বর্তমান বিশ্ব্বের মুসলিম সমাজকে দু’টো মোটা দাগে বিভক্ত করলে দেখা যায় একটি ভাগ এমন যে তারা দাবী করেন তাদের মনে বিশ্বাস আছে; কিন্তু তাদের কথাবার্তা, আচার আচরণ, পোষাক আশাক থেকে কাজে কর্ম কোন কিছুতেই এর কোন প্রতিফলন দেখা যায়না। আরেকদিকে একদল আল্লাহর বান্দা কিছু set of rules নিয়ে এত ব্যাস্ত যে মাঝখানে পড়ে ইসলামের মূল স্পিরিটটাই হারিয়ে যায়। মধ্যখানে চাপের মধ্যে আছে সেসব মুসলিম যারা ইসলামকে intellectually, spiritually এবং একটি জীবনাদর্শ হিসেবে ধারণ করতে চায়। এরা প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয়প্রকার দ্বারা উপেক্ষিত এবং নিপীড়িত। প্রথম প্রকার মুসলিম মনে করে এরা backward এবং uncultured, সুতরাং এদের সাথে যাচ্ছেতাই করা যায়- তারা প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয় যেহেতু তারা মুসলিম এবং ইসলাম শান্তির ধর্ম, তাদের সবকিছু চুপচাপ মেনে নেয়া উচিত, এতেই শান্তি নিহিত। দ্বিতীয়প্রকার মুসলিম superiority complexএর রোগী; এরা নিজেদের এত উচ্চমানের আলিম এবং আমেল মনে করেন যে ইসলামের সমতা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণী তারা নিজেদের জন্য প্রযোজ্য মনে করেননা।
দ্বিতীয়প্রকারের মুসলিমদের রোগের পথ্যটা সহজতর যেহেতু ফিতনার রোগজীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মত ঈমানের শ্বেতকণিকা তাঁদের শরীরে আগে থেকেই বিদ্যমান, হিদায়াহ নামক ভিটামিনের স্পর্শ পেলেই এগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠবে। তাই আগে ওটাই আলাপ করি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দ্বীন সহজ, যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে বেশী কড়াকড়ি করে, তাকে দ্বীন অবশ্যই পরাজিত করে দেয়। কাজেই তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং কাছাকাছি হও। আর হাসিমুখ নিয়ে থাক। আর সকাল-বিকাল ও রাতের কিছু অংশ (ইবাদাতের মাধ্যমে) সাহায্য প্রার্থনা কর’ [বুখারী: ৩৯]। ইসলামের নিয়মাবলীর মূল উদ্দেশ্য ঈমানের সৌন্দর্যকে জাগিয়ে তোলা, এবং এর মাধ্যমে সমাজে একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা এবং অসুন্দরকে প্রতিহত করা। এটি একটি means বটে, তবে অভিষ্ট লক্ষ্য নয়।
আমাদের এই দ্বীনি ভাইবোনদের সমস্যা হোল তাঁরা সবকিছু সাদা কালোতে বিভাজন করে ফেলার চেষ্টা করেন, প্রতিটি অণু পরমাণু হিসেব করেন। অথচ পৃথিবীর অধিকাংশ ব্যাপারগুলোই এই দুই সীমারেখার মধ্যখানে ধূসর অংশে পড়ে, আর penny হিসেব করতে গেলে pound চলে যায়। তাইত আল্লাহ আমাদের পথ চলার জন্য জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক এবং চিন্তাশীলতার মত অসাধারন কিছু পাথেয় দিয়েছেন যেন আমরা ধূসর এলাকাগুলো এই আলোয় navigate করতে পারি, যেন তিল পরিমাণ কাজ করে তাল পরিমাণ ফলাফল অর্জন করার উপায় অনুসন্ধান করে অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার ব্যাবস্থা নিতে পারি। এই পাথেয়গুলো শিকেয় তুলে রেখে অপরের দ্বারা নির্দিষ্ট কিছু set of rules অনুসরণ করে জীবনটা কাটিয়ে দেয়া গেলে কিঞ্চিত আরাম হয় বটে, কিন্তু ঝুঁকিটাও কিছু কম নয়- তাছাড়া এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর পরীক্ষাক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহপ্রদত্ত সকল instruments and weapons ব্যাবহার করে অসাধারন একটি ফলাফল করার উদ্দেশ্যটা সফল হয়না। সুতরাং, আমরা