Sunday, December 9, 2012

প্রতিটি ফোঁড়েই জীবন

আমরা যারা চন্দ্রপৃষ্ঠে মানব অবতরণের যুগে জন্মেছি তাদের প্রায় সবারই ছোটবেলায় শখ ছিল নভোচারী হবার। তাই টিভিতে এই বিষয়ে কোন অনুষ্ঠান, কোন বইয়ে মহাকাশযাত্রা বিষয়ে কোন তথ্য, বড়দের আলোচনায় এই নিয়ে কোন কৌতুহল- কিছুই আমাদের অনুসন্ধিৎসার বাইরে ছিলোনা। এমনই এক অনুষ্ঠানে একবার দেখান হোল মহাকাশযাত্রার পেছনে কত মানুষের কি কি অবদান থাকে, অনেকটা সিনেমার হিরো-হিরোইন-ভিলেনের বাইরেও যে কত লোক একটি সিনেমার প্রোডাকশনের সাথে জড়িত থাকে তেমন প্রোগ্রাম। এর একপর্যায়ে দেখানো হোল কিভাবে নভোচারীদের পোশাক তৈরী হয়। বয়স্কা এবং অভিজ্ঞ একদল মহিলা একত্রে বসে একেকটি পোশাক হাতে সেলাই করে তৈরি করেন, তারপর এর একেকটি ফোঁড় পরীক্ষা করে দেখেন ফোঁড়টি মজবুত হল কিনা। সাক্ষাতকারে তাঁদের একজন জানালেন, ‘আপনারা তো জানেন মহাকাশে কোন স্থানে অসম্ভব শীতল আবার কোন স্থানে কল্পনাতীত গরম, কোথাও এই তারতম্য ঘটে অকল্পনীয় দ্রুততার সাথে। মানবশরীর এর সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম নয়। তাই নিরাপদ অবস্থান থেকে বেরোতে গেলেই নভোযাত্রীদের এই বিশেষ পোশাকের ওপর নির্ভর করতে হয়। এখানে একটি ফোঁড়ও এদিক সেদিক হলে তাপ বা শৈত্যের কারণে বিরাট বিপদ ঘটে যেতে পারে। আমাদের একেকটি ফোঁড়ের শুদ্ধতার ওপরেই নির্ভর করে আমাদের ছেলেদের জীবন মরণ। তাই আমরা প্রতিটি ফোঁড় সাবধানে দেই এবং কাজ শেষ হলে আবার প্রতিটি সেলাই আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখি এতে কোথাও কোন ফাঁক রয়ে গেলে কিনা’।

এই অনুষ্ঠানটি দেখার পর পোশাক সম্পর্কে আমার ধারণা পালটে গেল। এতদিন আমার ধারণা ছিল পোশাক আমাদের গ্রীষ্মের দাবদাহ, শীতের তীব্রতা, বর্ষার বৃষ্টি, মানুষের দৃষ্টি এবং রোগজীবানু হতে রক্ষা করে। সুন্দর পরিচ্ছদ আমাদের শরীরের ত্রুটিবিচ্যূতি ঢেকে আমাদের সাধারনত্বকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। আর সবচেয়ে বড় কথা আরামদায়ক পোশাক আমাদের শরীর মনে এনে দেয় প্রশান্তি ও পরিপূর্ণতা। কিন্তু পোশাকের ওপর মানুষের জীবন মৃত্যু পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে এমনটা ফায়ারম্যানের পোশাক, ইঞ্জিনিয়ারদের হেলমেট অথবা শেফদের অ্যাপ্রন দেখেও কখনো মাথায় আসেনি। এই ঘটনাটি পরবর্তীতে আমাকে বৈবাহিক সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য বুঝতেও সাহায্য করেছে। কারণ এই বিশেষ সম্পর্কটির স্বরূপ সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ’ (সূরা বাক্কারাঃ আয়াত ১৮৭)।

