্রামেগঞ্জে আমাদের পিয়নের বিয়ে খেতে! পথেঘাটে দাওয়াতে অনুষ্ঠানে কোথাও আমাদের কথা থেমে থাকতনা। কথার ক্ষেত্রের বিস্তৃতিই হয়ত এর কারণ, আরেকটা কারন হোল আমরা জানতাম যাদের সাথে কথা বলছি তারাও এই বিষয়ে আগ্রহী সুতরাং নিজেকে স্বাধীনতা দেয়ায় কোন সমস্যা নেই। প্রচন্ড গরমের দিনে কথা বলতে বলতে আমরা গরমের কথা ভুলে যেতাম, বৃষ্টির দিনে জামা ভিজে গেলেও মন থাকত চনমনে।
একবার সবাই কক্সবাজার গেলাম ট্রেনিং ক্যাম্পে, সাথে বাচ্চাকাচ্চা আর তাদের কেয়ারটেকার। সেবার ঢাকা ক্যাম্পাসের সহকর্মীরাও যোগ দিলেন আমাদের সাথে। সেবারই প্রথম তাঁদের সাথে দেখা কিন্তু মনে হয় যেন কত বছরের সখ্য! রাতে উঠে সবাই মিলে তাহাজ্জুদ পড়া, কেউ কেউ গরম গরম চা বানিয়ে রাতজাগা বোনদের সেবা করে সওয়াব সংগ্রহ করে নিচ্ছে। তারপর ভোর পর্যন্ত শুদ্ধভাবে কুর’আন পড়ার চেষ্টা, একেকজনের ভুল তেলাওয়াত শুনে অন্যরা সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে কিন্তু কেউ লজ্জাও পাচ্ছেনা মনও খারাপ করছেনা। আমাদের এই হাসির ছটার সাথে তাল মিলিয়ে হোটেলের পেছনে পাহাড়ের ওপর থেকে সূর্য তার সোনালী আভা ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে রাত কেটে দিন শুরু হোল। সবাই রুমে গিয়ে বাচ্চাদের তুলে হোটেলের সামনে সমুদ্রসৈকতে ছুট। সমুদ্রের সৌন্দর্য আর মুক্ত হাওয়া পান করে ফিরে এসে আমরা শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট হয়ে বসে পড়তাম আলোচনা অনুষ্ঠানে। আপাত শান্তশিষ্ট একদঙ্গল মহিলার চোখেচোখে যে কত আলাপ হয়ে যেত তা যদি কর্তৃপক্ষ জানতেন তাহলে নির্ঘাত কপাল চাপড়াতেন! বড় হয়েও ফাঁকি মারার, দুষ্টুমী করার মজাটা যে কি দারুণ, যারা অতিরিক্ত sincere তাঁদের কি বোঝাব?! ক্যাম্পের তৃতীয় দিন সবাই বাজারে ঘুরতে গেছিল। আমাদের দু’টি করে বাচ্চা, সাথে কেয়ারটেকার তাই সালমা আপা আর আমি যাইনি। বাচ্চাদের সময় দিচ্ছিলাম এই সুযোগে। সন্ধ্যার দিকে অন্যরা পাগলের মত ফোন করতে শুরু করল, ‘আপা, হোটেলের পেছনে আগুন লেগেছে। আমরা সামনে আছি, আপনারা তাড়াতাড়ি নেমে আসেন, আমরা অপেক্ষা করছি’। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ভাবছিলাম আমার নিজের বোন থাকলেও আমার জন্য এত অস্থির হত কি’না!
