Sunday, December 9, 2012

দুর্ঘটনা

রায়হানের এতক্ষণ মনটা খারাপ ছিল, এখন মেজাজটাও খারাপ হচ্ছে। যতক্ষণ প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাচ্ছিল না বাবা চিন্তিত হয়ে ছুটোছুটি করছিলেন, মা বিমর্ষ হয়ে বসে চুপচাপ দু’আ পড়ছিলেন। একটু আগে ডাক্তার এসে বলে গেল পা ভাঙ্গলেও ওর শরীরের আর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। ব্যাস, আশ্বস্ত হবার সাথে সাথে বাবার বকাবকি শুরু, ‘চোখ কি হাতে নিয়ে হাঁটিস? এতটুকু রাস্তা হেঁটে যেতে গিয়ে এতবড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটালি। দয়াময় আল্লাহ রক্ষা করেছেন, নইলে যে কি হত!’ মমতাময়ী মায়ের মায়ার দরিয়া বিলকুল শুকিয়ে গেল, বিশেষ বিশেষ বিশেষণ সহকারে তিনি তাঁর অপদার্থ সন্তানকে নসিহত করতে শুরু করলেন, ‘এত্তবড় ঢ্যাঙ্গা ছেলে, দেখে পথ চলতে পারিস না বাছাধন? সোনার চান পিতলা ঘুঘু আমার, আসার সময় দেখি কি সুন্দর জিনিসগুলো আমার রাস্তার ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই না হলে রাজপুত্র!’
একটু পর বড়চাচী হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকে হাঁসফাঁস করতে করতেই বলতে শুরু করলেন, ‘দেখ তো রাবিয়া, রাতে না তোমাকে বললাম নাফিসাকে দেখতে তোমার বড়ভাই যাবে, আমি যাবনা? সকালে উঠে তোমার ভাই বলে, ‘মেয়েটা মনে কষ্ট পাবে, চল দু’জনেই যাই, তাড়াতাড়ি চলে আসব’। মুনিয়াও বলল, ‘অসুবিধা হবে না মা, আমি তো পড়ার টেবিলেই থাকব, কোন সমস্যা হলে আমি ছোটচাচীর বাসায় চলে যাব’। সকালে আর তোমাকে ফোন দিয়ে উঠতে পারিনি বোন। একটু আগে ফিরলাম, ঘরেও ঢুকিনি বোন, ছেলেটার কথা শুনে আর মন মানলোনা, সাথে সাথে এখানে চলে এলাম। ছোট তো বলল আল্লাহর রহমতে বেশি ক্ষতি হয়নি। কি রে বাবা, চাচী একবেলা মেয়েটাকে দেখতে গেলাম আর হিংসায় এই কান্ড ঘটিয়ে রেখেছিস? রাস্তাটাও পার হতে শিখলি না বাবা!’
মুনিয়া মিচকিটা তখন থেকেই চেপে চেপে হাসছে আর বন্ধুরা যখন সব শুনবে তখন সবাই মিলে ওকে নিয়ে কি পরিমাণ হাসাহাসি করবে তা সে কল্পনার দৃষ্টিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। আল্লাহর দুনিয়া থেকে কি দয়ামায়া উঠে গেল? রায়হানের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল প্রিয় বন্ধুর ওপর, ‘হায় বন্ধু! তুমি এ কি করলে! শেষপর্যন্ত ঠেলাগাড়ী অ্যাক্সিডেন্ট!’

