শিশুদের সাথে কথা বলতে আমার খুব মজা লাগে। কিংবা শুধু বসে বসে তাদের কথা শুনতে। ছোট্ট ছোট্ট মানুষগুলো যে আসলে কতকিছু জানে, কতকিছু ভাবে চিন্তা করতেই আশ্চর্য লাগে! কত কঠিন কঠিন ফিলসফি তারা কত সহজেই না বুঝিয়ে দেয় তাদের কথাবার্তায়! আমার আশেপাশের ছোট্ট মানুষগুলোর কথাবার্তা চিন্তা চেতনা নিয়ে এবারের উপস্থাপনা:
১। দুই কাজিন বসে বসে খেলনাপাতি দিয়ে খেলছে। ছেলেটির বয়স চার, মেয়েটির বয়স তিন। মেয়েটির নিপুন হাতে গড়া কৃত্রিম সংসার দেখে মুগ্ধ ছেলেটি তাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমাকে বিয়ে কব্বে?”
খেলায় ব্যাস্ত মেয়েটি খেলতে খেলতে আনমনেই বলল, “হ্যাঁ, কব্ব। তুমি তাহলে আমাকে শাড়ী দেবে, চুড়ি দেবে, সবকিছু দেবে...”
ছেলেটি আঁতকে উঠে বলল, “ওলে বাবালে! আমি এত কিছু দিতে পারবনা! আমি তোমাকে বিয়ে করতে পাব্বনা!”
২। শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের বোঝাচ্ছেন, “তোমাদের পড়াশোনা করতে হবে, কারণ তোমাদের অনেক বড় হতে হবে, অনেক বড় বড় কাজ করতে হবে...”
পাঁচ ছ’বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীগুলো সমস্বরে বলে উঠল, “না, আমরা বড় হতে চাইনা! বড় হলে অনেক কাজ করতে হয়। রান্না করতে হয়, ঘর পরিস্কার করতে হয়, চাকরী করতে হয়, গাড়ি চালাতে হয়, বিল দিতে হয়...! আমরা এত কষ্ট করতে পারবনা। সুতরাং, আমাদের বড় হওয়ার দরকার নেই!”
৩। তিন বছর বয়সী ছেলেটি মায়ের কোলে গিয়ে বসতেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। অন্ধকারে ভয় পেয়ে ছেলেটি মাকে জাপ্টে ধরে বলল, “আম্মু, তুমি ভয় পেওনা, আমি আতি তো!”
৪। পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটি একটি পয়সা কুড়িয়ে পেয়ে মাকে গিয়ে বলল, “আমি এটা দিয়ে তোমার জন্য কিছু কিনে দিতে চাই”।
মা মজা পেয়ে বলল, “তুমি আমাকে কি কিনে দিতে চাও?”
ছেলেটি ক্যানাডায় থাকে। কিছুদিন হোল স্কুলে যেতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর মাস যতই এগিয়ে আসছে, স্কুলে ক্রিসমাস সম্পর্কে আলোচনা ততই বাড়ছে।
শিশুটি কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছল, “আমি তোমার জন্য একটা ক্রিসমাস ট্রি কিনব”।
মা বলল, “আমরা তো ক্রিসমাস করিনা বাবা!”
“কেন?”
“কারণ আমরা আল্লাহর কথা শুনি, আল্লাহ আমাদের ক্রিসমাস করার পারমিশন দেননি”।
“আল্লাহ আমাদের কি করার পারমিশন দিয়েছেন?”
“আল্লাহ আমাদের ঈদ করার পারমিশন দিয়েছেন”।
“ঠিক আছে। তাহলে আমি ঈদের সময় তোমাকে একটা ক্রিসমাস ট্রি কিনে দেব!”
৫। সাত বছর বয়সী মেয়েটি মাত্র নামাজ পড়তে শুরু করেছে। এই নিয়ে তার খুব অহংকার। জুহর নামাজ পড়ে এসে মাকে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখে ধমক দিয়ে বলল, “অ্যাই দুষ্ট মেয়ে! তুমি এখনো নামাজ পড়নি! ছি ছি, আমি তো নামাজ পড়ে ফেলেছি!”
৫। পাঁচ বছর বয়সী ছাত্র তার শিক্ষককে বোঝাচ্ছে, “কাল আমার বড় বোন আর আমি মারামারি করেছি। সে আমার মনে, কিডনীতে, হৃদয়ে- আমার মগজের ভেতর সবকিছুতে আঘাত করেছে!”
এর পরেও কি বলার অবকাশ আছে যে শিশুরা কিছু বোঝেনা? বরং আমার অনেকসময় মনে হয় জীবনে কোন জিনিস কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে শিশুদের ধারণা অনেকক্ষেত্রে বড়দের চেয়েও পরিস্কার!
No comments:
Post a Comment