এই ক্যাম্পের ফলাফলে আমরা চট্টগ্রাম ফিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেই সবাই শুদ্ধভাবে কুর’আন পড়তে শিখব। শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সদলবলে সবার কুর’আন শেখা হয়ে যায় একমাসেই যা একজীবনেও উদ্যোগ নিয়ে শেখা হয়নি কারো। সাথে সাথে চালু করা হয় সাপ্তাহিক বৈঠক যেখানে formally একজন কুর’আনের কিছু অংশ পড়ে বিশ্লেষণ করতেন আরেকজন recently পড়া একটা বই নিয়ে আলাপ করতেন। এভাবে আমাদের অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায় যা হয়ত অন্যথায় সময় করে শেখা হত না। এর বাইরে প্রতিদিনই লাঞ্চের সময় কেউ না কেউ কুর’আনের কিছু অংশ পড়ে অন্যদের সাথে শেয়ার করত, লাঞ্চও শেয়ার হত বিধায় সাধারণত এইসময় উপস্থিত থাকত শিক্ষক, অ্যাডমিন, লাইব্রেরিয়ান এবং পিয়ন সবাই। একবার আমি একটি অংশ পড়ে কুর’আন রেখে দিলাম, কাউকে কিছু বললাম না। সবাই উৎসুক হয়ে বলল, ‘আপা, কি পড়লেন বললেন না তো!’ অগত্যা জানালাম, ‘আল্লাহ বলেছেন দুনিয়াতে আমাদের যে স্বামী বা স্ত্রী থাকবে আখিরাতেও তার সাথে থাকা যাবে’। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল ফিরিস্তি। একজন পিয়ন এসে বলল, ‘ম্যাডাম, আমার স্বামী আমার সমস্ত টাকাপয়সা নিয়ে ফেলে। গতবার রাগ করে বেতনের টাকা আমার মা’র কাছে রেখে দিয়েছিলাম। জানতে পেরে সে আমাকে চুল ধরে যে ছুঁড়ে মারল, কোথায় পড়লাম কতক্ষণ বেহুঁশ ছিলাম বলতে পারবনা। মরার পরেও যদি তার থেকে মুক্তি না পাই…’ ওর কথার মাঝখানেই আরেকজন শুরু করল, ‘আপা, আমার স্বামী আমাকে তিনবাচ্চাসহ ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়, সে বেঁচে আছে না মরে গেছে বিয়ে করেছে না কি আমি কিছুই জানিনা, আমি কি আবার ওর পাল্লায় পড়ি…’ বহুকষ্টে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে এই ধরণের স্বামীগুলোকে আগে তো বেহেস্তে যাবার উপযুক্ততা অর্জন করতে হবে, তারপর না ওদের সাথে থাকার প্রশ্ন! তখন সবাই খুশী!!
বছরে দু’বার আমরা দলবেঁধে বাজারে যেতাম IIUCর নবাগত ছাত্রীদের জন্য উপহার কিনতে। শ’দুইশ উপহার কিনতে কিনতে ফাঁকে ফাঁকে হয়ে যেত আমাদের নিজেদের কেনাকাটাও, অবশ্যই আলাদা রশিদে। তাছাড়া ছিল কারো কোন অনুষ্ঠানে, কারো বাচ্চা হলে উপহার কেনা অথবা ব্যাক্তিগত কেনাকাটা। একসাথে থাকতে থাকতে আমরা সবাই সবার রুচিপছন্দ ভালোভাবে বুঝতাম। তাই যখনই কারো কিছু কিনতে হত সবাই দঙ্গল বেঁধে বাজারে যেতাম যাতে একেকজন একেক আইটেম দেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সবার বাজার সেরে ফেলা যায়। সবাই সবার পরিচিত দোকানে নিয়ে যেতাম বান্ধবীদের যাতে অল্প দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়। আর দোকানদারদের ভাবুন তো, সেদিনই ঈদ!
এভাবে জমে আছে আরো অনেক স্মৃতি। দু’টো সময়ের কথা খুব মনে পড়ে। যখন আমার দ্বিতীয় সন্তান হবে, IIUC ফিমেল ক্যাম্পাসের দারোয়ান থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই যে আমার জন্য কিছু না কিছু করেনি। পিয়ন শাহীন ওর মায়ের হাতের পিঠা নিয়ে এসেছিল। আমি চট্টগ্রামের মেয়ে, বিয়ে হয়েছে বরিশালে তাই পিয়ন নাজমুন আমাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্টাইলে শুটকী রান্না করে খাওয়ালো। অ্যাডমিন ফারহানা আর ফাহমিদা প্রতিদিন মজার মজার তরকারী করে এক্সট্রা ভাত নিয়ে আসত যাতে আমি তাদের সাথে খেতে পারি। ফারহানার আম্মা বরই আচার বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন আমার জন্য, কতদিন যে ভাত খেয়েছি এই আচার দিয়ে! ফাহমিদা শুধু আমাকে খাওয়ায় বলে নালিশ আসায় বেচারী একদিন ক্যাম্পাসের সবার জন্য রান্না করে নিয়ে এসে এক হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিল! এই সময়টা আমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ছিল বলে প্রায়ই সালমা আপার সামনেই পা তুলে বসে থাকতাম কিন্তু উনি কখনো মাইন্ড করেননি। বরং আমি অ্যাডমিশন টেস্টের খাতা কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বেচারী আমার ভাগের খাতাও কিছু কেটে দিতেন। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত কাজ করেছে সুমাইয়া আপা। জোর পূর্বক বাস থেকে, ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে হলেও রিহামের জন্ম পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন উনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েছেন, আবার চিন্তা করব দেখে রাদিয়াকে স্কুল থেকে তুলে সাথে নিয়ে নিয়েছেন। ডাক্তারের কাছে আনানেয়া করেছেন যেন আমি একা না যাই। প্রায়ই বাইরে কিছু না কিছু খেতে নিয়ে যেতেন, আমরা দু’জনেই বাইরে বড় হওয়ায় আমাদের খাবারের রুচিপছদ একরকম যা অ্ন্যরা হয়ত মুখেও দেয়ার উপযুক্ত মনে করবে না। আমার যত প্রয়োজনীয় কেনাকাটা উনি সাথে নিয়ে করে বাসায় পৌঁছে দিতেন- মাসের পর মাস! এই ঋণ কি দিয়ে শোধ করা সম্ভব?!