সকালে দিব্যি পড়ার টেবিলে বসে পড়ার ভান করে করে খোয়াব দেখছিল আর গপাগপ গরম গরম পিঠা খাচ্ছিল। একটা শেষ করেই ছোটবোনটাকে হুকুম করছিল, ‘খুশি, যা তো, আরেকটা নিয়ে আয়’।
প্রতিবারই খুশির অর্ধেক আর ওর অর্ধেক। হঠাৎ ওর স্বপ্ন দেখায় ছেদ পড়ল। মা রান্নাঘর থেকে ডাক দিলেন, ‘রায়হান, বাবা যা তো এই পিঠা কয়টা তোর বড় চাচীকে দিয়ে আয়। ভাবী পাটিসাপটা খুব পছন্দ করেন। আর মুনিয়াটার জন্য কয়টা ভাপা পিঠা দিয়ে দিয়েছি, পথে যেতে যেতে খেয়ে ফেলিস না যেন’।
মা’র কথা শুনে খুশি খিলখিল করে হেসে ফেলল। বড়চাচার বাসা গলি থেকে বের হয়ে বড় রাস্তাটা পেরোলেই, ভাইয়া বুঝি এর ভেতর সব ভাপা পিঠা সাবাড় করে দেবে! দুই বাসায় প্রতিদিনই আসাযাওয়া খাওয়াদাওয়া কথাবার্তা চালু থাকে। তাই এটা কোন বিশেষ ব্যাপার না। রায়হান লুঙ্গি পরেই রওয়ানা দিল।
ওর বড়বোন হাসি আর চাচীর বড়মেয়ে নাফিসা প্রায় সমবয়সী। হাসি হবার পর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বড় চাচী যে হাসিকে শুধু দেখাশোনা করেছেন তাই নয়, নিজের সন্তানের মতই তাকে দুধ খাইয়েছেন। মা শুধু হাসির ব্যাপারেই নয়, তাঁর সব সন্তানের ব্যাপারেই চাচীকে মায়ের মত সম্মান দেন, চাচীর দিক থেকেও ভালবাসার কমতি হয়না। মনে মনে রায়হানের ইচ্ছা লেখাপড়া শেষ হলে মাকে সাহস করে বলেই ফেলবে মুনিয়ার প্রতি ওর সুপ্ত আকর্ষনের কথাটা। তারপর অবশ্য কি ঘটতে পারে তা বড়চাচী ছাড়া আর কেউ জানেনা।
আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে রায়হান পাহাড়ের মত উঁচু করে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়িপাতিল নিয়ে অগ্রসরমান ঠেলাগাড়িটা দেখেইনি, ঠেলাওয়ালাও হাড়িপাতিলের পাহাড়ের পেছন থেকে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছিলনা। সামনের দোকানেই ডেলিভারী, দোকানের সামনে ঠেলা দাঁড় করিয়ে ঠেলাওয়ালা দোকানদারকে ডাকল, দোকানদার দড়ি কেটে মাল নামাতে গিয়ে আবার ভাবল গাড়ীটা সামান্য আরেকটু সামনে নিলে দোকানের মুখটা বন্ধ হয়না। ঠেলাওয়ালা দোকনদারের কথামত ঠেলাটাকে একটু সামনে নেয়ার চেষ্টা করতেই চাকা একটা মাঝারী আকারের পাথরের সাথে বেঁধে গিয়ে ঝুপঝুপ করে হাড়িপাতিল পড়তে শুরু করল। রায়হান তখন পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। আচমকা মাথার ওপর হাড়িপাতিলের বৃষ্টিতে দিশাহারা হয়ে সে রাস্তার পাশের পরিবর্তে রাস্তার মাঝে দৌড় দিল। ওদিক থেকে আসছিল আরেক ঠেলাগাড়ী, ঠেলাভর্তি আলুর বস্তা। লুঙ্গি পরে দৌড়ে অনভ্যস্ত রায়হান লুঙ্গিতে পা পেঁচিয়ে সেই আলুভর্তি ঠেলাগাড়ীর সামনে পড়ে গেল, ঠেলাওয়ালা সামাল দিয়ে ওঠার আগেই একটা চাকা এসে পড়ল ওর ডান পায়ের ওপর। অমনি মড়াৎ করে হাড় ভাঙ্গার শব্দ, প্রচন্ড ব্যাথার অনুভূতি, কোথায় গেল টিফিন ক্যরিয়ার আর কোথায় গেল খোয়াব। স্থানীয় লোকজন দ্রুত ওদের বাসার নীচে স্টেশনারীর দোকান থেকে ওর বাবাকে ডেকে নিয়ে এলো, কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে ওকে ট্যাক্সিতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে এলো, কিছুক্ষন পর মা এসে হুলস্থুল কান্না, খুশিটার চেহারাও থমথমে, বাবা পাগলের মত ছুটোছুটি করছেন আর রায়হানের ব্যাথায় দুনিয়াদারী বিস্বাদ লাগছে। এখন বিকাল, ডাক্তার বলেছেন ঐ হাড্ডি ভাঙ্গা আর কিছু কিছু জায়গায় ছড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন বিশেষ ক্ষতি হয়নি। প্লাস্টার করে দিলে কয়েক মাসের ভেতরেই সে আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে। আর তারপর শুরু হোল এই অধ্যায়।