কেবল আমি কি নিয়মাবলী পালন করলাম এবং আরেকজন কোথায় একটু কম পড়ে গেল, এই জাতীয় বিবেচনা মাথায় না রেখে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যটিকে দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারি। এতে ঐক্য, পারস্পরিক সম্মানবোধ, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এ’তো গেল দ্বিতীয়প্রকার মুসলিমের কথা। প্রথমপ্রকারের রোগ আরো ভয়াবহ। কারণ তারা জানেই না যে তাদের দেহে ঈমানের শ্বেতকণিকার অভাব। তাই তারা নিজের ইচ্ছামাফিক নানাবিধ কাজ করে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যে যেহেতু তাদের বিশ্বাস আছে, আল্লাহ তাদের মাফ করে দেবেন, বেহেস্ত কেবল তাদের জন্যই বানানো হয়েছে। যেসব backward এবং uncultured মুসলিম এদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে (ওদের দৃষ্টিতে backward এবং uncultured হবার জন্য সময়মত নামায পড়া এবং মাথায় কোনপ্রকার আচ্ছাদন ব্যাবহার করাই যথেষ্ট), তাদের ব্যাপারে এদের ধারণা এদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যাবহার করা যায়। আর ওরা প্রতিবাদ করতে গেলেই ওদের বিজ্ঞজনের মত বুঝিয়ে দেয়, ‘তুমি মুসলিম, তাই সমস্ত অন্যায় অবিচার তোমার নীরবে মেনে নেয়া উচিত’। এদের মত লোকদেরই হয়ত আল্লাহ প্রশ্ন করেছেন, ‘তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা জাননা?’
তারা শুধু খাব্বাব, খুবাইব, বিলাল, আম্মার আর সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমের দৃষ্টান্ত দেখেন- অথচ এই মহান সাহাবীরা সবাই দাস ছিলেন। তাঁরা খুশী হয়ে নয় বরং নিরুপায় হয়ে অত্যাচার সহ্য করেছেন, আল্লাহর কাছে নিজেদের অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং যখন উপায় আসে তখন তাঁরা এক মূহূর্তের জন্য বসে থাকেননি। খুবাইব (রাঃ) কে যখন জনসমক্ষে একটি একটি করে অঙ্গচ্ছেদ করে হত্যা করা হয় তখন তিনি উপস্থিত খুনী ও নিষ্ক্রিয় দর্শককে লানত দিয়ে যান, ‘হে আল্লাহ, তাদের সংখ্যা তুমি গুণে রাখ, তাদের তুমি এক এক করে হত্যা কর এবং কাউকে তুমি ছেড়ে দিওনা’। খাব্বাব (রাঃ) ওহুদের ময়দানে তাঁর প্রাক্তন অত্যাচারী সিবাকে হামজা (রাঃ) হত্যা করার সময় এই দৃশ্য শুকরিয়ার সাথে উপভোগ করেন।
আর যারা স্বাধীন ছিলেন? মুসয়াব (রাঃ)- যার মা তাকে প্রাচুর্যের মাঝে লালনপালন করেন এবং ইসলাম পালনে বাঁধা দেয়ার জন্য বন্দী করেন- তিনি পালিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর মা তাকে আবার বন্দী করতে চাইলে মাকে বলেন, ‘যদি তুমি এমনটি কর, এবং যারা তোমার এ কাজে সাহায্য করবে, তোমাদের সবাইকে আমি হত্যা করব’। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ)- বদরের ময়দানে যখন তাঁর বাবা বার বার তাঁর সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল এবং তিনি বার বার এড়িয়ে যাবার পরেও তাঁর সম্মুখীন হতে থাকল, তখন তিনি তরবারীর এক আঘাতে তার মাথা এবং ধড় বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন, তাঁর বাবা ছিলেন কাফির। এর জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে সমর্থন এবং প্রশংসা করেছেন এবং বেহেস্তের সুসংবাদ শুনিয়েছেন, ‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে’ (সুরা মুজাদিলাঃ আয়াত ২২)। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) স্বয়ং তাঁর আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। এমন আরো শত শত উদাহরণ রয়েছে।