এটা খুবই আশ্চর্যজনক একটি ব্যাপার যে বৈবাহিক বন্ধন রক্তের বন্ধনের মত সহজাত বা অটুট নয়, বন্ধুত্বের সম্পর্কের মত সহজ নয়, সহকর্মীদের সাথে সম্পর্কের মত আনুষ্ঠানিক নয়; অথচ এই সম্পর্কে রয়েছে দুর্গের মত মজবু্ত একটি পরিবার গঠনের দায়িত্ব, এই দায়িত্ব পারস্পরিক পরামর্শক্রমে পালনার্থে দু’জনের মাঝে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা, আবার জীবনের পথ চলায় সহকর্মীর মত পারস্পরিক সম্মান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সহজ পথ খুঁজে নেবার ডাক। মানবশরীরের সাথে পোশাকের যে সম্পর্ক, এই দুই ব্যাক্তির মাঝে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলার পরামর্শটি তিনি দিয়েছেন, যিনি এই সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিকে প্রসারিত ও বিস্তৃত করতে চেয়েছেন। তাঁর এই কথার তাৎপর্য যতই চিন্তা করা যায় ততই এই তুলনার যথার্থতা নতুন নতুন ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত করে দেয়!




জন্মের সময় একটি শিশু পোশাক ব্যাতিরেকেই দুনিয়ায় এসে পৌঁছয় বটে কিন্তু যতই তার বয়স বাড়তে থাকে, পোশাক তার জীবনের একটি অবচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। একইভাবে আমাদের জীবনের একটি অংশে অনুপস্থিত ব্যাক্তিটিকে ছাড়া এতগুলো বছর কাটানো গেলেও, বিয়ের আগে ‘বিয়ে করবনা’ বলে কান্নাকাটি করে বুক ভাসিয়ে দিলেও, বিয়ের পর পর দু’জনের দাকুমড়ো সম্পর্ক হলেও- একপর্যায়ে দু’জনের সম্পর্ক হয়ে যায় রক্তের সম্পর্কের চেয়েও আপন, যদিও সে অবস্থাতেও এই সম্পর্ক কেবল তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেই ভেঙ্গে দেয়া যায়, পোশাক খুলে ফেলার মতই সহজ ব্যাপার! কিন্তু তারপরও যে এই নাজুক সম্পর্কটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে টিকে যায় তা ততটাই আশ্চর্য যতটা এই ব্যাপারটি যে প্রতিবার হাঁচি দেয়ার সময় আমাদের কোমল নার্ভগুলো ছিঁড়ে আমাদের মৃত্যু ঘটতে পারে, তবু আমরা প্রতিদিন এতগুলো হাঁচি দিয়েও এত বছর বেঁচে থাকি! এরই শুকরিয়া আদায় করে থাকি আমরা প্রতিটি হাঁচির পর 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে।

এই সম্পর্কটির ভিত্তিপ্রস্তরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে পরিবার নামক কাঠামোটি। এই পরিবারের প্রধান দুই ব্যাক্তির সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এর সদস্যদের ভাল থাকা, মন্দ থাকা, গড়ে ওঠা বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। আমরা যেমন শীতকালে গায়ে চাদর জড়ালে ছোট শিশুদের চাদরে পেঁচিয়ে নিয়ে ওম দেয়ার চেষ্টা করি ঠিক একইভাবে এই সংসারের চাদরের ওমে বেড়ে ওঠে এর সন্তান এবং আশ্রিতজনেরা। এর জন্য আমরা এমন ব্যাক্তিকেই সঙ্গি হিসেবে বেছে নিতে সচেষ্ট হই যে এই সম্পর্কটিতে নিয়ে আসবে পরিপক্কতা এবং মানিয়ে চলার ক্ষমতা। কারণ রেশমের মনোহর রঙ আর মোলায়েম জমিন আমাদের দৃষ্টিকে সম্মোহিত করে, কিন্তু আরামের জন্য আমরা সবসময় সুতিই বেছে নেই। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দুই ব্যাক্তি পরস্পরকে দৈনন্দিন জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে উত্তরণের সাহস ও শক্তি জোগান দেয়, একে অপরকে মানসিক যন্ত্রণা ও শারীরিক বেদনা হতে আড়াল করে রাখে। রাসূল (সা) বলেছেন উত্তম স্ত্রী সে যাকে দেখলে ব্যাক্তি তার সমস্ত সমস্যার কথা ভুলে যায়, শান্তি পায়। তাইত আমরা দু''আ করি আমাদের পরিবারবর্গ যেন আমাদের জন্য ‘চক্ষুশীতলকারী’ হয়। বাইরের পৃথিবীর কর্কশ বাস্তবতা থেকে আত্মরক্ষার জন্য একটি প্রশান্ত মরুদ্যান রচনা করাই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মূল উদ্দেশ্য, ঠিক যেভাবে বৈরী আবহাওয়া থেকে আত্মরক্ষা এবং শরীরের আরাম নিশ্চিত করা পোশাক পরিধানের মূল উদ্দেশ্য।