সন্ধ্যায় প্লাস্টার করা শেষ হবার পর ডাক্তার সবাইকে চলে যেতে বললেন, রোগীর বিশ্রাম প্রয়োজন। শুধু বড়চাচা রয়ে গেলেন, খুব খুশি যে এই উসিলায় কিছুক্ষণ চাচীর খবরদারী ছাড়া একটু শান্তিমত বসে পেপার পড়বেন। সারাদিনের ধকল আর বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যাওয়ার স্বস্তি থেকে রায়হানের চোখ লেগে এলো।

আরে! ও তো এখনো পড়ার টেবিলে! কিন্তু কেমন যেন মনে হচ্ছে ও ওর শরীরের ভেতর নেই, সব অনুভূতিগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে, কিন্তু নিজেকে যেন সে দেখছে শরীরের বাইরে থেকে। ঐ তো খুশি আর ও মিলে পিঠা খাচ্ছে। হুকুম করা মাত্র ছুটে গিয়ে পিঠা নিয়ে আসছে খুশি, ছোট্ট বোনটার জন্য ওর মায়া উথলে উঠছে, কিন্তু চেহারায় কিছু বোঝা যাচ্ছেনা, শুধু চোখ দু’টো মায়াময় হয়ে উঠছে। ঐ যে রান্নাঘর থেকে মা ডাক দিলেন, ‘রায়হান, বাবা যা তো এই পিঠা কয়টা তোর বড় চাচীকে দিয়ে আয়। ভাবী পাটিসাপটা খুব পছন্দ করেন। আর মুনিয়াটার জন্য কয়টা ভাপা পিঠা দিয়ে দিয়েছি, পথে যেতে যেতে খেয়ে ফেলিস না যেন’। খুশিটা খিল খিল করে হাসছে। ওর মনে একটু শিহরণ দোলা দিয়ে যায়, মুনিয়াকে একনজর দেখে আসা যাবে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছে রায়হান আর ভাবছে লেখাপড়া শেষ হলে মাকে সাহস করে বলেই ফেলবে মুনিয়ার প্রতি ওর সুপ্ত আকর্ষনের কথাটা। তারপর অবশ্য কি ঘটতে পারে তা বড়চাচী ছাড়া আর কেউ জানেনা। পাশে একটা ঠেলাগাড়ির ওপর পাহাড়ের মত উঁচু করে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়িপাতিল রাখা, দড়ি কাটা অবস্থায় ঠেলাওয়ালা গাড়ীটাকে সরানোর চেষ্টা করছে, পাগল নাকি! রায়হান সাবধানে সরে গেল আর একটু পর টপাটপ হাঁড়িগুলো পড়তে শুরু করল বৃষ্টির মত। যাব্বাবা, বিশাল বাঁচা বেঁচে গেল!
একটু এগোতেই মোড়ের চায়ের দোকান থেকে কানে ভেসে এলো হিন্দি গানের আওয়াজ, কি বিশ্রী কথাগুলো! শুনতে এত খারাপ লাগে অথচ শরীরে শিহরণ ধরিয়ে দেয়, ওরা যদি জানত এই গানের অর্থ কি তাহলে কি এভাবে বাজাত পারত? বড় রাস্তার ওপাড়ে বিশাল বিলবোর্ডে একটা মেয়ের অর্ধনগ্ন ছবি, কি অশ্লীল বিজ্ঞাপন রে বাবা, কিন্তু চোখ ফেরানো যায়না, ওর শরীরে কাঁপন ধরে। রাস্তা পেরোতেই কয়েকটা উঠতি বয়সের মেয়ে দেখতে পেল, একটারও ওড়না নেই, রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে তরল হাস্যলহরীতে চারিদিক মুখরিত করছে, আশেপাশে লোকজন চকিতে ফিরে চাইছে, মোড়ে কয়েকটা ছেলে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কোন খবর নেই। ভাল ছেলে হলেও রায়হানের মনে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় এই মধুর আওয়াজে। সামনেই বড়চাচার বিল্ডিং। যাক, অতটুকু পৌঁছতে পারলে বড়চাচীর চেহারাটা দেখে সব শয়তান উড়ে যাবে মন থেকে।