আল্লাহ বলেছেন, ‘অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই তা দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (সূরা শুরাঃ ৪৩)। এর মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন এই দু’টি মহিমান্বিত বৈশিষ্ট্য অর্জন করা মু’মিনের জন্য কতখানি কঠিন কাজ এবং তিনি তা কতখানি appreciate করেন। কিন্তু তাই বলে তিনি মু’মিনকে জুলুম সহ্য করার কথা কোথাও বলেননি বরং জানিয়েছেন যেখানেই জুলুম হবে সেখানেই প্রতিবাদ করা মু’মিনের নৈতিক দায়িত্ব- সে হোক নিজের প্রতি বা অপরের প্রতি। আমরা যে ভদ্রতার খাতিরে সামনে কিছু না বলে পেছনে গীবত করার hypocrisy করি, তা আমাদের সাবেক প্রভু ব্রিটিশদের দান, যা ব্রিটিশ চলে যাবার একশ বছর পরেও আমরা সযত্নে লালন করে চলেছি। কিন্তু মু’মিন প্রতিবাদ করে সামনাসামনি। রাসূল (সাঃ) এর মীরাস নিয়ে ভুল বোঝাবোঝির কারণে ফাতিমা (রাঃ) আমৃত্যু আবু বকর (রাঃ)র সাথে কথা বলেননি, কিন্তু সামনে ভাল ব্যাবহার করে পেছনে বদনামও করেননি। জগতের শ্রেষ্ঠ চার নারী- মারিয়াম, আসিয়া, খাদিজা এবং ফাতিমা (রাঃ), বেহেস্তের নারীদের নেত্রী, শাশুড়ির সেবা করেছেন কিন্তু শাশুড়ির সাথে একদিনও এক ঘরে থাকেননি; অথচ আমাদের দেশের বৌদের একই ঘরে থেকে অত্যাচারিত না হলে বা অত্যাচার না করলে, বুকে পাথর চাপা দিয়ে মুখে গীবতের খই না ফোটালে বেহেস্ত প্রাপ্তি হয়না।
সেদিন কথাপ্রসঙ্গে হাফিজ সাহেবকে বলছিলাম- তিনি জানেন, ঠিক ডিগ্রীধারী ঈজিপ্টোলজিস্ট না হলেও ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ এবং এ’বিষয়ে বিস্তর ঘাঁটাঘাটির ফলে আমি প্রাচীন মিশরের ওপর মোটামুটি একজন বিশেষজ্ঞ বলা যায়- আল্লাহ বলেছেন, ‘ফেরাউন সে ছিল সীমালংঘনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়’ (সুরা দুখানঃ আয়াত ৩১)। কি বিশাল একখানা সার্টিফিকেট! একসময় কুর’আন এবং প্রাচীন মিশরের তথ্যগুলোর তুলনামূলক আলোচনা করলে আশ্চর্য লাগত কেন সে আল্লাহকে সত্য জেনেও তাঁর সমস্ত নিয়ামতের জন্য একখানা লম্বা ‘থ্যাংক ইউ’ না দিয়ে নিজেকে ‘গড’ প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। সেদিন জবাবটা হঠাৎ মাথায় খেলে গেল, নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে ‘সাবাশ’ বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল। আমাদের আশেপাশেই সাধারন চাপরাশি কেরানী থেকে শুরু করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা পয়াসাওয়ালা লোকরা- কোনক্রমে একখানা টেবিল চেয়ার, একটা পজিশন, একটু ক্ষমতা বা খানিক টাকাপয়সা হলেই ব্যাস- ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকে; তাদের গর্বে অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা তাই চলাফেরা করে লোকের ঘাড়ের ওপর দিয়ে। আর ফেরাউন কে ছিল? সে ছিল আজকের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নয়, বংশানুক্রমিক রাজা- সে ছিল এককভাবে তৎকালীন সুপারপাওয়ারের কেন্দ্রবিন্দু, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের দন্ডমুন্ডের কর্তা, তার রাজ্য ছিল ভৌগলিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত, তার সম্পদের অন্ত ছিলনা, নামধারী সব পন্ডিত তার অঙ্গুলিহেলনে নাচত, সে একদিকে বিশাল সব প্রাসাদ আর অন্যদিকে বিরাট সব মন্দির আর মূর্তি বানিয়ে ক্ষমতার বঃহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে- আর এর মধ্যে