কোন পোশাক যখন আমরা প্রথম পরতে শুরু করি তখন পোশাকটি সচরাচর আরামদায়ক থাকেনা, পরতে পরতে একসময় আরামপ্রদ হয়ে যায়, ঠিক বন্ধুত্বের মত। বৈবাহিক ক্ষেত্রেও বন্ধুত্ব হতে একটু সময় লাগে, সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি পরিবেশ থেকে দু’জন মানুষের তেলে জলে মিশ খেতে সময় লাগে বৈকি! কিন্তু দু’জনে শলাপরামর্শ করে কাজ করলে সম্পর্কটি উভয়ের জন্যই সহজতর এবং কল্যানময় হয়। উত্তম পোশাক সেটিই যা ব্যাক্তির শারীরিক ত্রুটিসমূহ আড়াল করে তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, মন প্রফুল্ল রাখে। ব্যাক্তিমাত্রেরই নানাবিধ ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু একটি সুন্দর সম্পর্কের ভিত্তিমূল হোল উভয় সঙ্গী পরস্পরের আত্মসম্মানের ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং মানুষের কাছে পরস্পরের নামে দোষারোপ করার পরিবর্তে নিজেদের মাঝে সমঝোতা করার প্রতি আগ্রহী হবেন। উভয় সহযোগী একত্রে বসে ঠিক করে নেবেন কোন ত্রুটিগুলো ক্ষমার যোগ্য আর কোনগুলো থেকে উত্তরণের প্রয়োজন আছে এবং এর জন্য কি কর্মসূচী গ্রহণ করা যায়। এভাবে পারস্পরিক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ই পর্যায়ক্রমে নিজের নিজের ত্রুটিবিচ্যুতি হতে উত্তরণ করতে পারেন। ফলে উভয়ই অপেক্ষাকৃত উন্নত মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পান।

আমাদের প্রিয় পোশাকটির যখন জৌলুস হারিয়ে ফেলে তখনও আমরা তাকে সযত্নে আলমারীতে তুলে রাখি, ফেলে দেবার কথা কল্পনাই করতে পারিনা; সুন্দর পোশাকের কোন ক্ষতি হলে তাকে রিফু করে পরি তবু কাউকে দিয়ে দেয়ার কথা ভাবিনা। আমরা যার সাথে বিবাহিত, হয়ত তার সাথে স্বভাবগত ব্যাবধান এবং সার্বক্ষণিক দেখাসাক্ষাতের ফলে সাথীটির দোষত্রুটি বেশী দৃষ্টিগোচর হয়। এর অর্থ এই নয় যে অন্যত্র বিয়ে করলে কোন সমস্যাই থাকতনা; সেখানে হয়ত এই একই সমস্যাগুচ্ছ থাকতনা, কিন্তু অন্য সমস্যাবলী অবশ্যই আবিষ্কার হত যেহেতু কোন ব্যাক্তিই ত্রুটিমুক্ত নয়। একটি সুন্দর পোশাকের যত্নের পেছনে যেভাবে আমরা সময় এবং শ্রম ব্যায় করি, তেমনি শুধু বৈবাহিক সম্পর্ক নয়- যেকোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু পরিমাণ মানিয়ে নেয়া, কিছু পরিমাণ সময় এবং কিছু পরিমাণ শ্রম ব্যায় করার মানসিক প্রস্তুতি বাঞ্ছনীয়, দরকার কিছু পরিচর্যা। প্রিয় পোশাকটি যেমন আমরা সহজেই আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলার কথা ভাবিনা, তেমনি এই সম্পর্কটিকেও সহজেই ছিন্ন করার কথা ভাবা উচিত নয়।