অনেকক্ষণ ধরে বেল বাজাচ্ছে রায়হান কিন্তু কেউ খুলছেনা, গেল কই সব? ফিরে যাবে ভেবে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছে এমন সময় আস্তে করে দরজাটা একটু ফাঁক হোল, মুনিয়ার গলা, ‘ও, ভাইয়া তুমি? আসলে বাসায় কেউ নেই তো, তাই দরজা খুলছিলাম না, মা’র কাছে এসেছিলে? মা তো আপুকে দেখতে কুমিল্লা গেছে’।
রায়হানের মাথায় শুধু এটুকুই ঢুকল, ‘বাসায় কেউ নেই’। হিন্দি গানটা জোরে জোরে মাথার ভেতর বাজতে শুরু করল। সে বলল, ‘দরজা খোল, মা পিঠা দিয়েছে, দিয়ে যাই’।
মুনিয়া ইতস্তত করছিল, কিন্তু রায়হানের কানের ভেতর কে যেন ফিসফিস করছে, ‘এটাই সুযোগ, এখনই সুযোগ’। ওর হৃৎপিন্ডের গতিবেগ অস্বাভাবিক বেড়ে চলেছে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সে। সে বলল, ‘দরজা খোল, মা তোর জন্য ভাপা পিঠা দিয়েছে’।
মুনিয়া দরজাটা খুলতেই ওড়নায় আবৃত ওর উজ্জ্বল চেহারাটা দেখা গেল, হাত বাড়িয়ে দিল সে টিফিন ক্যারিয়ারের জন্য। রায়হানের মাথায় বিলবোর্ডের ছবিটা ভেসে উঠল। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। তারপর আর সে জানেনা সে কি করছে। মুনিয়ার চিৎকার, কান্না, গোঙানো, ফোঁপানো সব হারিয়ে গেল রাস্তার মেয়েগুলোর হাস্যলহরীর পেছনে। যখন সে সম্বিত ফিরে পেলো তখন সে পুরোপুরি পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে, মুনিয়ার চোখে একরাশ ঘৃণা। উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়ে পালাল রায়হান ওখান থেকে। সে তো এমন নয়, সে তো মুনিয়াকে ভালবাসে, সে তো এমন করার কথা নয়, বাবামা কি বলবেন, চাচাচাচী কি বলবেন, খুশিকে সে কিভাবে মুখ দেখাবে, আর হাসি আপার রাগী চেহারাটা মনে করে ওর অন্তরাত্মা উড়ে গেল। পাগলের মত দৌড়াচ্ছে সে, জানেনা কোনদিকে। হঠাৎ একটা ট্রাক ওকে চাপা দিল। শরীরের বাইরের রায়হান এগিয়ে গিয়ে দেখল শরীরী রায়হান পড়ে আছে বড় রাস্তার ওপর, ওকে দেখতে মনে হচ্ছে যেন ভাঙ্গা মাটির হাঁড়ি, চেহারাটা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে চারিদিকে আর যে মগজটা একটু আগে পর্যন্ত ওকে পরিচালিত করছিল সেটা লেপ্টে আছে পথের ওপর।

‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ শব্দে জেগে উঠল রায়হান, সমস্ত শরীর ঘামে চুপচুপে ভেজা, হাঁপাচ্ছে সে। রুমে শুধু বড়চাচী। ওকে জেগে উঠতে দেখে তিনি চেয়ার থেকে উঠে এসে ঘাম মুছিয়ে, জামা বদলে ওজু করিয়ে দিলেন। ইশারায় নামাজ সেরে রায়হান ভাবতে লাগল সে কি দেখল।