কিনা তার পালিতপুত্র এসে বলে তিনি নবুয়প্রাপ্ত হয়েছেন! তাও কিনা তিনি বনী ইসরাইলের লোক, যাদের সে শত শত বছর ধরে বংশানুক্রমে দাস বানিয়ে রেখেছে! আমাদের পুঁচকে পুঁচকে অহংকারেই আমরা বাঁচিনা, আর তার এত্তবড় অহংকারে এমন আঘাত কি সহ্য করার মত কথা? কার মাথা ঠিক থাকে এই অবস্থায়? তাই একদিক থেকে বেচারার জন্য করুনাই হোল। আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই ঘোরাফেরা করে যারা ফেরাউনের মত সুযোগ এবং ক্ষমতা পেলে তাকে শিশুতুল্য প্রমাণ করে ছেড়ে দিতে পারত।
অপরপ্রান্তে রয়েছেন সুলাইমান (আঃ), রাসূল (সাঃ) এর পর আমার আর হাফিজ সাহেবের সবচেয়ে প্রিয় নবী। কি দেননি আল্লাহ তাঁকে? রাজত্ব, ক্ষমতা, বুদ্ধি, মেধা, নবুয়ত, বিচক্ষনতা, ন্যায়বিচার, এমন জাতির ওপর আধিপত্য যা এর আগে বা পরে আর কারো ছিলোনা এবং হবেও না, পশুপাখিদের ভাষা বোঝার ক্ষমতা এবং তাদের ওপর আধিপত্য, সে যুগেই আল্লাহ তাকে ঘোড়ার পরিবর্তে উড়ন্ত সিংহাসন উপহার দিয়েছিলেন, আর দিয়েছিলেন সুদৃশ্য নগরী যার মাঝে শোভা বর্ধন করত জ্বিনদের তৈরী প্রথম এবং শেষ স্থাপত্য। কিন্তু ঈমান মানুষকে উপচে পড়া কৃতজ্ঞতায় ফলভারে নুয়ে পড়া গাছের মত বিনীত করে দেয়। তাই তিনি অহংকার তো দূরে থাক, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি এত মনযোগী ছিলেন যে আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর দুআ কুর’আনে দুইবার উল্লেখ করেছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম’ (সুরা আহক্কাফঃ আয়াত ১৫)।
সুতরাং সবাই ফেরাউন হয়না। কিন্তু যারা হয় তাদের সামনে মাথা নোয়াবারও কোন অর্থ হয়না, কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে। আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম। আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে’ (সুরা নাহলঃ আয়াত ১২৫-১২৮)। এখানে তিনটা ধাপ আছে, প্রথমত তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে, দ্বিতীয়ত প্রতিশোধ নেয়া এবং সবর করা উভয়ের মাঝে পছন্দ করে নেয়ার অপশন আছে, তৃতীয়ত আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সান্তনা দিচ্ছেন তাঁর সাহচর্যের মাধ্যমে। অতঃপর আল্লাহ শিখিয়ে দিচ্ছেন, ‘আপনি বলুনঃ তবে অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম (আল্লাহর ফয়সালার)’ (সুরা ইউনুসঃ আয়াত ১০২) এবং ‘বস্তুতঃ আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট’ (সুরা ইউনুসঃ আয়াত ২৯)।
সুতরাং, আমার যেসব ভাইবোনরা চারপাশের জালিম লোকজনের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়গুলো আমার কাছে মেলে ধরে তাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার উপায় জানতে চায় তাদের বলি, পৃথিবীটা পরীক্ষাক্ষেত্র এবং এই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হতে চাই সম্মান আর কৃতিত্বের সাথে, হামাগুড়ি দিয়ে নয়। সুতরাং, আমরা জুলুম করবনা কিন্তু জুলুম সহ্যও করবনা; অন্যায়ের প্রতিবাদ করব এবং অতঃপর ফয়সালা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেব; নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের এই প্রচেষ্টার উত্তম প্রতিদান দেবেন, কেননা তিনি নিজেই বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে’ (সুরা ইনশিরাহঃ আয়াত ৫) - আমরা কি সেই স্বস্তির আশায় এই সাময়িক কষ্টকে তুচ্ছ ভেবে নিতে পারিনা?
No comments:
Post a Comment