যখন ক্যানাডায় চলে আসা সাব্যাস্ত হয় তখন ফিমেল ক্যাম্পাস থেকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয় চারবার! প্রতিবার ভাবি এবার হয়ত ওরা আর আমার চেহারা দেখতে চায়না, আবার হুসনা আপার টেলিফোন, ‘আপা, চলে আসেন!’ সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল যেবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফেয়ারওয়েল দেয়া হয়। আটবছরে আমি যাদের পড়িয়েছি, অনার্স থেকে মাস্টার্স, ইংরেজী থেকে এমবিএ সকল ব্যাচের যাকে যেভাবে খবর দেয়া গেছে সবাই এসেছে। প্রত্যেক ছাত্রীর সাথে আমার কত স্মৃতি! এদের কারো সাথে স্টাডি ট্যুরে গেছি সিলেট বা অন্যত্র; কাউকে ফুলটাইম বা কাউকে কেবল এক সেমেস্টার পড়িয়েছি, এমন ছাত্রীও এসেছিল যাকে কখনো পড়াইনি; কাউকে হয়ত কখনো বকা দিয়েছি, কাউকে পরামর্শ দিয়েছি, কাউকে সাহায্য করেছি কাউকে দিয়েছি সান্তনা; কারো কাছে শিখেছি অনেক কিছু আর কাউকে হয়ত দিতে পারিনি কিছুই। অনেকের কাছেই RBA নামটা ছিল ভয় পাবার মত, শিক্ষকরা অক্ষরগুলোকে উলটে RAB বলে ভয় দেখাতেন ছাত্রীদের। কিন্তু আমি চলে যাব বলে সেই ছাত্রীদের কারো কান্না আর কারো প্রচন্ড রাগ দেখে মনে হোল কিছ হয়ত করতে পেরেছি। অনেকেই উপহার দিয়েছে অনেক কিছু। সবই আমার প্রিয়। কিন্তু দু’টো উপহার মনে গেঁথে গেছে। একটি সেমেস্টারের ছাত্রীরা একটা অটোগ্রাফবুক উপহার দিয়েছিল ওদের সবার মনের কথা লিখে। প্রতিটি পাতায় যেন ভালোবাসা উপচে পড়ছে। আরেক ছাত্রী হঠাৎ ওর ওড়না থেকে broochটা খুলে আমার ওড়নায় পিন করে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, ‘ওটা ওখানেই ভালো মানাচ্ছে’!
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সালমা আপা। ছাত্রী শিক্ষক এবং অ্যাডমিন সহকর্মীদের বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে বলতে থাকেন আমাদের একসাথে আটবছর কাটানোর নানান রংবেরং-এর কাহিনী। চোখবুলিয়ে দেখি শিক্ষকদের মাঝেও আমার অনেক ছাত্রী যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেছে। ওদের ভালোবাসাস্নিগ্ধ মুখচ্ছবি দেখে মনে হোল এক জীবনে এতগুলো উদার মানুষের সাক্ষাত পাওয়া, ভালোবাসা পাওয়া কয়জনের ভাগ্যে জোটে?
No comments:
Post a Comment