‘কি রে, অমন ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছিস কেন?’
হাসি আপার গলা না? একটু আগে সে আবার দেখতে পাচ্ছিল সে পড়ে আছে বড় রাস্তার ওপর, ওর চেহারাটা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে চারিদিকে আর মগজটা লেপ্টে আছে পথের ওপর। কিন্তু হাসি আপার চেহারাটা এই দৃশ্যের চেয়েও ভয়ংকর। আপু কখন এলো? চোখ খুলে দেখল জানালা দিয়ে আসা আলো জানান দিচ্ছে সকাল ন’টা দশটা তো হবেই। দুলাভাইকে দেখে সে বুঝতে পারল আপু নিশ্চয়ই সারারাত জার্নি করে এসেছে। আসলে যতই বকা দিক না কেন, আপু আসলে ওকে অনেক ভালবাসে।
‘কংগ্র্যাচুলেশন্স শ্যালক মহাজন!’, হাস্যোদ্দীপ্ত চেহারা দুলাভাইয়ের।
হেসে ফেলল রায়হান, ‘কেন, ঠেলাগাড়ীর নীচে পড়ে পা ভাঙ্গার জন্য?’
‘তা পা ভেঙ্গে যদি আসল উদ্দেশ্য হাসিল হয় তাতে পা ভাঙ্গার কষ্ট উসুল হয়ে যায় না?’
‘মানে?’
‘মানে তুমি মাস্টার্স পাশ করলেই তোমার শাদী মুবারাক!’
‘যাও তো, তুমি বেশি বেশি আহ্লাদ দাও ওকে’, বাঁধা দিলেন হাসি আপা, ‘শোন, আব্বাসকে ফোন করে বল আম্মাকে এতদূর থেকে টেনেহেঁচড়ে আনার দরকার নেই। বেচারী বুড়োমানুষ, কষ্ট হবে। একবারে বিয়ের সময়ই নিয়ে আসব ইনশাল্লাহ’।
‘যো হুকুম ম্যাডাম, শ্যালক মহাজন, শেখো কিভাবে বৌয়ের হুকুম তামিল করতে হয়, তোমার আর বেশি দেরী নাই’।
হাসি আপা চোখ রাঙ্গাতেই দুলাভাই রুমের বাইরে পগাড় পার।
‘শোন, আমি সকালে সবার সাথে কথা বলেছি। বড় আব্বা বড় আম্মা রাজী, বাবামা খুশি, মুনিয়ারও আপত্তি নেই। নাফিসা আর আমি এত দূরে থাকি যে আমরা সবাই চাই একটা বোন অন্তত আমাদের বাবামাদের দেখাশোনার জন্য কাছাকাছি থাকুক। তুই যে রাজী সেটা বলার দরকার নেই, ওর কথা শুনলেই তোর চেহারা ১০০ ওয়াটের বাল্বের মত জ্বলে। এখন জনাব, কষ্ট করে মাস্টার্সটা পাস কর। নে, তোর বই খাতা নিয়ে এসেছি। পা ঝোলানো তো কি হয়েছে? পা দিয়ে তো আর পড়বিনা। নে, বই হাতে নে!’

বড় আপা চলে গেলেন শাশুড়ির সাথে কথা বলতে। অবশেষে সব পরিষ্কার মনে হোল রায়হানের কাছে। যদি ওর ঠেলাগাড়ীর নীচে পড়ে ঐ অপমানজনক অ্যাক্সিডেন্টটা না হত তাহলে ট্রাকের নীচে অ্যাকসিডেন্ট হত। যদি ঐ দুর্ঘটনা না হত তাহলে আজ তার মুনিয়ার সাথে বিয়ের কথা না হয়ে কি হতে পারত তা ভাবতেই সে শিউরে ওঠে। বন্ধুর ওপর সব রাগ পানি হয়ে যায়। আপনিই নুয়ে আসে মাথাটা কৃতজ্ঞতায়। বালিশে পাশ ফিরে ইশারায় সিজদা করে রায়হান, ‘হে আমার রব্ব, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত কল্যাণময়। আমি তোমার সকল সিদ্ধান্ত পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং আনুগত্যের সাথে মেনে নিচ্ছি’।

No comments:

Post a Comment