কাপড় বেশি টানাহেঁচড়া করলে ছিঁড়ে যায়। একইভাবে স্বামীস্ত্রী পরস্পরের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা হেয় করলে, অথবা তর্কবিতর্কের সময় বাড়াবাড়ি করলে তিক্ততার সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে একটি সম্ভাবনাময় সম্পর্কের ইতি ঘটাতে পারে। কর্মক্ষেত্রে মতবিরোধ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ব্যাপার এবং অনেকসময় এই বিরোধ বহুদিনব্যাপি চলতে থাকে। কিন্তু এর কারণে আমরা চাকরীও ছেড়ে দেইনা, ঐ সহকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধাও হারিয়ে ফেলিনা- কর্মজীবি মাত্রেই জানেন এটা যেকোন বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মাত্র। একইভাবে আমরা কাপড়ে ময়লা লাগলে কিছুক্ষণ মন খারাপ করি, তারপর উঠে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেই। যখন দু’জনের ঝগড়া হয় তখন মনোমালিন্য হয় বটে কিন্তু সেই মূহূর্তেও তারা মনে মনে একে অপরকে ভালই তো বাসে! তাহলে সামান্য কথায় জেতা বা পরস্পরকে মোক্ষম আঘাতের সুযোগ গ্রহন করার জন্য কাদা ছোঁড়াছুড়ির চেয়ে বরং ধৈর্য্যধারন এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ বজায় রাখাটা অধিকতর কল্যাণকর। তলোয়ারের আঘাতের চিহ্ন একসময় মুছে যায়, কিন্তু জিহ্বার আঘাতের ক্ষত বড় সাঙ্ঘাতিক- এটি কখনো পূরণ হয়না- ঠিক যেমন কাপড় ছিঁড়ে গেলে রিফু করা যায়, দাগ লেগে গেলে ধুয়ে নেয়া যায় কিন্তু পুড়ে গেলে আর তেমন কিছু করার মত অবশিষ্ট থাকেনা। ভালবাসা ছাড়াও একটি সংসার চমৎকারভাবে উৎরে যেতে পারে, কিন্তু পারস্পরিক সম্মানবোধ ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকতে পারেনা। সুতরাং, স্বামীস্ত্রী আর যা কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করুক না কেন, পরস্পরের আত্মসম্মানবোধের প্রতি আঘাত করা থেকে বিরত থাকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে প্রথম উদাহরণটিতে ফিরে যাই। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারসমূহকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর যার জ্বালানী হবে মানুষ এবং পাথর’ (সুরা আত তাহরীমঃ আয়াত ৬)। এক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িত দু’জন ব্যাক্তি পার্থিব স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে পরস্পরকে এমন একটি কুসুমাস্তীর্ণ পথের সন্ধান দিতে চায়, এমন এক পথে পরস্পরের হাত ধরে এগোতে চায় যা এই আগুন হতে অনেক অনেক দূরে, নিরাপদ কোন বন্দরে গিয়ে শেষ হবে। এভাবে সংসারের প্রতিটি সমস্যায় বিশ্বাস এবং ভালবাসার ফোঁড় দিয়ে দু’জনে একে অপরের জীবন রক্ষার জন্য, একে অপরের কল্যাণচিন্তায় লড়ে যায়। এভাবে যে দু’টি মানুষ এতগুলো বছর একে অপরকে দেখেনি, চেনেনি, জানেনি, ভাবেনি তারাই হয়ে যায় একে অপরের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্খী!

আল্লাহ স্বামীস্ত্রীর বন্ধনকে তুলে ধরেছেন মাত্র সাতটি শব্দে, যা বিশ্লেষণ করতে গেলে মনে হয় যদি সাত সমুদ্র কালি হত...! নিজের যোগ্যতার অভাবে কপালে হাত দিয়ে বসে ভাবি আমিও সেসব শিল্পীদের মতই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে অক্ষম যারা এত প্রেমের গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা, চিত্রকর্মে, অভিনয় দিয়েও এই সাতটি শব্দে যে রোমান্টিসিজম বর্ণনা করা হয়েছে তাকে ছুঁতে পারেনা!

No comments:

Post a Comment